Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

সিনেপ্লেক্সগুলির একক আধিপত্য; অসঙ্গতি নিয়ে মুখ খুলছেন না প্রযোজকরা!

আকাশ নিবির

আকাশ নিবির

জানুয়ারি ২৯, ২০২৩, ০২:৪৮ পিএম


সিনেপ্লেক্সগুলির একক আধিপত্য; অসঙ্গতি নিয়ে মুখ খুলছেন না প্রযোজকরা!

বাংলাদেশে শাহরুখ দীপিকা অভিনীত পাঠান চলচ্চিত্রটি সাফটা চুক্তির আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশেও আলোচিত এই সিনেমাটি মুক্তি পেতে পারে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের একটি প্রযোজনা সংস্থা ইতোমধ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। যার সাথে জড়িত আছেন সিনেপ্লেক্সগুলি। একটি বিশ্বস্ত সূত্রে এমনটি শোনা গেছে। এ নিয়ে দেশীয় চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ঠদের মধ্যে বেশ গুঞ্জন উঠতে দেখা গেছে। পক্ষে—বিপক্ষে মতামত দিচ্ছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। তবে বিপক্ষেই বেশি লেখালেকি করছেন চলিচ্চিত্রের বেশিরভাগ মানুষ। জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত পরিচালক রিয়াজুল রিজু সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘পাঠান চলচ্চিত্র রিলিজ হলে সিনেমা হলগুলো চাঙ্গা হবে কি? সিঙ্গেল স্ক্রিনে সাউন্ড আর পিকচারের যে কোয়ালিটি আর এদিকে সিনেপ্লেক্সে যদি চলে তাহলে সারাদেশের সিনেমা হলের লাভ কি?’

বিদেশি ছবি নিয়ে ক্ষিপ্ত হতে দেখা গেছে অভিনেতা সিদ্দিককে, তিনি বলেছেন, ‘বলিউড সিনেমার আমদানি প্রসঙ্গে সিদ্দিক বলেন, আমি সবসময় বিদেশি সিনেমার বিপক্ষে। কারণ, আমার দেশের সিনেমারই অবস্থা ভালো নয়। বিদেশি সিনেমা দেশে আনার মতো যোগ্যতা এখনো আমাদের হয়নি। একটা সুস্থ মানুষের সঙ্গে কখনোই একটি অসুস্থ মানুষ দৌড়ে পারবে না। তেমনই আমাদের সিনেমা পুরোপুরি সুস্থ নয়। বিদেশি সিনেমার সঙ্গে দেশের সিনেমা কখনোই প্রতিযোগিতায় টিকে নাই।’

স্টার সিনেপ্লেক্সের নানান অসঙ্গিতে এই অভিনেতা বলেন, ‘যারা ইন্ট্রোরিয়র করা বাসাতে থাকেন তারাই বেশির ভাগ সিনেপ্লেক্সের মালিক। মায়ের হাতের মাটির চুলাতে রান্না করার মতো গ্রামের হলগুলির মর্ম বুঝবে না। বরং সকল সিনেপ্লেক্সগুলিকে সরকারি নজরদারিতে রাখার জন্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সিনেমার স্পীড শক্তিশালী নয়। আগে নিজেদের জায়গা পোক্ত করতে হবে তারপর অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে হবে। বিদেশি সিনেমা আসলে লাভের চেয়ে আমাদের ক্ষতিই বেশি হবে। এমনিতেই দর্শক প্রেক্ষাগৃহে দেশি সিনেমা দেখতে যায় না। বিদেশি সিনেমা আসলে আরও বেশি দেশি সিনেমা থেকে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নেবে।’

এই অভিনেতা আরও বলেন, ‘তাছাড়া বিদেশি সিনেমা চালানোর মতো আমাদের সেরকম মানসম্মত সিঙ্গেল স্ক্রীণ নেই। সিনেপ্লেক্সে বিদেশি সিনেমা চালালে প্রেক্ষাগৃহ মালিকদের লাভ নেই। তাতে সিনেপ্লেক্স লাভবান হবে। বাংলা সিনেমা মুমুর্ষু অবস্থায় আছে। যারা বিদেশি সিনেমা আনার জন্য ভাবছেন তারা না বুঝেই এসব করছেন। আশা করি, আপনারা সুস্থ মাথায় বিষয়টি চিন্তা করবেন। একজন শিল্পী হিসেবে বিদেশি সিনেমা আমদানির পক্ষে আমি নই।’

