Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

ঝর্ণার সামনে কিছুটা নির্জন সময় কাটাতে ঘুরে আসুন খাগড়াছড়ি

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

মে ২১, ২০২২, ০৩:০৬ পিএম


ঝর্ণার সামনে কিছুটা নির্জন সময় কাটাতে ঘুরে আসুন খাগড়াছড়ি

আপনি যদি পাহাড় থেকে সূর্যোদয় বা অস্তমিত হওয়ার দৃশ্য উপভোগ করতে চান, ঝলমলে ঝর্ণার সামনে কিছুটা নির্জন সময় কাটাতে চান অথবা কাছাকাছি থেকে আদিবাসী সংস্কৃতি অনুভব করতে চান তবে খাগড়াছড়ি হতে পারে ভ্রমণের জন্য একটি আদর্শ স্থান। এক নজরে খাগড়াছড়ি জেলার কয়েকটি দর্শনীয় স্থান:

রিসাং ঝর্ণা:

খাগড়াছড়ি ভ্রমণে গেলে প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য রিসাং ঝর্ণাটি দেখা কোনোভাবেই মিস করবেন না। মারমা ভাষায় এর নাম রিসাং ঝর্ণা, ‘রি’ শব্দের অর্থ পানি আর ‘সাং’ শব্দের অর্থ গড়িয়ে পড়া।

ঝর্ণার পুরো যাত্রা পথটাই দারুণ রোমাঞ্চকর। যাত্রাপথে দূরের উঁচু-নিচু সবুজ পাহাড়, বুনোঝোঁপ, নামহীন রঙ্গিন বুনোফুলের নয়নাভিরাম অফুরন্ত সৌন্দর্য যে কাউকে এক কল্পনার রাজ্যে নিয়ে যায়। মহাসড়ক থেকে ঝর্ণার পথটি সবুজ পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত। ঝর্ণার কাছে গেলে এক পবিত্র স্নিগ্ধতায় দেহমন ভরে উঠে। ২৫-৩০ হাত উঁচু পাহাড় থেকে আছড়ে পড়ছে ঝর্ণার জলরাশি, ঢালু পাহাড় গড়িয়ে নিচে নেমে যাচ্ছে এই প্রবাহ। কাছাকাছি দুটো ঝর্ণা রয়েছে এ স্থানে। প্রতিদিন বহু পর্যটক এখানে এসে ভিড় জমায় এবং ঝর্ণার শীতল পানিতে গা ভিজিয়ে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যায়।

আলুটিলা গুহা: 

আলুটিলা খাগড়াছড়ি জেলায় আলুটিলা পর্যটর কেন্দ্রে অবস্থিত একটি প্রাকৃতিক গুহার নাম। এই গুহাটি ‘আলুটিলা রহস্যময় গুহা’ নামেও পরিচিত। নাম টিলা হলেও আলুটিলা কিন্ত মোটেও টিলা নয়। বরং আলুটিলা খাগড়াছড়ি জেলার সবচেয়ে উঁচু পর্বত। আলুটিলার আগের নাম ছিল আরবারী পর্বত।

জানা যায়, খাগড়াছড়িতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় খাদ্যের অভাব প্রচণ্ডভাবে দেখা দিলে এলাকার মানুষজন খাদ্যের সন্ধানে এই পর্বত থেকে বুনো আলু সংগ্রহ করে তা খেয়ে বেঁচে ছিল। সেই থেকে পর্বতটির নাম হয়ে যায় আলুটিলা।

পাহাড়ের ভেতরে এই গুহা যেকোনো ভ্রমণপ্রেমীকে আনন্দ দিতে পারে। গুহাটির চারপাশে রয়েছে ঘন সবুজের অরণ্য। গুহাটি ভেতরে ১০০ মিটার দীর্ঘ, ১ দশমিক ৮ মিটার উঁচু এবং শূন্য দশমিক ৯ মিটার প্রশস্ত। এই গুহাটি খুবই অন্ধকার ও শীতল। কোনো প্রকার সূর্যের আলো প্রবেশ করে না বলে মশাল নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। সুড়ঙ্গের তলদেশ পিচ্ছিল এবং পাথুরে। এর তলদেশে একটি ঝর্ণা প্রবাহমান। গুহাটির একপাশ দিয়ে প্রবেশ করে অন্যপাশে দিয়ে বের হতে সময় লাগতে পারে ১০ থেকে ১৫ মিনিট। গুহাটির উচ্চতা মাঝে মাঝে খুব কম হওয়ায় নতজানু হয়ে হেঁটে যেতে হয়।

দেবতা পুকুর: 

খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি সড়কের নুনছড়ি মৌজায় চির প্রশান্তির দেবতার পুকুর অবস্থিত। এটি পর্যটন মোটেল থেকে ১২ কিলোমিটার এবং মাইসছড়ি থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

পৌরাণিক কাহিনী মতে, এই পবিত্র পুকুরের পানি শুকিয়ে যাবে না এবং দূষিত হবে না। স্থানীয় লোকদের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য স্বয়ং দেবতা এই পুকুর খনন করেন। তাই এর নাম দেবতা পুকুর। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ফিট ওপরে পাহাড় চূড়ায় এটি অবস্থিত। পুকুরের আকার দৈর্ঘ্যে প্রায় ১ হাজার ৫০০ ফুট এবং প্রস্থে প্রায় ৬০০ ফুট।

শতবর্ষী বট গাছ: 

আপনি যদি প্রকৃতিপ্রেমী হন তবে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার শতবর্ষী পুরাতন বটগাছটি দেখে এক প্রশান্তি অনুভব করবেন। মাটিরাঙ্গার খেদাছড়ার কাছাকাছি এলাকায় এই শতবর্ষী বটগাছের অবস্থান। এই গাছ শুধু ইতিহাসের সাক্ষী নয়, এ যেন দর্শানাথীদের জন্য আশ্চর্য এক বস্তু। পাঁচ একরেরও বেশি জায়গাজুড়ে রয়েছে এ গাছ। মূল বটগাছটি থেকে নেমে আসা প্রতিটি ঝুড়িমূল কালের পরিক্রমায় এক একটি নতুন বটবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হল- ঝুড়ি মূল থেকে সৃষ্টি প্রতিটি গাছ মূল গাছের সঙ্গে সন্তানের মতোই জড়িয়ে আছে।

স্থানীয়দের মতে, এ বটবৃক্ষের নিচে বসে যিনি শীতল বাতাস লাগাবেন তিনিও শতবর্ষী হবেন।

সাজেক ভ্যালি: 

পাহাড়ের চূড়া থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উপভোগ করতে চাইলে খাগড়াছড়ি ভ্রমণণে সাজেক ভ্যালি কোনোভাবেই মিস করবেন না। প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে উপত্যকাটি অবশ্যই ঘুরে আসবেন।

সাজেক যদিও রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত, তবে যাতায়াতের সহজ পথ খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা রোড। তাই যারা খাগড়াছড়ি ভ্রমণে যান তাদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ সাজেক ভ্যালি। খাগড়াছড়ি থেকে ৬৯ কিলোমিটার এবং বাঘাইছড়ি উপজেলা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের সাজেকের পুরোটাই পাহাড়ে মোড়ানো পথ।

আমারসংবাদ/আরএইচ

Link copied!