Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪,

দেরিতে বিয়ে ও সন্তান গ্রহণে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি

মো. মাসুম বিল্লাহ

অক্টোবর ৩১, ২০২২, ০৮:০৬ পিএম


দেরিতে বিয়ে ও সন্তান গ্রহণে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি

দেশে প্রতি বছর আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। সেই সঙ্গে বাড়ছে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের হারও। চিকিৎসকরা বলছেন, দেরিতে বিয়ে, দেরিতে সন্তান গ্রহণ, আবার যাদের সন্তান নেই বা সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, খাদ্যাভ্যাসে শাকসবজি বা ফলমূলের চাইতে চর্বি ও প্রাণীজ আমিষ বেশি থাকলে এবং প্রসেসড ফুড বেশি খেলে, এবং অতিরিক্ত ওজন যাদের তাদেরও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।

সোমবার (৩১ অক্টোবর) বাংলাদেশ ক্যান্সার স্টাডি গ্রুপ ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টারস ফোরাম কর্তৃক আয়োজিত ‘বংশগত কারণে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানোনো হয়েছে।

অনুষ্ঠানে অতিথির বক্তব্যে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চ অ্যান্ড হসপিটালের সার্জিক্যাল অনকোলোজি বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক ও বিশিষ্ট ব্রেস্ট সার্জন ডা. মো. হাসানুজ্জামান বলেন, বয়স ৩০ বছর হলে ব্রেস্ট ক্যান্সারের যতগুলো রিচ ফ্যাক্টর রয়েছে, সেগুলো ব্রেস্টের ওপর বেশি কাজ শুরু করে। এই বয়সেও একটি মেয়ের ফুল টার্ম ব্রেস্ট ডেভেলপমেন্ট না হয়। একটি ব্রেস্ট তখনই পুরোপুরি ডেভেলপমেন্ট হয়, যখন তার একটি বেবি আসে। এর আগে ব্রেস্ট বড় হয় ঠিকই কিন্তু পুরোপুরি ডেভেলপমেন্টটা আসে না।

তিনি বলেন, যখনই একজন নারী ফুল টার্ম বেবী নিয়ে নিচ্ছে, তখনই তার ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিটা কমে যাচ্ছে।

ডা. হাসানুজ্জামান বলেন, বয়স বাড়ার সাথে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বাড়ে। বিশেষ করে ৫০ বছর বয়সের পর এই ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে যায়। তখন আর করার কিছু থাকে না। বয়স ৩০ বা ৩৫ হবার পর সব নারীর উচিত নিয়মিত নিজের স্তন পরীক্ষা করে দেখা। প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত হলে স্তন ক্যান্সার ১০০ ভাগ নিরাময়যোগ্য বলেও তিনি জানান।

বাচ্চা হওয়ার পর ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে পুরোপুরি ঝুঁকিমুক্ত হওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাচ্চা হলে ঝুঁকি একেবারে কমে যায়, এমনটা আমরা বলবো না। তবে, ঝুঁকি অনেকাংশেই কমে যায়। এজন্য আমরা বলি, ৩০ বছরের মধ্যে যেন একটা মেয়ে ফুল টার্ম বেবী যেন নিয়ে নেয়। অনেকেই ৩৫ বছরের পর বেবি নিচ্ছে, তাদের হয়তো ঝুঁকিটা বেড়ে যাচ্ছে। এজন্য আমরা বলি, অন্তত ৩০ বছরের মধ্যেই একটা বেবি নিয়ে নিবেন।

