ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

শিশুর কল্যাণে বাস্তবভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ

মো. তানজিমুল ইসলাম

মো. তানজিমুল ইসলাম

এপ্রিল ২৯, ২০২৩, ০৭:২১ পিএম

শিশুর কল্যাণে বাস্তবভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ

বর্তমান ২০২২-২৩ এর বাজেটে শিশু সংরক্ষণ মোট কেন্দ্রীয় বাজেটের ০.০৪ শতাংশই পেয়েছে, তবে শিশু সংরক্ষণের জন্য মোট বরাদ্দ হলো ১,৫৭৪ কোটি টাকা। আগামীতে নিশ্চয়ই শিশু কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে বাজেট বরাদ্দ অব্যাহত বলে আমজনতা আশা করতেই পারে। তবেই হয়তো শিশুর প্রত্যাশিত উন্নয়ন সম্ভব। এভাবেই মানব সম্পদ হয়ে শিশুদের হাত ধরে রচিত হবে এক শান্তিকামী সোনার বাংলাদেশ। এটি সুস্পষ্ট যে, বাজেট সম্পর্কে সচেতন হলে জনগণকে তার অধিকারে সচেতন হতে হবে। এ জন্য প্রত্যেক নাগরিককে তথ্য সমৃদ্ধ হতে হবে

 প্রতিবছরের মতো এবারও (২০২৩-২৪) অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও সরকারের পরিচালনা খাতে বড় অংক ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরে প্রণয়ন হচ্ছে আগামী (২০২৩-২৪) অর্থবছরের বাজেট। অর্থ বিভাগের হিসেবে চার লাখ ৯৬ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা দাঁড়াবে এ খাতের ব্যয়। যা চলতি বাজেটের তুলনায় প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা বেশি। বিশ্বজুড়ে করোনার ঊর্ধ্বমুখী চিত্রের রেশ কাটতে না কাটতেই রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যু নতুন করে ভোগাচ্ছে। বাংলাদেশের মতো নামমাত্র উন্নয়নশীল দেশটিতেও লাগামহীন অর্থনীতির কুপ্রভাব পড়েছে! অর্থনীতিবিদ, ব্যক্তিগত করদাতা ও কর্পোরেট সেক্টর বাংলাদেশের আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলোর সম্ভাবনা জোগালেও এ ক্ষেত্রে সরকারের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। এ দেশের সব নাগরিক তথা প্রকৃত করদাতাদের প্রত্যাশা আসলে কী এবং কারা কর ফাঁকি দিতে সোচ্চার, সরকারের পক্ষে এ তথ্য জানা কী খুব কঠিন কিছু? জাতীয় বাজেটে শুধু পুঁজিবাদের স্বার্থ বিবেচনা করা উচিত, নাকি আমজনতার বিষয়ে নজর দেয়া উচিত- সেটি সরকারের নিশ্চয়ই অজানা নয়। আসন্ন বাজেট নিয়ে যে বিষয়ের ওপর নজর দেয়া উচিত, এতে বিশেষজ্ঞদের মতামত একবারে সুস্পষ্ট! আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে পার পেয়ে যাওয়া কর ফাঁকি দেয়া বিত্তবানদের ব্যাপারে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন খুবই জরুরি। এর পাশাপাশি বিদেশি দাতা সংস্থায় কর্মরত স্বল্পমেয়াদি বেতনভুক্ত কর্মীদের কর ছাড় দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে। করোনা মহামারি-পরবর্তী বাংলাদেশেও যে বিশ্ববাজারের প্রভাব পড়েছে, এদিকে সরকারের খেয়াল রাখতে হবে। জাতীয় বাজেটের আগে আমজনতার স্বার্থে যেগুলো খুবই বিবেচ্য বিষয়, তা হলো অধিকাংশই বিশ্বাস করেন- আসন্ন বাজেটে ব্যক্তিগত কর আরোপের জন্য সবচেয়ে বেশি সংস্কার প্রয়োজন। জাতীয় বাজেট প্রণয়নের আগে সরকারের প্রয়োজন সম্পদশালীদের প্রতি বিশেষ নজরদারি করা। সরকারের প্রয়োজন স্টক মার্কেটে খেয়াল রাখা। নানাবিধ কারণে চরম সংকটে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিভাগ। এই পরিস্থিতিতে সরকারের প্রয়োজন স্বাস্থ্য ও শিক্ষাবিমার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা। এ দেশের ব্যাংকিং সেক্টরের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা খুব বেশি প্রয়োজন। এ ছাড়া সরকারের প্রয়োজন কল-কারখানা ও গ্রামীণ এলাকার ওপর নজর দেয়া। এখানেই শেষ নয়; এ দেশের শিশুদের উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। অতীতের মতো আগামীতেও নিশ্চয়ই ‘বর্তমান আর্থসামাজিক পরিস্থিতি, জাতীয় বাজেট ও জনসাধারণের প্রত্যাশা’ বিষয়ে অনেক আলোচনা হবে। বাজেট সংক্রান্ত অনেক জ্ঞান-গর্ভ আলোচনার ঝড় উঠবে। ফলাও করে পত্রিকায় অনেক আশা-উদ্দীপনার কথা প্রকাশিত হবে। অনেকে আবার জিডিপিকে নানাভাবে বিশ্লেষণে মত্ত হবেন, যা অতি সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য কতটুকু জরুরি সেটিই ভাবার বিষয়। জিডিপি লক্ষ্য করে বাজেট না করে, বরং কর্মসংস্থান ভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ করা উচিত। সরকারের উচিত শিশুদের জন্য পৃথক অধিদপ্তরের পাশাপাশি শিশুর সার্বিক উন্নয়নে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ রাখা। স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে শিশুর সর্বোত্তম স্বার্থ বিবেচনামূলক কর্মসূচি যেমন এ মুহূর্তে বাল্যবিয়ে ও ঝরেপড়া রোধে কাজ করা উচিত! বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাজেট বৈষম্য বিষয়ে ভাবা উচিত খুব জোরেশোরে। শিক্ষার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা উচিত, বিশেষ করে আদিবাসীদের জন্য শিক্ষাক্ষেত্রে ঋণের ব্যবস্থা করা।

