আমার সংবাদ ডেস্ক
জুন ১৬, ২০২৫, ১২:০৫ এএম
আমার সংবাদ ডেস্ক
জুন ১৬, ২০২৫, ১২:০৫ এএম
নেতানিয়াহু পুরো মধ্যপ্রাচ্যে আগুন লাগাতে চাইছেন : এরদোগান
ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন শহরে আবারও বিস্ফোরণ ঘটেছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের শিরাজ ও কেন্দ্রীয় প্রদেশ ইস্পাহানে বিস্ফোরণের খবর নিশ্চিত করেছে ইরানি সংবাদমাধ্যম। এর মধ্যে ইস্পাহানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একটি স্থাপনায় হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা আইএসএনএ।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেহরানেও বিস্ফোরণ হয়েছে এবং রাজধানীর আকাশে ভারী ধোঁয়া দেখা গেছে। ইসরাইলি হামলার আশঙ্কায় তেহরানে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে। আল জাজিরা জানিয়েছে, হামলাগুলো তেহরানের উত্তরে নিয়াভারান এবং শহরের কেন্দ্রস্থলে ভালিয়াসর ও হাফতে তির স্কোয়ারের আশপাশে ঘটেছে বলে জানা গেছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আভিচাই আদ্রাই দাবি করেছেন, ইস্পাহানে ইসরাইল যে হামলা চালিয়েছে, তা একটি পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করেই করা হয়েছে। যদিও ইরান এই দাবির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। এর আগে ইসরাইল জানায়, শনিবার সন্ধ্যায় তারা তেহরানে অন্তত ৮০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।
একটি ইসরাইলি সামরিক সূত্র জানায়, এসব লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে ছিল দুটি দ্বৈত-ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি কেন্দ্র, যা সামরিক ও পারমাণবিক কার্যক্রমে ব্যবহূত হতো। ইসরাইলি বাহিনী আরও জানায়, হুথি গোষ্ঠীর প্রধান সামরিক কর্মকর্তাকেও নিশানা করা হয়েছে শনিবার রাতে। এর আগে ইসরাইলি সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন, ইরানের ভেতরে হামলার জন্য তাদের কাছে এখনও একটি দীর্ঘ তালিকা রয়েছে। কতদিন এই হামলা চলবে, সে বিষয়ে তারা কিছু বলেননি। ইসরাইলি সেনাবাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে, তারা ইরানের সামরিক শিল্প ও পারমাণবিক কর্মসূচিকে টার্গেট করে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে দেশটির জনগণকে অস্ত্র কারখানাগুলোর আশপাশ থেকে সরে যাওয়ার সতর্ক বার্তাও দিয়েছে তারা।
ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের ফোনালাপ, ইরানে ইসরাইলের হামলার নিন্দা : ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাত নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে গত শনিবার ৫০ মিনিট ফোনে কথা বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আলাপকালে ইরান-ইসরাইল সংঘাত বন্ধের চেষ্টা চালানোর জন্য ট্রাম্পকে আহ্বান জানান পুতিন। ইরানে ইসরাইলের সামরিক অভিযানের নিন্দাও জানান তিনি। ক্রেমলিনে পুতিনের উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ সাংবাদিকদের একথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ইরান-ইসরাইল সংঘাত আরও বেড়ে যেতে পারে এবং মধ্যপ্রাচ্যের জন্য অপ্রত্যাশিত পরিণতি ডেকে আনতে পারে বলে পুতিন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ট্রাম্প নিজেও তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশালে জানান, ফোনে পুতিনের সঙ্গে তার মূল আলোচনা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে। তবে তিনি ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধ করার জন্যও পুতিনকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
ট্রাম্প লেখেন, ‘ফোনালাপ প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী হয়। তিনিও আমার মতো মনে করেন, ইসরাইল-ইরান যুদ্ধ বন্ধ হওয়া উচিত। আমি তাকে বলেছি, তার যুদ্ধটাও শেষ হওয়া দরকার।’
ক্রেমলিনে পুতিনের উপদেষ্টা উশাকভ জানান, দুই নেতা মধ্যপ্রাচ্যের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন। তবে তারা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার পথে ফেরার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি।
উশাকভ বলেন, ওমানের মধ্যস্থতায় নির্ধারিত যুক্তরাষ্ট্র-ইরান ষষ্ঠতম বৈঠকটি রোববার হওয়ার কথা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রও আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ছিল। তবে বৈঠকটি বাতিল হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘পুতিন স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, উত্তেজনা বাড়ার আগেই রাশিয়া পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধান খোঁজার জন্য বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছিল। রাশিয়ার সেই নীতিগত অবস্থান এখনও অপরিবর্তিত এবং এর ভিত্তিতে আমরা কাজ করে যাব।’ ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পুতিনের সঙ্গে আলোচনা কম হলেও ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আগামী সপ্তাহে আরও আলোচনা হতে পারে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় রিয়া বার্তা সংস্থার বরাত দিয়ে উশাকভ জানান, পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন, ২২ জুনের পর রাশিয়া আবারও ইউক্রেনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। এই ফোনালাপে উভয় নেতা তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়েও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানান উশাকভ। তিনি বলেন, ‘এই সম্পর্কই তাদেরকে এমন জটিল বিষয়েও কার্যকর আলোচনা করতে সাহায্য করেছে।’ ফোনালাপের সময় পুতিন ট্রাম্পকে তার ৭৯তম জন্মদিনের শুভেচ্ছাও জানান।
নেতানিয়াহু পুরো মধ্যপ্রাচ্যে আগুন লাগাতে চাইছেন —এরদোগান : নেতানিয়াহু ইরানে হামলা চালিয়ে পারমাণবিক আলোচনায় ব্যাঘাত ঘটিয়েছেন মন্তব্য করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেছেন, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পুরো মধ্যপ্রাচ্যে আগুন লাগাতে চাইছেন।
গত শনিবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে এক ফোনালাপে এরদোগান এ মন্তব্য করেন বলে তুরস্ক সরকারের যোগাযোগবিষয়ক দপ্তরের বিবৃতির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে তুর্কি সংবাদমাধ্যম টিআরটি গ্লোবাল।
এরদোগানের দপ্তরের দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইরানি প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের সঙ্গে ফোনালাপে এরদোগান বলেছেন, গাজায় হওয়া জাতিগত হত্যার ঘটনা থেকে বিশ্বের দৃষ্টি সরাতে ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। টিআরটি গ্লোবালের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানি প্রেসিডেন্ট ছাড়াও সৌদি আরব, পাকিস্তান, জর্ডান ও মিসরের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গেও কথা বলেছেন এরদোগান। ইসরাইল-ইরান সংঘাত এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তিনি।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ফোনালাপে এরদোগান সতর্ক করে বলেন, নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন ইসরাইলই এখন এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। তুরস্ক সরকারের যোগাযোগবিষয়ক দপ্তরের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া এক পোস্টে বলা হয়, এরদোগান মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গেও ফোনে কথা বলেছেন।
সিসিকে এরদোগান বলেন, ইসরাইলের হামলা গভীরভাবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন করেছে। আইনের তোয়াক্কা না করার যে মনোভাব নেতানিয়াহুর মধ্যে দেখা গেছে তা বিশ্বের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকির।এরদোয়ান আরও বলেন, এ ধরনের কর্মকা্ল শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং পুরো বিশ্বের নিরাপত্তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।