তিনি আরও বলেন, ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কিছু মডিফাইড করা যায়, আবার কিছু করা যায় না। যেমন কারও আগেই মাসিক শুরু হলো, দেরিতে শেষ হলো, এই সময়টাতে হরমোন একটা প্রভাব থাকে। যে হরমোনটা ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য দাযী। সেক্ষেত্রে যতো লস্বা সময়ে তার মাসিক হচ্ছে, তার হরমোনাল প্রভাবটাও বেশি হচ্ছে। সেটা কিভাবে কমানো যায়? কমানোর অন্যাতম উপায় হলো শারীরিক ব্যায়াম করা, এরপর তার যে পিরিয়ড হবে ঠিকই কিন্তু তার অভোলেশন (ডিম্বস্ফোটন) হবে না। তখন তার হরমোনাল প্রভাবটা কমে যাবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অনকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মামুন অর রশীদ বলেন, স্তন ক্যান্সারের সাথে পারিবারিক ইতিহাস অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। যাদের পরিবারের কোন সদস্য ইতিপূর্বে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের পরিবারের অন্যদেরও এই স্তন ক্যান্সিারের ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে যায়। শতকরা ৩০ থেকে ৮০ ভাগ।

তিনি বলেন, স্তন ক্যান্সারের সকল চিকিৎসা ব্যবস্থা বাংলাদেশেরই করা সম্ভব। কিন্তু এক্ষেত্রে একটা কথা হলো আমাদের দেশে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৬ লাখ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী আমাদের প্রয়োজন হয় ১৬০টি পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার সেন্টার। এর বিপরীতে ছোটবড় সবমিলিয়ে আমাদের আছে মাত্র ২৬টি। এখন আসলে এই অল্প সংখ্যক চিকিৎসা কেন্দ্রে কী করে সম্ভব এতো রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া? এজন্য আমাদেরকে অবশ্যই চিকিৎসা কেন্দ্রের পাশাপাশি অভিজ্ঞ জনবল, যন্ত্রপাতির ব্যবস্থা করতে হবে।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চ অ্যান্ড হসপিটালের মেডিকেল অনকোলোজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, টার্শিয়ারি লেভেলের প্রতিটি সরনকারি হাসপাতালেই কিন্তু ক্যান্সার ডায়গোনোসিসের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, চিকিৎসাও হচ্ছে। কিন্তু সমস্যাটা হলো, আমাদের ক্যাপাসিটি ৮০ জনের, কিন্তু রোগী আসছে ৪০০ জন। আমি ৮০ জনকেই চিকিৎসা করলাম, কিন্তু বাকি ৪২০ জনই কিন্তু লাইন দাঁড়িয়ে থাকেছে। এখানেই সমস্যাটা। বাকি ৪২০ জনকে তখনই আমি পরিপূর্ণভাবে সেটা দিতে পারবো, যখন আরও ৮ থেকে ১০টা সেন্টার আমাদের তৈরি করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, আমাদের অভিজ্ঞ চিকিৎসক আছে, আমাদের টেকনোলজিও কিন্তু খুবই উন্নত মানের। বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যান্সার ডায়গোনস্টিক করার জন্য যত আধুনিক ইনভেসটিগেশন প্রয়োজন আমাদের আছে। এক্ষত্রে সরকারি লেভেলের দুয়েকটা হাসপাতালে হয়তো এখনও হয়নি, সেটিও খুব শিগগিরিই হয়ে যাবে।

গ্লোবকনের তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে বিশ্বে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় ২০ লাখ ৮৮ হাজার ৮৪৯ জন, মৃত্যু হয় ৬ লাখ ২৭ হাজার জন। আর বাংলাদেশে বছরে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় ১২ হাজার ৭৬৪ জন। তাদের মধ্যে মারা যান ৬ হাজার ৮৪৬ জন। এদের মধ্যে শতকরা ৯৮ শতাংশের বেশি নারী, তবে খুব অল্প সংখ্যক পুরুষও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। তথ্য বলছে, দেশে দৈনিক ৩৫ জন নারীর দেহে স্তন ক্যান্সার নির্ণয় হয়। একইসঙ্গে দেশে প্রতিদিন এই ব্রেস্ট ক্যান্সারে ১৯ জন নারীর মৃত্যু হয়।

ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে বাঁচতে চিকিৎসকরা বলছে, নিয়মিত ব্যায়াম, ব্রেস্ট ফিডিং, ধূমপান পরিহার, স্বাস্থ্যকম খাবার গ্রহন, অ্যালকোহল সীমিতকরণসহ নানা মিয়মতান্ত্রিক জীবন-যাপন জরুরি।

এবি

Link copied!