Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

কেমন চলছে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: একটি সামাজিক গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ

শামসুল আরেফীন

শামসুল আরেফীন

ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৪, ১১:৪৮ এএম


কেমন চলছে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা: একটি সামাজিক গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে এবং করোনা মহামারী ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরী কমিশনের (ইউজিসি) পরামর্শে এবং নির্দেশনায় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবির) বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে ২২টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে দেশে প্রথমবারের মত সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা (জিএসটি) অনুষ্ঠিত হয়।

এরপরে করোনা মহামারীর প্রকোপ কমতে শুরু করলে ও এই পরীক্ষা পদ্ধতি এখনও বহাল রয়েছে। এই পরীক্ষা-পদ্ধতির ত্রুটি-বিচ্যুতি, কার্যকারীতা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সুবিধা-অসুবিধা, স্বাতন্ত্রতা ইত্যাদি বিষয়াদি আমলে না নিয়ে দেশে এ বছর ও চতুর্থবারের মত এই পরীক্ষাটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তিনটি গুচ্ছে বিভক্ত হয়ে সর্বমোট ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এতে অংশগ্রহণ করছে বলে এখন পর্যন্ত আমরা জানতে পেরেছি। এরকম অবস্থায় সমকাল গুচ্ছ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ এনে ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ একটি প্রতিবেদন ছেপেছে। সমকালের ওই প্রতিবেদন থেকে এই পরীক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট কোর কমিটির কারো কারো আর্থিক লেনদেনের অনিয়মের কথা উঠে এসেছে যেটি নতুন করে এই পরীক্ষা পদ্ধতি এবং এর সাথে সংশ্লিষ্টদের যোগ্যতা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। এরকম পরিস্থিতিতে এ লেখাটি আমরা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছি।

তবে গুচ্ছ পরীক্ষায় কোন ধরনের অনিয়ম ও ব্যত্যয় ঘটে থাকলে সেগুলোর কারণ অনুসন্ধান করা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। প্রচলিত অর্থে সংবাদপত্রের লেখা বলতে যা বোঝায় তেমনটি ও নয় এ লেখা। বরঞ্চ সামাজিক বিজ্ঞানের গবেষণা পদ্ধতি অনুসরণ করে মাঠ থেকে প্রাপ্ত তথ্য সংগ্রহের ভিত্তিতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদেরকে অভিজ্ঞতা জানার মধ্যে দিয়ে এ লেখাটিতে আমরা কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে চেষ্টা করবো?

আরো সহজ করে বললে বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যে কারণগুলো দেখিয়ে  ইউজিসি এ পরীক্ষা পদ্ধতি মেনে নিতে রাজি করাল সেই সমস্যাগুলোই বা কতটুকু উত্তরণ করা গেল, কিংবা কোথায় কোথায় এখনো উন্নতির দরকার বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছে- সেই প্রশ্নগুলোর উত্তর ও খুঁজে দেখবো।

উপরেউল্লেখিত  প্রশ্নগুলোকে সামনে রেখেই আমরা তিনজন সহকর্মী এবং গবেষক  ২০২২ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (২০২১-২০২২ অর্থবছরে বিমক  কোড নং- ৩২৫৭১০৩ অনুযায়ী ) “A Critical Evaluation of the GST-Universities Integrated Admission System (2020-2021) in Bangladeshশিরোনামে একটি গবেষণা প্রস্তাব জমা দেই। পরবর্তীতে আমাদের এই গবেষণার প্রস্তাবটি রিভিউ বোর্ডে যাচাই বাছাই শেষে জুলাই মাসে চুড়ান্ত অনুমোদন পায়। সেই ধারাবাহিকতায় একই বছরের নভেম্বর মাস থেকে আমরা তথ্য (ডাটা) সংগ্রহ করা শুরু করি যেটি ২০২৩ সালের এপ্রিলে এসে শেষ হয়।

এই গবেষণাটি শুরু করার সময় থেকেই আমরা বিভিন্ন স্তরে সামাজিক বিজ্ঞানের প্রচলিত গুণগত ( Qualitative) এবং পরিমাণগত (Quantitative) পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করেই গবেষণাটি করতে চেষ্টা করেছি। আমরা গবেষণার জন্য উপযুক্ত ফিল্ড (Field) হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে বাছাই করি। দুটো বিষয় মাথায় রেখেই আমরা এই দুটি সাইট (Site) নির্বাচন করি।

