আন্তর্জাতিক ডেস্ক
জুন ১৩, ২০২৫, ০৩:৩১ পিএম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
জুন ১৩, ২০২৫, ০৩:৩১ পিএম
ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে গতকাল দুপুরে দুই শিশুসহ ২৩২ যাত্রী এবং ১২ জন ক্রুবাহী যুক্তরাজ্যের লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার যে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে সেটি বোয়িং ৭৮৭ মডেলের। এই মডেলের কোনো উড়োজাহাজের এভাবে বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম। তবে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সিরিজের সব বিমান নিয়ে আগেই আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কোয়ালিটি ইঞ্জিনিয়ার।
গত বছরের এপ্রিলে তিনি দাবি করেছিলেন বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সিরিজের সব বিমানে গুরুতর যান্ত্রিক ত্রুটি রয়েছে। ওই সিরিজের সব বিমান গ্রাউন্ডেড করে ত্রুটি সারানোর পরামর্শও দিয়েছিলেন তিনি।
বোয়িংয়ের সাবেক কোয়ালিটি ইঞ্জিনিয়ার স্যাম সালেহপৌর গত বছরের এপ্রিলে সংবাদমাধ্যম এনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বোয়িংকে ত্রুটি সারানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন।
সাক্ষাৎকারে স্যাম সালেহপৌর বলেছিলেন, খরচ বাঁচানোর জন্য বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সিরিজের বিমানগুলো প্রস্তুতের ক্ষেত্রে যে প্রযুক্তি অবলম্বন করেছে কোম্পানি, তা ত্রুটিযুক্ত। সিরিজের বিমানগুলোর যন্ত্রাংশ বা ফিউসেলেজগুলোর সন্নিবেশন ঠিকমতো হয়নি; প্রতিটি ফিউসেলেজ জয়েন্টের মধ্যে সামান্য ফাঁক রয়ে গেছে।
এনবিসিকে বোয়িংয়ের সাবেক ওই কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘স্বাভাবিক গতিতে বিমান চালানো হলে এই ত্রুটি কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না; কিন্তু যদি গতি বাড়ানো হয়, সেক্ষেত্রে বায়ুচাপ এবং বিমানের ইঞ্জিনের সঙ্গে সঙ্গতি রাখার ক্ষেত্রে ফিউসেলেজ জয়েন্টগুলো ব্যর্থ হবে এবং তার পরিণতি হবে গুরুতর। এমনকি এ ধরনের পরিস্থিতিতে মাঝ আকাশে বিমান ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সিরিজের যতগুলো উড়োজাহাজ অপরেশনে রয়েছে, সবগুলো পরীক্ষা করা হোক এবং জরুরি ভিত্তিতে ত্রুটি সারানো হোক।’
ড্রিমলাইনার সিরিজের বিমানগুলোর ফিউসেলেজ জয়েন্টগুলোতে ঠিক কী ধরনের ত্রুটি রয়েছে— জানতে চাইলে স্যাম সালেহপৌর বলেছিলেন, উড়োজাহাজের ফিউসেলেজের জয়েন্টগুলোর ফাঁক পূরণের জন্য ছোটো ধাতব টুকরো ব্যবহার করা হয়। সাধারণভাবে এসব টুকরোকে বলা হয় ‘শিমস’। ড্রিমলাইনার সিরিজের উড়োজাহাজগুলো প্রস্তুতের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মাত্রায় শিমসের ব্যবহার করা হয়নি।
আপাতভাবে ছোটো মনে হলেও এটি বেশ গুরুতর একটি ত্রুটি। কারণ প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিমস না থাকার কারণে অপারেশনের সময় বিমানের ফিউসেলেজগুলোর ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে, দুর্ঘটনার আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি উড়োজাহাজের জীবনকালও (লাইফস্প্যান) কমিয়ে দিচ্ছে।
এনবিসিতে স্যাম সালেহপৌরের ওই সাক্ষাৎকার প্রচারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে একটি বিবৃতি দেয় বোয়িং কর্তৃপক্ষ। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বোয়িং খুবই পেশাদার একটি প্রতিষ্ঠান এবং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার সিরিজের বিমানগুলোর নিরাপত্তা ও মসৃন উড্ডয়ন পরিষেবা সম্পর্কে কোম্পানি সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী।
আহমেদাবাদে দুর্ঘটনার কারণ এখনও জানা যায়নি
ঠিক কী কারণে আহমেদাবাদে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে সে সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ওই উড়োজাহাজের ডানাতে কোনো সমস্যা হয়ে থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা বিবিসিকে জানিয়েছেন।
বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ জেফরি টমাস বিবিসিকে বলছেন, আমি যখন এই ভিডিওটি দেখছি, তাতে বিমানের চাকা সহ নিচের দিক, অর্থাৎ আন্ডারক্যারেজটা তখনও নামানো অথচ ডানার ফ্ল্যাপ গুটিয়ে ছিল।
বিমানের ডানায় যে ফ্ল্যাপ থাকে, সেগুলো খুলে বা বন্ধ করে আকাশে ওড়া বা মাটিতে নামার সময় বিমানের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
জেফরি টমাসের কথায়, ডানা আর ফ্ল্যাপগুলো একই সমতলে ছিল। আকাশে ওড়ার পরে ওই সামান্য সময়ের মধ্যে এরকমটা খুবই অস্বাভাবিক।
তার কথায়, আন্ডারক্যারেজ, অর্থাৎ চাকা সাধারণত ১০-১৫ সেকেন্ডে গুটিয়ে নেওয়া হয়, তবে ফ্ল্যাপগুলো অনেকটা সময় নিয়ে ১০-১৫ মিনিট ধরে গুটিয়ে নেওয়া হয়।
আরেকজন বিশেষজ্ঞ টেরি টোজার বলছেন, মনে হচ্ছে না যে ফ্ল্যাপগুলো খোলা রয়েছে এবং এটা স্পষ্ট বোঝা যায় যে বিমানটি টেক অফ ঠিক মতো করতে পারেনি।
আরএস