Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪,

যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দিন

১৭ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস

মো. মাসুম বিল্লাহ

নভেম্বর ২৬, ২০২৩, ০১:৫৩ পিএম


১৭ জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস

কাতারের মধ্যস্থতায় ফিলিস্তিনির গাজা উপত্যকায় চারদিনের যুদ্ধবিরতি শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, দ্বিতীয় দিনে ১৩ ইসরায়েলি ও চারজন বিদেশিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বিনিময়ে ইসরায়েল ৩৯ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে। যদিও হামাস দাবি করেছে, সাত বিদেশিকে মুক্তি দিয়েছে তারা।

স্থানীয় সময় শনিবার গভীর রাতে রেড ক্রসের মাধ্যমে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানায়, শনিবার স্থানীয় সময় গভীর রাতে মোট ১৭ জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দিদের মধ্যে ১৩ জন ইসরায়েলি আর চারজন থাই নাগরিক। তাদেরকে গাজা থেকে রেড ক্রসের মাধ্যমে মিশরের মধ্যবর্তী রাফাহ সীমান্ত দিয়ে নিয়ে আসা হয়।

এদিকে হামাস বলেছে, ১৩ ইসরায়েলি এবং সাত বিদেশি নাগরিককে রেড ক্রসের কাছে হস্তান্তর করেছে। যদিও কাতার ও আইডিএফ বলছে, চার থাই নাগরিককে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বিনিময়ে ৩৯ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার কথা রয়েছে ইসরায়েলের।

এর আগে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে বার্তা সংস্থা সিএনএন জানায়, জিম্মিদের নিতে শনিবার রাতে মিশরীয় অ্যাম্বুলেন্স ও রেড ক্রসের বাসের একটি বহর গাজার দিকে অগ্রসর হতে দেখা যায়। বহরটি রাফাহ সীমান্তের মিশরীয় দিক থেকে গাজার দিকে যাচ্ছে।

ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি আল-জাজিরাকে বলেন, ইসরায়েলি সরকার এ চুক্তি মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে এতে অনেক দল ও কারণ জড়িত হওয়ায় জটিলতা তৈরি হয়েছে।

এদিকে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে, এমন অভিযোগে আজ শনিবার এক ঘণ্টা বিলম্বের পর আবারও জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া শুরু হয়। কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় উত্তরে সাহায্য সরবরাহ নিয়ে বিরোধ মিটে যাওয়ার পর শনিবার রাতে (স্থানীয় সময়) জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া শুরু করে হামাস।

হামাসের সামরিক কাসেম ব্রিগেডস শনিবার জানিয়েছে, গাজার উত্তর অংশে ত্রাণ সরবরাহ এবং ইসরায়েলি কারাগার থেকে যেসব ফিলিস্তিনিকে ছেড়ে দেওয়া হবে, তাদের নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে ইসরায়েল চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে। এ কারণে জিম্মি ব্যক্তিদের মুক্তি দিতেও বিলম্ব করছে তারা।

তবে হামাসের অভিযোগ অস্বীকার করে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়, চুক্তির শর্ত তারা লঙ্ঘন করেনি। একই সঙ্গে এই যুদ্ধবিরতি শেষে হামাসকে নির্মূল করার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল।

চুক্তির শর্তে রয়েছে, প্রতি একজন জিম্মির পরিবর্তে তিন বন্দীকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। হামাস জানায়, চার দিনের যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় দিনে ৩৯ ফিলিস্তিনিদের বিনিময়ে ১৩ ইসরায়েলি ও সাত বিদেশিকে মুক্তি দেবে।

যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, শনিবার ১৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার কথা হামাসের। বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ৩৯ থেকে ৪২ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়ার কথা।

এর আগে গতকাল শুক্রবার ইসরায়েলের ১৩ জিম্মি এবং থাইল্যান্ডের ১২ শ্রমিককে মুক্তি দেয় হামাস। বিনিময়ে ৩৯ জন ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুকে মুক্তি দেয় ইসরায়েল।

গাজা উপত্যকায় ৬ হাজার ১৫০ শিশুসহ এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৮০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন।

গত ৭ অক্টোবর ভোরে ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। হামাসের এই হামলার জবাবে ওই দিনই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। ১৬ অক্টোবর থেকে সেই অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও। ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে গত দেড় মাসে উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ১৫ হাজার ৫৩২ জনে। এই নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুদের সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি।

১৪ অক্টোবর প্রথম বার জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর সংস্থা নিরাপত্তা পরিষদে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করে রাশিয়া। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের আপত্তির কারণে তা বাতিল হয়ে যায়।

তার দুই দিন পর ১৬ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় মানবিক বিরতির আহ্বানের প্রস্তাব উত্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র; কিন্তু রাশিয়া ও চীনের আপত্তির কারণে সেটিও বাতিল হয়ে যায়।

তবে নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন প্রস্তাব বাতিল হলেও গাজায় যুদ্ধবিরতি কিংবা মানবিক বিরতির পক্ষে শক্ত অবস্থান নেয় যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ। সেই সঙ্গে এই যুদ্ধের শুরু থেকেই হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করে আসছিল কাতার ও মিসর।

এইচআর

Link copied!