প্রথমত- সময় এবং বাজেটের দিকে খেয়াল রেখে আমাদের কাছে মনে হয়েছে এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্য এবং উপাত্ত সংগ্রহ করা তুলনামূলক ভাবে সহজ হবে।

দ্বিতীয়ত, একটি বিভাগীয় শহর এবং একটি জেলা শহরের বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করার কারণে সামগ্রিক চিত্র বোঝা সহজতর হবে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে যেসমস্ত শিক্ষার্থীরা গুচ্ছ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এ দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হয়েছে তাদেরকে গবেষণার বিষয় (Respondents) হিসেবে নির্ধারণ করা।

সেটি করতে গিয়ে দৈব চয়ন (Random sampling) পদ্ধতি ব্যবহার করে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া উক্ত দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭৩২ জন শিক্ষার্থীদের (Study population) মধ্য থেকে সামপ্লিং ইকুয়েশন ব্যবহার (considering Marginal error 5% and Confidence Interval 95%) করে আমরা ৩৩৭ জন শিক্ষার্থীকে নমুনা (Sample) হিসেবে জরিপের (Survey) জন্য বাছাই করি।

তাছাড়া উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যারা গুচ্ছ পরীক্ষার সঙ্গে জড়িত ছিল এরকম শিক্ষকদের মধ্য থেকে ৬ জন শিক্ষককে তাদের সম্মতির ভিত্তিতে সাক্ষাৎকার (Interview) গ্রহণ করি। এই পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ করতে মাঠ পর্যায়ে আরো  পাঁচ জন গবেষণা সহকারী (Research Assistant)  যুক্ত থেকেছে। অধিকিন্তু, আমরা চেষ্টা করেছি ডাটা সংগ্রহের সকল পর্যায়ে গবেষণার মূল্যবোধ (ethics) অনুসরণ করে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনা সংগ্রহ করতে।

তথাপি, নমুনা সংগ্রহ শেষে তথ্যে অসম্পূর্ণতা থাকায় ১২টি নমুনা জরিপ চূড়ান্ত ফলাফল বিশ্লেষণ থেকে বাদ রেখেছি। ফলে এই গবেষণার ফলাফলটি মূলত ৩২৪ জন শিক্ষার্থী (বশেমুরবিপ্রবিঃ ৫৫ শতাংশ এবং খুবিঃ ৪৫ শতাংশ) এবং পরীক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত ৬ জন শিক্ষকের  দেওয়া তথ্য এবং উপাত্তের (Data) উপরে নির্ভর করে প্রস্তুত করা হয়েছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারীকের মধ্যে যথাক্রমে ৫২ এবং ৪৮ শতাংশ উত্তরদাতা ছিল পুরুষ এবং নারী শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীদের অধিকাংশের বসবাস (প্রায় ৫৩ শতাংশ) গ্রামে এবং বাদবাকি ৪৭ শতাংশ শহরাঞ্চলে বসবাস করে। তাছাড়া জরিপে অংশগ্রহণকারীদের সামাজিক-জনমিতি  বৈশিস্ট্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীদের পারিবারিক মাসিক আয় ১০ হাজার-২৫ হাজার টাকার মধ্যে।

অন্যদিকে প্রায় ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থীদের পারিবারিক মাসিক আয় ১০ হাজার টাকা নিচে যা বাংলাদেশের মানুষের গড় মাথাপিচু আয় থেকে অনেক কম।

পরিমাণগত গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায়, প্রায় ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করে গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতি কার্যকরী ছিল। যদিও এর বিপরীতে প্রায় ৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন এই পরীক্ষা পদ্ধতি ততটা কার্যকরী ছিল না এবং বাদবাকি ২৮ শতাংশ উত্তরদাতা এই প্রশ্নের উত্তরে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি।