এর আগে হলিউডের নতুন অ্যাভেঞ্জার সিরিজের বিদেশি ছবি থেকে ১০০ কোটির বেশি আয় করার শোনা গেছে! তবে অনেকের ভাষ্যে, বিদেশি চলচ্চিত্র চালিয়ে একক রাজত্ব করতে দেখা গেছে সিনেপ্লেক্সগুলিকে। যেখানে অভিযোগ উঠেছিলো দেশের বানিজ্যিকধারার চলচ্চিত্রগুলিকে বেশি প্রধান্য না দিয়ে বিদেশি চলচ্চিত্র এবং মূলধারার চলচ্চিত্রে প্রধান্য দিতে। সেখানেও রয়েছে আপত্তি। মূলধারার চলচ্চিত্রে যে পরিমান টিকেট সেল থেকে প্রযোজক যে পরিমান লগ্নি ফেরত পাবার কথা থাকে তাতেও রয়েছে আপত্তি।

গেল বছর সিনেপ্লেক্সে ‘পরাণ’ ছবি চলাকালিন টিকেট আর পপকন থেকে সিনেপ্লেক্সে যে পরিমান আয় করেছিলো। তাতে আসল টাকা তুলতে ‘পরাণ’ এর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের বেশ হিমশিম খেতে হয়। তবুও কেন দেশীয় চলচ্চিত্রের জন্য সিনেপ্লেক্সের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছেন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানদের?

এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রযোজক জানান, গত বছর ‘পরাণ’, ‘শান’ ও ‘হাওয়া’ ছবিগুলিতে প্রায় ১৫ কোটি টাকার মতো ব্যবসা হয়েছে। ‘পরাণ’ একাই ব্যবসা করেছে ৫ কোটি টাকার বেশি। সেখানে সিনেমা দেখার সময় যে পরিমান পপকন বিক্রি করেছে সিনেপ্লেক্স তাতে ১০ কোটি টাকা এক সিনেমা থেকেই কামিয়েছেন সিনেপ্লেক্সগুলি। তাতে দেশের চলচ্চিত্রের কি লাভ হল? ‘পরাণ’ ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান লাইভ টেকনোলজিস পেয়েছেন প্রায় ৮০ লক্ষ টাকার মতো!

এটা নিয়ে ‘পরাণ’ পরিবেশক কোম্পানী ‘অভি কথাচিত্র’ সাথে সেই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের মামলার করার কথা উঠে। পরবর্তী সিনেমার যদি সিনেপ্লেক্সগুলি না নেন, না চালায় সেক্ষেত্রে তাদের চুপ থাকার কথা শোনা যায়। তাতে করে কি লাভটা হলো হিট সিনেমার খ্যাতি পাওয়া দেশের এই চলচ্চিত্রে? তাহলে কি সিনেপ্লেক্সগুলির লক্ষ্যই শুধু বিদেশি সিনেমা চালিয়ে টাকা ইনকাম করার?
অন্যদিকে সিনেপ্লেক্সগুলিতে সাফটা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে শাহরুখ খানের নতুন ছবি ‘পাঠান’ চালাতে শাকিব খানের পুরনো ছবি ‘পাঙ্কু জামাই’ পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিলেন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান! তাতে করে দেশের চলচ্চিত্র হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা ছিলো বলে বাংলাদেশের হল মালিকদের পপ থেকে একটি স্বারকলিপি পাঠানোর প্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে ‘পাঠান’ মুক্তি অনিশ্চিত হয়ে দাঁড়ায়।

তবে সংশ্লিস্টদের মতে মন্ত্রণালয় থেকে আপাতত ছবিটি দেশে মুক্তির সিদ্ধান্ত হয়নি। মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশে ‘পাঠান’ মুক্তির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের আমদানি—রপ্তানিসংক্রান্ত কমিটির মিটিংয়ে ছবিটি মুক্তির কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি বলেও জানা গেছে।

এ বিষয়ে হল মালিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, ‘বাংলাদেশে ‘পাঠান’ ছবিটি মুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের আমদানি—রপ্তানিসংক্রান্ত কমিটির পরিচালক সমিতি ও হল মালিকরা বসেছিলাম। বৈঠক আনার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেছি  আমরা। বিপরীতে  না আনার পক্ষেও যুক্তি দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। যেহেতু এটা আমদানি—রপ্তানির বিষয় তাই বাণিজ্য মন্ত্রলায়েরও বিষয় আছে। ফলে আমাদের বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’

‘পাঠান’ ছবির মাধ্যমে প্রায় পাঁচ বছর পর পর্দায়ি ফিরছেন শাহরুখ। জানা যায়, এরই মধ্যে বাংলাদেশের একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে ভারতের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ইকো এন্টারটেইনমেন্টের পক্ষে শাকিব খানের ‘পাঙ্কু জামাই’ নিবার কথা ছিল।

Link copied!