ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

পদ্মা সেতু : স্বপ্ন বাস্তবায়নের উৎসব

শিবু দাশ সুমিত

শিবু দাশ সুমিত

জুন ২৪, ২০২২, ০১:৪১ এএম

পদ্মা সেতু : স্বপ্ন বাস্তবায়নের উৎসব

লাল-সবুজের এই দেশটি সব বাধা অতিক্রম করে আকাশসম উচ্চতাকে জয় করবে, অলঙ্ঘনীয় সব সূচককে স্পর্শ করবে, অর্থনীতিতে গতিশীলতা আসবে  এবং বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে আত্মমর্যাদাশীল এক বিস্ময়কর জাতি হিসেবে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে— এই স্বপ্ন সম্ভবত প্রত্যেক বাঙালিই দেখেন। ভৌগোলিক কারণেই বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ বিধায় এখানে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নদ-নদী। এই নদীগুলো একদিকে যেমন আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমির রূপ দিয়েছে, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগকে করেছে বিচ্ছিন্ন। 

পৃথিবীর উত্তাল বা খরস্রোতা নদীগুলোর মধ্যে পদ্মা অন্যতম। জলপ্রবাহের দিক থেকে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজনের পর এই নদীটি দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। পূর্বে এমন উত্তাল নদীর ওপর আর কোনো সেতু নির্মিত হয়নি। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে  দক্ষিণবঙ্গের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ নিল। এই সেতু চালু হলে পুরো দেশের সাথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসমূহের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি ঘটবে। 

একসময়ের অবহেলিত ও যোগাযোগবিচ্ছিন্ন জেলাগুলোতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত হবে, যা আমাদের জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্পসমূহের মধ্যে একটি পদ্মা সেতু। এই সেতুর নির্মাণ নিয়ে কম নাটকীয়তা হয়নি। সিনেমা বানালে বেশ উপভোগ্য থ্রিলারই হবে। বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা পদ্মা সেতু নির্মাণে ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণচুক্তি কোনো এক অজানা কারণে ঘুষ ও দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে প্রত্যাহার করে নেয়। 

পরবর্তীতে অবশ্য কানাডার আদালত জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোনো দুর্নীতি হয়নি এবং সেজন্য কানাডার মন্ট্রিলভিত্তিক প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান এসএনসি-লাভালিনের সাবেক তিন কর্মকর্তাকে নির্দোষ রায় দিয়ে খালাসও দেন ওই আদালত। এই সেতু কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি, সেটি এ অঞ্চলের মানুষ জানে। বৃষ্টি-বাদলের দিনে কিংবা ঈদের সময় সেই দুর্ভোগ আরও কয়েকগুণ বেড়ে যেত। বছরের পর বছর দক্ষিণবঙ্গের মানুষকে যে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল, তা থেকে পরিত্রাণের মতো সুখস্মৃতি আর হতে পারে না। 
একনজরে পদ্মা সেতু
*  দ্বিতলবিশিষ্ট পদ্মা সেতুর এক প্রান্তে আছে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া আর অপর প্রান্তে আছে শরীয়তপুরের জাজিরা।
* এটি মোট ছয় লেনের সেতু হলেও পদ্মা সেতুতে গাড়ির লেন থাকবে একেক পাশে দুটি করে এবং একটি থাকবে ব্রেকডাউন লেন।
* সেতুর ওপরে গাড়ি এবং নিচে চলবে ট্রেন।
* ভূমিকম্প থেকে পদ্মা সেতুকে ঠেকাতে ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বেয়ারিং ব্যবহার করা হয়েছে, যার সক্ষমতা ১০ হাজার টন— যা রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও টিকিয়ে রাখবে পদ্মা সেতুকে। 
* নদীশাসনে চীনের সিনো হাইড্রো কর্পোরেশনের সাথে ১১০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়েছে। এর আগে নদীশাসনে এককভাবে এত বড় দরপত্র বিশ্বে আর হয়নি।
* সেতুর নিচের পিলারগুলোকে ১৫০ মিটার দূরে দূরে লাগানো হয়েছে, যাতে নৌযানগুলো অনায়াসে চলাচল করতে পারে এবং জলপ্রবাহ যাতে ঠিক থাকে। 
* পদ্মা সেতু তৈরিতে মিহি মাইক্রোফাইন্ট সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে, যা সাধারণত পূর্বে কোনো সেতুতে ব্যবহার করা হয়নি এবং এটি অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা হয়েছে। 
* পদ্মা সেতুর পাইল লোড ৮২০০ টন,  একেকটি পিলারের ওজন ৫০ হাজার টনের কাছাকাছি। এ সেতুতে যেসব পাথর ব্যবহার করা হয়েছে, তার একেকটির ওজন এক টন। এসব পাথর ‘পাকুর পাথর’ নামে পরিচিত, যা ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্য থেকে আমদানি করা হয়েছে। পদ্মায় পাথরের স্তর মিলেছে ১০ কিমি গভীরে। পূর্বে বিশ্বের অন্যান্য নদীর ওপর যেসব সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, কোনোটিরই পাথরের স্তর এত নিচে নয়। এ কারণেই ৪০০ মিটার গভীরে পাইল নিয়ে যেতে হয়েছে। 

