ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad
একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. জুবাইদা আয়েশা সিদ্দিকা

শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দিতে হবে

মো. নাঈমুল হক

অক্টোবর ৫, ২০২৩, ১২:১৩ এএম

শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দিতে হবে

আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এ বছর থেকে সরকার বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ উপলক্ষে আজ দিনব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষার মানোন্নয়নে শিক্ষকদের ভূমিকা এবং শিক্ষকদের প্রতি শিক্ষার্থীসহ সবার শ্রদ্ধাবোধ এবং সম্মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সচেতনতা তৈরিতে র্যালি, আলোচনা সভা বা সেমিনার আয়োজন করার নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দিবসটি উপলক্ষে আমার সংবাদের সঙ্গে নিজের শিক্ষকতা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা ও পরামর্শমূলক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. জুবাইদা আয়েশা সিদ্দিকা। তিনি ২০২৩ সালে জাতীয় পর্যায়ে (কলেজ) শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান প্রধান হয়েছেন। বর্তমানে রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। 

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমার সংবাদের নিজস্ব প্রতিবেদক মো. নাঈমুল হক।  

আমার সংবাদ : বিশ্ব শিক্ষক দিবসে কোন শিক্ষককে মনে পড়ছে। 

ড. জুবাইদা আয়েশা সিদ্দিকা : আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক বিশ্ববিদালয় পর্যায়ের প্রফেসর ড. মো. হাবিবুর রহমান। বিনম্র শ্রদ্ধায় তাকে শিক্ষক দিবসে স্মরণ করি। তিনি সমাজকর্ম বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট-এর উপাচার্য পদে থাকাকালে অবসরে যান। 

আমার সংবাদ : শিক্ষকতা পেশায় পথচলা শুরু কীভাবে।

ড. জুবাইদা আয়েশা সিদ্দিকা : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ছাত্রী অবস্থা থেকেই আমাদের সে সময়ের শ্রদ্ধাভাজন সিনিয়র শিক্ষক প্রফেসর ড. আলী আকবর, প্রফেসর ড. মো. হাবিবুর রহমান, প্রফেসর ড. প্রফুল্ল চন্দ্র সরকার প্রমুখ এদের পাঠদানে একাগ্রতা, আস্তরিকতা, স্নেহশীলতা, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে জ্ঞানের গভীরতা দেখে শিক্ষার প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট হই এবং পড়াশুনায় আরও বেশি মনোযোগী ও অনুরক্ত হই। পরবর্তীতে মাস্টার্স পাস করার পরপরই উচ্চতর গবেষণায় এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি আইবিএস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাভ করি। পাশাপাশি বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে অংশগ্রহণ ও যোগদানের মাধ্যমে শিক্ষকতা পেশায় পথচলা শুরু হয়।

আমার সংবাদ : প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় কোন দিকগুলোকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন।

ড. জুবাইদা আয়েশা সিদ্দিকা : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান অর্থাৎ অধ্যক্ষ হিসেবে আমি একাডেমিক দিকগুলোতে সবচাইতে বেশি গুরুত্ব প্রদান করি। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার গুণগতমান বৃদ্ধিকরণ, ক্লাসে উপস্থিতি শতভাগ নিশ্চিতকরণ, প্রতিষ্ঠান ও শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ উন্নয়ন, আধুনিক শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার, ডিজিটল কনটেন্ট, স্মার্ট বোর্ড ও মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার্থী অংশগ্রহণমূলক স্মার্ট ক্লাস গ্রহণ, অভিভাবক সমাবেশ, আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা ও পুরস্কার প্রদান, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের বিশেষ ক্লাস ও পরীক্ষা গ্রহণ ইত্যাদির ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ওপর জোর দেয়া হয়। 

