Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয়

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

এপ্রিল ২৪, ২০২২, ০৫:৫৪ পিএম


ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয়

ক্যান্সার শব্দটি শুনলে সবাই আঁতকে ওঠেন। অনেকের ধারণা, একবার ক্যান্সার হওয়া মানেই ফলাফল নিশ্চিত মৃত্যু। কিন্তু এ ধারণা একেবারেই অমূলক। তাই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটের ক্যান্সার ইপিডেমিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন।

প্রথমত, ব্যক্তিগতভাবে একজন মানুষের জানা দরকার যে, ক্যান্সার কেন হয়। কেন বা কোন রিস্ক ফ্যাক্টরের কারণে ক্যান্সার হয়, সেগুলো প্রতিটি মানুষের জানা দরকার। সে অনুযায়ী আমরা যদি সেসব রিস্ক ফ্যাক্টর বা ঝুঁকিগুলো এড়িয়ে চলতে পারি, তাহলে ব্যক্তি পর্যায়ে আমাদের করণীয় কাজগুলো করা হলো।

পাশাপাশি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বা হেলথ সিস্টেমে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেক করণীয় রয়েছে। যেমন- ক্যান্সার কেন হয় এবং কি কি কাজ করলে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব, এসব তথ্যগুলো জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

করোনার সময়ে করোনা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয়, ঠিক তেমনি ক্যান্সার প্রতিরোধেও আমাদের অনেক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয়। যেমন- নিয়মমতো স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া, ব্যায়াম করা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, শরীরের যত্ন নেওয়া ইত্যাদি।

এছাড়া প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু কিছু ক্যান্সার রোগের ক্ষেত্রে আগে থেকেই ভ্যাকসিন নিয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো যায়। উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি- জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এইচপিভি ভ্যাকসিন নেওয়া জরুরি। এছাড়াও লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের ভ্যাকসিন নেওয়া হয়। ক্যান্সার প্রতিরোধের পূর্বেই প্রাথমিক পর্যায়ে এ ধরনের ব্যবস্থাগুলো নেওয়া যায়। একে প্রাইমারি প্রিভেনশন বলে।

ক্যান্সারের ক্ষেত্রে কিছু কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর পরিবেশগত কারণে হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ রিস্ক ফ্যাক্টর পরিবেশগত কারণে হয়ে থাকে এবং বাকি ১০ শতাংশ রিস্ক ফ্যাক্টর বংশানুক্রমে হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে জিনের মাধ্যমে এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে ক্যান্সার হতে পারে। যেমন- মহিলাদের ক্ষেত্রে মা, খালা, নানি। কারো যদি ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সার হয়ে থাকে, তাহলে সে ক্ষেত্রে বংশানুক্রমে বাচ্চার ক্ষেত্রে এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। আবার বাচ্চাদের চোখের পর্দা বা রেটিনায় এক ধরনের ক্যান্সার হয়ে থাকে। এটাও বংশগত কারণে হয়ে থাকে।

এছাড়া শরীরের বাইরে থেকে পরিবেশগত কারণে কিছু রিক্স ফ্যাক্টর আমাদের শরীরে আসে। এর মধ্যে কিছু রয়েছে রাসায়নিক পদার্থ। যেমন- তামাক বা টোবাকো। এক তামাকের মধ্যে চার হাজারের মতো কেমিক্যাল রয়েছে। তার মধ্যে ৪৫টি কেমিক্যাল সরাসরি ক্যান্সার সৃষ্টি করে। এটি নানা রকম গবেষণায় প্রমাণিত। ধোয়াবিহীন তামাকও সমান ক্ষতিকর স্বাস্থ্যের জন্য। আর্সেনিক, অ্যালকোহল- এসব কেমিক্যালও ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী।

কিছু ভৌত পদার্থ যেমন- রেডিয়েশনের কারণেও ক্যান্সার সৃষ্টি হয়ে থাকে। এমনকি বিকিরণ যেমন- সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি যদি দীর্ঘদিন সরাসরি শরীরে পড়ে, তাহলে চামড়ায় এক ধরনের ক্যান্সার হয়। এটা সাধারণত পশ্চিমা দেশগুলোতে বেশি দেখা যায়।

এছাড়াও কেউ কেউ মাংস জাতীয় খাবার বা চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খেয়ে থাকেন; এক্ষেত্রে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এক্ষেত্রে রেকটাম এবং কোলন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। যাদের ব্যায়াম, হাঁটাচলা কম হয়; মুটিয়ে যাবার ফলে তাদেরও ক্যান্সার হয়ে থাকে। যেমন নারীদের ক্ষেত্রে মুটিয়ে যাওয়ার ফলে স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। সুতরাং এ সব ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে পারলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা তিন ভাগের এক ভাগ কমে যায়।

দ্বিতীয় পর্যায়ে ক্যান্সার প্রতিরোধ করা যায় দুইভাবে। একটি হচ্ছে- লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত যদি রোগী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয় এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়, তাহলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

অন্যটি হচ্ছে যেমন- ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে মহিলাদের মধ্যে যারা খুব মুটিয়ে গেছেন, যাদের বাচ্চা হয়নি অথবা বাচ্চাকে দুধ খাওয়াতে পারছে না, কিংবা বিয়ে হয়নি এখনো বা দেরিতে বিয়ে হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। তাদের ক্ষেত্রে অপেক্ষা না করে আগে থেকেই কিছু সাধারণ পরীক্ষা করাতে হবে।

ঠিক একইভাবে জরায়ু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে, যাদের খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়েছে এবং অনেকগুলো বাচ্চা হয়েছে বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকা হয়, তাদের ক্ষেত্রে আগে থেকেই কিছু সাধারণ পরীক্ষা করা যেতে পারে, যাকে ক্যান্সার স্ক্রিনিং বলে।

বাংলাদেশের সরকারিভাবে ৫০০টির মেডিকেল সেন্টার যেমন- বিএসএমএমইউ, মেডিকেল কলেজ, জেলা হাসপাতাল এবং কিছু কিছু উপজেলা হাসপাতালে ব্রেস্ট ক্যান্সার এবং জরায়ুর মুখের ক্যান্সারের পরীক্ষাগুলো প্রাথমিকভাবে করা হয়। এছাড়া জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এইচপিভি ভ্যাকসিন সাধারণত ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোরীদের দিতে হয়, অথবা বিয়ের আগে দিতে হয়। এভাবে অনেক ক্ষেত্রেই ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।

সূত্র: ডক্টর টিভি

Link copied!