Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ব্লিনকেন-মোমেন বৈঠক?

জুবেদা চৌধুরী

জুবেদা চৌধুরী

এপ্রিল ১২, ২০২৩, ১০:৪৪ এএম


যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ব্লিনকেন-মোমেন বৈঠক?

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের মধ্যে ওয়াশিংটন বৈঠক তিনটি কারণে কার্যকর ছিল: প্রথমত, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এটি টানা তৃতীয় বৈঠক ছিল।

দ্বিতীয়ত, ভূ-রাজনৈতিক ও কৌশলগত গুরুত্বের ওপর প্রভাব ফেলে এমন সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো অনুসন্ধান করা এবং তৃতীয় ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো সন্দেহ দূর করার জন্য চলমান কার্যক্রমগুলোকে অতিক্রম করার আরেকটি সুযোগ প্রদান করেছে।

উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় গর্বিত অংশীদারিত্বের কারণে আগামী ৫০ বছর ও তার ওপরে ঢাকা-ওয়াশিংটন অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শুভেচ্ছা বার্তার এক সপ্তাহ আগে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রশ্নও সামনে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন জয় বাংলাকে আমাদের জাতীয় আহ্বান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ডি গলের ক্লারিয়ন আহ্বানের মতো - ভিভা লা ফ্রান্সের আহ্বান যা মিত্র বাহিনীকে নাৎসিদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে উৎসাহিত করেছিল।

বৈঠকে বাংলাদেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্র সম্পর্ক জোরদারের অঙ্গীকারের ওপর গুরুত্বারোপ করে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিকে ফিরিয়ে আনা এবং র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে এবং পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করে।

নিরাপত্তা, সহযোগিতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সমতা এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার বিষয়গুলি বন্ধুত্বপূর্ণ উপায়ে আলোচনা করা হয়েছিল। এছাড়া জলবায়ু সংকট মোকাবেলা, রোহিঙ্গাদের চাহিদা পূরণ, মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন সহজতর করা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদারে তাদের যৌথ প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। দুই বন্ধুর মতো কথোপকথনের পুরো পরিসরটি ছিল একটি সাধারণ পদ্ধতিতে: এটি শেখ হাসিনার সরকারের সাফল্যের গল্প যা জনগণের শক্তি, জনগণের ইচ্ছায় বিশ্বাস করে।

একইভাবে গত বছরের ৪ এপ্রিল বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ব্লিনকেন ও মোমেন বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে তারা সম্পর্কের ‘অসাধারণ অর্থনৈতিক সম্ভাবনা’ নিয়ে আলোচনা করেন এবং গত অর্ধশতাব্দী ধরে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন- যার মধ্যে রয়েছে প্রাণবন্ত ফুলব্রাইট বিনিময়ের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক।

এই সিরিজ বৈঠক ও সহযোগিতাকে আমি যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করতে ইউএসজি‍‍`র একটি ইতিবাচক মনোভাব বলে মনে করি। এর আগে বাংলাদেশের বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু যা বলেছেন, তা ওয়াশিংটন ডিসির উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান ফরেন অ্যাফেয়ার্স জার্নাল অন বাংলাদেশ-এ যা পর্যবেক্ষণ করেছেন তার অনেকটাই প্রতিফলিত হয়েছে।

আওয়ামী লীগ একটি ‘উল্লেখযোগ্য স্তরের সমর্থন’ ধরে রেখেছে এবং বর্তমান চ্যালেঞ্জগুেলোর মধ্যে সাফল্যের গল্প তুলে ধরার জন্য বাংলাদেশের সরকারের অনেক কিছু রয়েছে। কুগেলম্যান আরও বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ একটি আঞ্চলিক সাফল্যের গল্প। এটি একটি বৈশ্বিক সাফল্যের গল্প। আগামী জাতীয় নির্বাচন ‘সংবিধান অনুযায়ী’ অনুষ্ঠিত হবে।

ডোনাল্ড লু বলেন, ‍‍`একটি অসাধারণ অগ্রগতি হয়েছে এবং আমি এখানে বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্ব জোরদার করতে এসেছি যখন বিশ্ব শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ একটি অভিন্ন ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছে, উভয়ই স্বাধীনতার জন্য কঠিন লড়াই সহ্য করেছে, গণতন্ত্রের প্রতি আন্তরিক অঙ্গীকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। উভয় দেশই বুঝতে পেরেছে যে গণতন্ত্র একটি চলমান প্রক্রিয়া, স্থিতিশীল ফলাফল নয়। তারা একটি শক্তিশালী, সুরক্ষিত এবং সমৃদ্ধ গণতন্ত্র, একটি দায়িত্বশীল বিচার বিভাগ এবং সবার জন্য মৌলিক মানবাধিকারের আকাঙ্ক্ষা ভাগ করে নেয়। দুটি গণতন্ত্রের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়; এগুলো সাময়িক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা অনেক অগ্রগতি অর্জন করেছি, কিন্তু তারপরও আমাদের ‍‍`মাইল পথ পাড়ি দিতে হবে‍‍`।

আমরা অন্ধকার দেখতে পাই না; আমরা কাজ করছি, খুব দূরের ভবিষ্যতে বিশ্বের ৩১তম অর্থনৈতিক শক্তি হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে আমাদের জিডিপি মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, ফিনল্যান্ড এবং নরওয়ের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশ এগোচ্ছে। ভুলে গেলে চলবে না যে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী। পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে এবং কেবল দক্ষিণ এশিয়াতেই নয়, ইন্দো-প্যাসিফিক এবং সমগ্র বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

এআরএস

Link copied!