একাডেমিক মান উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধ, দেশপ্রেম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ ও তথ্য প্রযুক্তির জ্ঞান সম্বলিত স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নানামুখী সহশিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয় কলেজে বিএনসিসি, রোভার, রেডক্রিসেন্ট, রেজার ইউনিটসহ বিজ্ঞান ক্লাব, বিতর্ক ক্লাব, ক্যারিয়ার ক্লাব, সঙ্গীত চর্চা কেন্দ্র, আবৃত্তি সংঘ, নৃত্য চর্চা কেন্দ্র, ক্লাব অব ইকোনমিক্স, নীতি চর্চা ক্লাব, সুরলহরী ক্লাব, গণতন্ত্র চর্চা ক্লাব, ভূগোল ও পরিবেশ ক্লাবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দক্ষ যোগ্য আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার নিরন্তর প্রয়াস চলছে। 

আমার সংবাদ : আপনার মতে, শিক্ষা ব্যবস্থার কোন দিকটির সংস্কার প্রয়োজন।

ড. জুবাইদা আয়েশা সিদ্দিকা : আমি মনে করি, বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত সমস্যা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কোচিং নির্ভরতা। কোচিং সেন্টারগুলো একেবারে আইন করে বন্ধ করে দেয়া গেলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভিত্তিক পড়াশুনায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশে কোচিং সেন্টার নির্ভর লেখাপড়া চালু নেই। আমরা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে সবসময় শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের কথা বলছি এবং শিক্ষাবিদ, শিক্ষা গবেষক, নীতিনির্ধারক এবং শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারের উচ্চপর্যায়ের নেতৃবৃন্দ শিক্ষার মান ক্রমেই নিম্নগামী বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।
আমি মনে করি, শিক্ষার গুণগত মান কমে যাওয়ার নেপথ্যের অন্যতম কারণ হচ্ছে শিক্ষার্থীদের কোচিং সেন্টারের পড়াশুনার প্রতি অধিক আগ্রহ। অনেক সময় অভিভাবকরাও ছেলেমেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাসে না পাঠিয়ে কোচিং সেন্টারে পাঠানোর বিষয়ে বেশি আস্থাশীল। এর পেছনে অন্যতম কারণগুলো হচ্ছে কোচিং সেন্টারের চটকদার বিজ্ঞাপন, সুসজ্জিত এসি ক্লাস রুম, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ক্যাপসুল প্যাকেজ পড়াশুনা, পরীক্ষার ফলাফলে চমকপ্রদ পুরস্কার প্রদান এবং সর্বোপরি অল্প পরিশ্রমে ভালো ফল লাভ করার চেষ্টা ইত্যাদি।

আমার সংবাদ : শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সম্পর্ক আগের মতো আছে? শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকা কেমন রাখা প্রয়োজন। 

ড. জুবাইদা আয়েশা সিদ্দিকা : শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সম্পর্কের প্রকৃতিগত কিছু পার্থক্য বর্তমানে পরিলক্ষিত হয়। যেমন— আগের দিনের শিক্ষকরা ছিলেন অভিভাবকসুলভ, অনেক গুরুগম্ভীর এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শ্রদ্ধা ও সম্মানের সম্পর্ক ছিল। এ কারণে শিক্ষার্থীদের মনে ভয় মিশ্রিত শ্রদ্ধা এবং কিছু দূরত্ব সৃষ্টি হতো। বর্তমানে শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক অনেকটা সহজ, আন্তরিক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ হয়েছে। এতে শিখন-শেখানো কার্যক্রম অনেক সুন্দর, কার্যকর ও ফলপ্রসূ হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে তাদের প্রশ্ন করতে পারে এবং শিক্ষকরা পাঠ অত্যন্ত সুচারুরূপে অংশগ্রহণমূলকভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হচ্ছেন। বর্তমানে শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নানামুখী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হয়। শিক্ষককে নেতা, মটিভেটর, কাউন্সিলর, চেঞ্জমেকার সৃজনশীল, উদার গণতান্ত্রিক, ধৈর্যশীল, সাহসী, সর্বোপরি দেশপ্রেমিক হতে হবে। 

