নিজস্ব প্রতিবেদক
জুন ২৫, ২০২৫, ১২:০৭ এএম
সরকার বিপুল ঋণ নিলেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকার চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ৯৮ হাজার ৫৭৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬০ শতাংশ বেশি। আর ওই ঋণ প্রবৃদ্ধির হার গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অথচ দেশে উন্নয়ন বাজেট (এডিপি) বাস্তবায়ন হচ্ছে না। মেগা প্রকল্পের কাজ বন্ধ।
মূলত বাজেট ঘাটতি মেটানো সরকারের ঋণের মূল কারণ। তার বাইরে বড় ধরনের কোনো দুর্যোগ ঘটলে বা অপ্রত্যাশিত ব্যয় বেড়ে গেলে সরকারের ঋণের পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। অথচ এ যাবৎকালের মধ্যে নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে চলতি অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেট বাস্তবায়ন হার। পরিকল্পনা কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরের (জুলাই-এপ্রিল) মূল বাজেট বরাদ্দের বিপরীতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার ৩২ দশমিক ৮ শতাংশে পৌঁছেছে। যা গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। তার মধ্যে সরকারের অর্থায়নে গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নের হার ৩১ দশমিক ১ শতাংশ আর উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণের টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন হার ৩৫ দশমিক ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছর সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া শীর্ষ ১০ মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মধ্যে পাঁচটির এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল গড় হারের তুলনায় কম।
অপরদিকে শীর্ষ দশের বাইরে থাকা সরকারি মন্ত্রণালয় বা বিভাগগুলোর গড় এডিপি বাস্তবায়ন হার গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। গত অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল এডিপি বাস্তবায়ন হার ছিল ৪২ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে তা কমে ২১ দশমিক ৭ শতাংশে নেমেছে। আবার সামগ্রিক বাজেট বাস্তবায়ন হারও গত অর্থবছরের তুলনায় খুব একটা বাড়েনি। যদিও অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী চলতি অর্থবছরের সাত মাসে সামগ্রিক বাজেট বাস্তবায়ন হার ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ১ শতাংশ পয়েন্টে বেশি। গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে বাজেট বাস্তবায়ন হার ছিল ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ।
সূত্র জানায়, বাজেট ঘাটতি মেটাতেই সরকারের বিপুল ঋণ গ্রহণ করেছে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন হার খুবই কম। অনুন্নয়ন বাজেটেও অপ্রত্যাশিত কোনো খাত তৈরি হয়নি যার জন্য বড় ধরনের অর্থের প্রয়োজন হতে পারে। মূলত সরকারের রাজস্ব আয় কমার কারণেই ব্যাংক ঋণ বাড়তে পারে। তাছাড়া সঞ্চয়পত্র বিক্রিও কমেছে। তাতে করে সরকারের অর্থ জোগানের পথগুলো সংকীর্ণ হয়ে গেছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রাজস্ব আদায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭১ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকার যে টাকা পেয়েছে, তার চেয়ে ৭ হাজার ১৩ কোটি টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হয়েছে। সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙার হার বেশি হওয়ায় ওই খাত থেকে সরকারের অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না।
সূত্র আরও জানায়, বর্তমান সরকারের আমলে রাজস্ব আয় কমবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ ব্যবসাবাণিজ্য স্থবির হয়ে গেছে। অর্থনীতির কোনো খাতে গতি নেই। মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের জীবনযাপনের ব্যয় বাড়ায় সঞ্চয় ভেঙে ফেলছে। এ পরিস্থিতিতে আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামাল দিতে বাজেটও কাটছাঁট করেছে সরকার। ওই কারণেই ৬০ শতাংশ বেশি ব্যাংক ঋণ নিয়ে ওই টাকা কোথায় খরচ করা হলো তা কৌতূহল সৃষ্টি করেছে।