একসময় যে দেশটিকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ অভিধায় বিশেষায়িত করা হয়েছিল, সেই দেশে অবস্থিত বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা চুক্তি বাতিল হবার পর সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে বিভিন্ন বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পদ্মা সেতু নির্মাণ অবশ্যই দেশের জন্য এক অকল্পনীয় গৌরবই বটে! পদ্মা সেতু নির্মাণে ‘মানুষের মাথা লাগবে’ বলেও গুজব ছড়ানো হয়েছিল একটা সময়। 

সব কল্পিত-অকল্পিত গুজব আর চক্রান্তের জাল ছিন্ন করে স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান হয়েছে— যা আমাদের আত্মগৌরবের, সক্ষমতার ও দৃঢ় মানসিকতার জায়গাটিকে মজবুত ভিত্তি দিয়েছে। প্রথম যেদিন এ সেতুতে আলো জ্বলে উঠেছিল, সেদিন এ দেশের কোটি মানুষের হূদয় থেকে উৎসারিত হয়েছিল আনন্দের বন্যা। পুরো জাতি অপেক্ষা করছে একটি বিশেষ দিনের জন্য। সেটি জুনের ‘২৫ তারিখ’। অপেক্ষার প্রহর গুনছে এক অনন্য গৌরবের অংশীদার হতে। 

এই সেতুর সামাজিক, অর্থনৈতিক গুরুত্বের পাশাপাশি রয়েছে আন্তর্জাতিক গুরুত্বও। কানেক্টিভিটির এই যুগে যে কোনো দেশের আঞ্চলিক তথা জাতীয় উন্নয়নে বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে একটি উন্নত যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলা অনস্বীকার্য। ৯.৮৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতুতে রয়েছে ৩.৬৮ কিলোমিটার উড়ালপথ, যা উভয় দিকে বিস্তৃত— যেখানে মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। 

পদ্মা সেতু নির্মাণের পূর্বে জাইকার করা সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে আভাস দেয়া হয় যে, সেতুটি হলে সমগ্র দেশের জিডিপি বাড়বে  ১.২ শতাংশ। 
কর্মসংস্থান ঘটবে অসংখ্য মানুষের। সেতু চালু হবার সাথে সাথে যাতায়াত ব্যবস্থা ও পণ্য পরিবহনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন দৃশ্যমান হবে। খুব সহজ করে বললে বলা যায়— দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদিত কৃষিজ ও মৎস্যপণ্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে খুব দ্রুত রাজধানী বা দেশের অন্য অঞ্চলে পৌঁছে যাবে। 

এতে করে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষক ও মৎস্যখামারিদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। সেতুকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলে শিল্প, কল-কারখানা ও পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটবে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে অবদান রাখবে। এতে করে রাজধানীমুখী মানুষের চাপ কিছুটা কমবে। যারা পূর্বে জীবিকার সন্ধানে ঢাকামুখী হতেন, তারা নিজ নিজ অঞ্চলে কাজ খুঁজে নিতে পারবেন। খুলনা বিভাগের খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর; ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও রাজবাড়ী এবং বরিশাল বিভাগের বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরসহ মোট ২১টি জেলা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাভবান হবে। 

এসব অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে ধান ও মাছ চাষ হয়। সুন্দরবনের নিকটবর্তী বিধায় খুলনা ও বাগেরহাটে প্রচুর পরিমাণে মাছ চাষ হয়। আবার সবজি ও ফুলের জন্য বিখ্যাত যশোর, ধান ও পানের জন্য খ্যাতি আছে বরিশালের। যশোরের গদখালীর ফুল রাজধানীসহ বিদেশেও রপ্তানি হয় এবং দেশের সবজি চাহিদার বড় একটি অংশই আসে যশোর থেকে। পূর্বে পণ্যবাহী পরিবহনগুলোর গড়ে ১২-১৫ ঘণ্টা লেগে যেত ফেরি পার হতে, যেটি এখন মাত্র ৬-১০ মিনিটে নেমে আসবে। দক্ষিণাঞ্চলে রয়েছে সুন্দরবন, কুয়াকাটা, ষাটগম্বুজ মসজিদের মতো পর্যটন এলাকা, যা এতদিন যাতায়াত ব্যবস্থার অনুপযোগিতার কারণে মানুষের কাছে অনাগ্রহের বিষয় ছিল। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে এসব পর্যটনকেন্দ্রে এখন খুব সহজেই ভ্রমণ করা যাবে। এছাড়া পদ্মার চরগুলোতে নতুন নতুন রিসোর্ট ও ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠবে। 

তারায় তারায় আলোকিত আমার স্বদেশ  পদ্মা সেতু শুধুমাত্র একটি সেতুই নয়, এটি দৃশ্যমান হবার মাধ্যমে আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, জয় হয়েছে জাতির বিশ্বাসের, সার্থক প্রতিফলন হয়েছে আমাদের আস্থার। বিশ্বের সেরা প্রকৌশলবিদ্যা আর আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন দ্বিস্তরবিশিষ্ট সেতুটি কোটি মানুষের হূদয়মাখা আবেগের নাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন, সেই স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন। ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

লেখক : সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট , জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, নড়াইল

Link copied!