আমার সংবাদ : একজন শিক্ষক হিসেবে আপনার ভালো লাগার অনুভূতি কোনগুলো। 

ড. জুবাইদা আয়েশা সিদ্দিকা : আমি মনেপ্রাণে আপাদমস্তক একজন শিক্ষক। হূদয়ের গভীর থেকে ভালোবাসা ও আত্মার সম্পর্ক শিক্ষার্থীদের সাথে। শিক্ষার্থীদের কল্যাণে আজীবন কাজ করে গেছি সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে। একজন শিক্ষক হিসেবে আমার ভালো লাগার অনুভূতি হচ্ছে আমি আমার শিক্ষার্থীদের প্রাণ দিয়ে ভালোবাসি এবং অনুরূপভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও গভীর সম্মান ও শ্রদ্ধা পেয়ে থাকি। যা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। শিক্ষার্থীদের সাফল্যে অপার আনন্দ লাভ করি, আনন্দে উৎফুল্ল হই, উদ্বেলিত হই। বর্তমানে প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে আমার সবচাইতে ভালো অনুভূতি কাজ করে যখন শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কোনো অর্জন হয়। যেমন— শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, গণিত অলিম্পিয়াড, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, উন্নয়ন ও ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সঙ্গীত ও নৃত্য প্রতিযোগিতা প্রভৃতিতে পুরস্কার প্রাপ্তি, একাডেমিক ক্ষেত্রে পরীক্ষার ভালো ফলাফল লাভ, বোর্ড-বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরস্কার লাভ ইত্যাদি।

আমার সংবাদ : নতুন শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন জানতে চাই। 

ড. জুবাইদা আয়েশা সিদ্দিকা : সময়ের প্রেক্ষিতে পরিবর্তনশীলতা ও নতুন শিক্ষাক্রম আমার দৃষ্টিতে গ্রহণীয় এবং প্রয়োজনীয়। সর্বশেষ ২০১২ সালে শিক্ষাক্রম পরিবর্তন হয়েছিল এবং মাঝে প্রায় ১০ বছরের ব্যবধান। আধুনিক পরিবর্তশীল বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে নতুন শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন আবশ্যক। পৃথিবীর উন্নত দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও পদ্ধতির আদলে নতুন শিক্ষাক্রম প্রবর্তন, পরিবর্তন ও সাজানো হয়েছে। 

নতুন শিক্ষাক্রমে বেশ কিছু পরিবর্তনের মধ্যে মূল বিষয় হলো- শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন হবে তিনটি স্তরে। প্রথম স্তরে- এলিমেন্টারি (প্রাথমিক) লেভেল, দ্বিতীয় স্তর- মিডেল (মধ্যম) লেভেল এবং তৃতীয় স্তর- এক্সপার্ট (পারদর্শী) লেভেল। নতুন শিক্ষা পদ্ধতিতে উঠে যাচ্ছে সৃজনশীল ও গ্রেড পদ্ধতি। মাধ্যমিক পর্যায়ে থাকছে না আর পৃথক তিনটি বিভাগ। এই পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা অভিন্ন বিষয় অধ্যয়ন করবে। একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিভাগ (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায়) পছন্দ করতে পারবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে পৃথক দুটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এই দুই শ্রেণীর পরীক্ষার ফলাফলের সমন্বয়ে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল দেয়া হবে। সব মিলিয়ে নতুন শিক্ষাব্যবস্থায় যোগ্যতাভিত্তিক মূল্যায়ন হবে। অ্যাসাইনমেন্ট, উপস্থাপন হাতে কলমের কাজ ইত্যাদি বহুমুখী পদ্ধতিতে মূলায়ন হবে। নতুন শিক্ষাব্যবস্থাকে স্বাগত জানাই।
 

Link copied!