এ মুহূর্তে শিক্ষার উন্নয়ন ও শিশুকল্যাণ বিষয়ে বাজেট বরাদ্দের কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষা ও শিশুর উন্নয়ন খাতে কেবল বাজেট বরাদ্দ করলেই হবে না বরং এর বাস্তবায়ন বেশি জরুরি। সরকার ঘোষিত একটি সমন্বিত জাতীয় বাজেট বরাদ্দের কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তব চিত্র অনেক বিভিষীকাময়! বাজেট বরাদ্দের হার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিগত অর্থবছরের তুলনায় শিক্ষা ও শিশু উন্নয়ন খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ালেও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে আমরা এসব বাস্তবায়নে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ি প্রায়ই। দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমরা এখনো জানি না কীভাবে শিশু শ্রম ও শিশু বিয়ে বন্ধ করব? কেননা এর সঙ্গে অনেক বিষয় খুব সম্পর্কযুক্ত। গড়ের বাজেটে গড়ের আনন্দে থাকার সময় এখন আমাদের নেই! কারণ আমাদের মনে রাখা উচিত, ‘নো ওয়ান লেট বিহাইন্ড!’ সরকার একত্রে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কথা বললেও বাস্তবে বেশির ভাগ অধিদপ্তরই হলো ‘মহিলা বিষয়ক’। তাই শিশুর উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে শিশুর জন্য নতুন অধিদপ্তরের পাশাপাশি পৃথক বাজেট লাইন থাকা অত্যাবশ্যকীয়!

এ ছাড়া জাতীয় বাজেটে শিশুদের জন্য বাজেটের পরিমাণ বাড়ানোর চেয়েও সংশ্লিষ্ট খাতে খরচ করার সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড . শামসুল আলম। গত বছর জাতীয় প্রেস ক্লাবে তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া ভিআইপি লাউঞ্জে চিলড্রেন অ্যাফেয়ার্স জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক (সিএজেএন) ও আরবান প্রোগ্রাম, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বাজেটপরবর্তী ‘শিশুর জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ জরুরি’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এই মত দেন। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার শিশু বাজেট তৈরি শুরু করেছিল। আমি অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনা মন্ত্রী এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি তুলে ধরব। শিশুদের সার্বিক কল্যাণে অবশ্যই পৃথক বাজেট ঘোষণা করা উচিত। সেক্ষেত্রে আমরা ধরেই নিতে পারি যে, আগামী অর্থবছরে এর একটি সুরাহা ঘটবে নিশ্চয়ই।

সমপ্রতি বাজেট পর্যালোচনায় দেখা যায়, নানা জটিলতার কারণে বরাদ্দকৃত বাজেট খরচ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে! অনেক সময় ২০-২৩ শতাংশ খরচ করা হয় না। সুতরাং শিশুদের কল্যাণে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি প্রয়োজন এর সঠিক বাস্তবায়ন। আমরা সবাই জানি, সরকার প্রতি বছর সংশোধিত বাজেট করে থাকে। যা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। বরাদ্দ অনুযায়ী বাস্তবায়ন প্রয়োজন। পত্রিকার পাতা খুললে কিংবা প্রচার মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই, শিশুদের নিয়ে অনেক অনেক কাজ করছে সরকার। তাছাড়া এদেশের প্রধানমন্ত্রীও শিশুবান্ধব। তিনি শিশুদের নিয়ে ভাবেন এবং কাজ করতে বদ্ধপরিকর। অথচ বাস্তবতা হলো— আমাদের শিশুদের নিয়ে পৃথক কোনো মন্ত্রণালয় কিংবা অধিদপ্তর নেই! একটি দেশের তথা জাতির উন্নয়নের পূর্বশর্তই হলো; ওই দেশের শিশুদের সার্বিক উন্নয়ন। শুধু পড়ালেখা তথা পুঁথিগত বিদ্যা দিয়ে জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। শিশুদের সার্বিক বিকাশের জন্য শারীরিক, মানসিক, আবেগিক ও সামাজিক বিকাশের গুরুত্ব অপরিসীম। এ জন্য বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এত এত উন্নয়নের পরও মনে  মনে হতাশ হতে হয়, কেন শিশুদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় হবে না? কেন শিশুদের উন্নয়নের বেলায় বাজেট প্রণেতাদের এত গরিমসি? এ ছাড়াও এখন বৈষম্য দেখা যাচ্ছে, একটা শ্রেণি ধনী হচ্ছে, একটা শ্রেণি অসহায়। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন জাগে, আমরা শিশুদের জন্য কী করছি? আমাদের শিশুদের সুকুমারবৃত্তি নিয়ে কাজ করতে হবে।

যে মন্ত্রণালয়গুলো শিশুদের নিয়ে কাজ করে, চলতি অর্থবছরে সেখানে বাজেটের পরিমাণ বাড়েনি। অনেক ক্ষেত্রে বাজেট নিয়ে প্রতি বছর ফেরত যায়। এর জন্য বাজেটে খরচ করার সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু বাজেট প্রণয়ন করতে হলে সর্বাগ্রে সব মন্ত্রণালয়ের শিশুকল্যাণ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমকে বিবেচনায় নিতে হবে। দেশের সামগ্রিক বাজেটে পৃথকভাবে শিশুদের কল্যাণে উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয়ের জন্য বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে শিশু বাজেটের অধীনে। বর্তমান ২০২২-২৩ এর বাজেটে শিশু সংরক্ষণ মোট কেন্দ্রীয় বাজেটের ০.০৪ শতাংশই পেয়েছে, তবে শিশু সংরক্ষণের জন্য মোট বরাদ্দ হলো ১,৫৭৪ কোটি টাকা। আগামীতে নিশ্চয়ই শিশু কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে বাজেট বরাদ্দ অব্যাহত বলে আমজনতা আশা করতেই পারে। তবেই হয়তো শিশুর প্রত্যাশিত উন্নয়ন সম্ভব। এভাবেই মানব সম্পদ হয়ে শিশুদের হাত ধরে রচিত হবে এক শান্তিকামী সোনার বাংলাদেশ। এটি সুস্পষ্ট যে, বাজেট সম্পর্কে সচেতন হলে জনগণকে তার অধিকারে সচেতন হতে হবে। এ জন্য প্রত্যেক নাগরিককে তথ্য সমৃদ্ধ হতে হবে। একই সঙ্গে পিছিয়ে পড়া মানুষের কণ্ঠস্বর সুদৃঢ় করতে চাইলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন নাগরিক সমাজের কণ্ঠস্বর সুদৃঢ় করা। তবেই হয়তো জাতীয় বাজেটের সুফল পাবে ‘আমজনতা’ নামক এ দেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের কোমলমতি সন্তানরা! আর এসবের জন্য সবার আগে ‘শিশু কল্যাণে বাস্তবভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ চাই’।

 লেখক : কো-অর্ডিনেটর, অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড সোশ্যাল একাউন্টিবিলিটি ওয়ার্ল্ড ভিশন, বাংলাদেশ।

ইমেইল:  aronnyok@gmail.com

Link copied!