অন্যদিকে প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী যদিও মনে করেন আগের পরীক্ষা পদ্ধতির ব্যয়ভার বেশি ছিল, তথাপি  উত্তরদাতাদের মধ্য থেকে প্রায় ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন আগের পরীক্ষা পদ্ধতি বেশি কার্যকরী ছিল। কেন এরকম মিশ্র অভিজ্ঞতা হল সেটির উত্তর পাওয়া যায় পরীক্ষার্থীদেরকে করা সম্পূরক প্রশ্ন বিশেষকরে আবেদন ফি, পরীক্ষা কেন্দ্রের অভিজ্ঞতা, পরীক্ষার খরচ, প্রশ্নপত্রের মান, ভর্তি সংক্রান্ত  অভিজ্ঞতা, এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইগ্রেশন ইত্যাদি বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞতা জানার মধ্য দিয়ে।

উত্তরদাতাদের মধ্যে থেকে প্রায় ৬৯ শতাংশ মনে করেন গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা তাদের সময় বাঁচিয়েছে। তাছাড়া ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন এই পরীক্ষা পদ্ধতি তাদের খরচ কমিয়েছে। অন্যদিকে প্রায় কাছাকাছি (৩৮ শতাংশ) সংখ্যক শিক্ষার্থী মনে করেন এই পরীক্ষা পদ্ধতির কারণে আপাত দৃষ্টিতে খুব বেশি খরচ কমে নি। গুণগত গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে আমরা দেখি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন  সম্মানিত শিক্ষক ও এমনটাই মনে করেন।

তার মতে, ‘যেসমস্ত অভিভাবকেরা অনেক দূর থেকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে এসেছে তাদের অনেকের সাথেই কথা বলেছি। তারা মনে করেন এই পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করার কারণে তাদের খরচ এবং দুর্ভোগ দুটোই দ্বিগুণ হয়ে গেছে।’

অন্যদিকে, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন শিক্ষক এই মতামতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ‘এই পরীক্ষা পদ্ধতি চালু হওয়ার কারণে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের মূল্যবান সময় বেঁচে গিয়েছে এবং অভিভাবকদের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে গেছে’। যদিও উক্ত শিক্ষক মনে করেন গুচ্ছ পদ্ধতি ত্রুটিযুক্ত রয়ে গিয়েছে।

জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মতামত যাচাই করে দেখা যায়, প্রায়  ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী গড়ে ৪০০০-৮০০০ টাকার অধিক আবেদন এবং অন্যান্য ফি বাবদ খরচ করেছে। এছাড়া উত্তরদাতাদের মধ্য থেকে শতকরা ৪৫ ভাগ শিক্ষার্থীই আমাদেরকে জানিয়েছেন গুচ্ছ পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হওয়ার পরে একেকজন গড়ে ৫-১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছে। এদের মধ্যে  শতকরা ৪৮ জন শিক্ষার্থীকেই মাইগ্রেশন করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তন করতে হয়েছে এবং ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী আমাদেরকে আরো জানিয়েছেন যে, তারা তাদের পছন্দের বিষয়ে পড়ার সুযোগ পাননি।

গুণগত গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে ও দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মাইগ্রেশন জটিলতা, পছন্দের বিষয় না পাওয়া, ভর্তি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতাসহ নির্ধারিত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু করতে না পারাসহ  বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় পরতে হয়েছে। এই ব্যাপারটি বোঝার জন্য ভর্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত খুবির একজন কো-ফোকাল পয়েন্টের বক্তব্য আমলে নেওয়া যেতে পারে। উক্ত শিক্ষকের ভাষায়,

‘‘গুচ্ছ পদ্ধতির সামগ্রিক অভিজ্ঞতাকে কয়েকটি পর্যায়ে দেখা যায়। যেমন একটি পর্যায় হচ্ছে– পরীক্ষা গ্রহণ, পরীক্ষা গ্রহণ গতানুগতিক। এটি নিয়ে আমাদের সমস্যা হয়নি। কিন্তু সামগ্রিক পরীক্ষা পদ্ধতি এবং পরবর্তীতে ভর্তি প্রক্রিয়া- আমার মনে হচ্ছে এই জায়গাটিতে আমাদের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। যেমন- এবারের চলমান ভর্তি প্রক্রিয়ার কথা যদি আমরা বিবেচনা করি- তাহলে দেখা যাবে যে, ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ, ফলাফল প্রকাশ, এবং তার পরবর্তীতে একটা দীর্ঘ  সময় লেগে গেছে আবেদনপত্র আহবান করা, প্রক্রিয়া করা এবং ভর্তি করা।’’

এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরকে করা উন্মুক্ত প্রশ্নের উত্তর বিশ্লেষণ করে জানা যায় যে, শুধুমাত্র একটি পরীক্ষা দিয়ে ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে বলে তারা সবসময় মানসিক উদ্বেগ এবং চাপ অনুভব করেছেন। বিশেষ করে কোন কারণে যদি কোন শিক্ষার্থী শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে নির্ধারিত দিনে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হতে না পারেন, তবে তার জন্য বিকল্প পরীক্ষা পদ্ধতির ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের চরম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।

পরিমাণগত গবেষণার ফলাফলে ও আমরা দেখি, প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন এই পরীক্ষা পদ্ধতির কারণে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। তবে মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে এই প্রভাব কেমন তা এই গবেষণা থেকে জানা সম্ভব হয়নি।  

পরীক্ষা পদ্ধতির ব্যবস্থাপনা নিয়ে এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে এই গবেষণায় যাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে তারা প্রান্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে কেন্দ্র এবং প্রান্তিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা পর্যবেক্ষণ করেছেন  বলে সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেছেন।

অধিকাংশ শিক্ষকই আমাদেরকে এই মর্মে জানিয়েছেন যে, এই পরীক্ষা আয়োজন করা থেকে শুরু করে, প্রশ্নপত্র তৈরি করা, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সকল পর্যায়েই তাদের কোন অংশীদারিত্ব নেই। অধিকাংশ সিদ্ধান্ত গ্রহণ যেহেতু কোর কমিটি গ্রহণ করেন সেকারণে সাব-কমিটিতে যারা থাকেন তারা এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা অনুভব করেন। এমনকি এই প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয় ও বলেছেন সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ায় তার অংশগ্রহণ খুবই অনুল্লেখ্য। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির আহবায়ক ও আমাদেরকে একই কথা জানান।

তার উচ্চারণেঃ

‘‘ ভর্তি প্রক্রিয়ায় কখন কি করতে হবে সেটা তো আমরা জানি না। কেননা আমরা সিদ্ধান্ত নেই না। কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত আসে তা আমরা অনুসরণ করি। যখন শুধু অনুসরণ করছি তখন তো কন্ট্রিবিউশন করার জায়গা নেই। এ জায়গাগুলোকে ডিভাইস করতে হবে। এটি পুরোপুরি টপ ডাউন আপ্রোসে চলছে। এ থেকে কি করে অলটারনেটিভ ওয়ে বের করা যায় তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। অবশ্য আমাদের ভেবে লাভ নেই। আমাদের কথা কখনো পৌঁছাবে না।’’

 

এরকম অবস্থার প্রেক্ষিতে তাহলে করণীয় কি?

উত্তরদাতাদের মধ্য থেকেই প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী যদিও মনে করেন ইউজিসি এই পরীক্ষা পদ্ধতি আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমানোর চেষ্টা করেছে, তথাপি ৪৭ শতাংশ শিক্ষার্থী মনে করেন গুচ্ছ পদ্ধতির সংস্কার দরকার।  সেজন্য  প্রশ্নপত্রের ধরনে পরিবর্তন ( ৬৯ শতাংশ বলেছেন) আনয়নসহ, শুধুমাত্র লিখিত পরীক্ষার ভিত্তিতে ভর্তির ব্যবস্থা করা (৭৫ শতাংশ মতামত দিয়েছেন), এবং এক ইউনিট থেকে আরেক ইউনিতে ভর্তির ( ৭৪% )  উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

অন্যদিকে অপর একটি সম্পূরক প্রশ্নে ৪৩ শতাংশ শিক্ষার্থী সনাতন কিংবা গুচ্ছ পদ্ধতির বাইরে গিয়ে ইউজিসি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে নতুন পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করার উদ্যোগ গ্রহণ করা যায় কিনা সেটি ও ভেবে দেখার অনুরোধ করেছেন।

অপরদিকে এই ভর্তিকার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা মনে করছেন বাংলাদেশের বিবেচনায় এ পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার করা সাপেক্ষে সেটি ভবিষ্যতে চলতে পারে। কিন্তু সেজন্য তারা মনে করছেন, পরীক্ষা গ্রহণের সকল পর্যায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ, কেন্দ্র এবং পেরিফেরির মধ্যকার দূরুত্ব ঘোচান, সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সকলের অংশীদারিত্ব, এবং পরীক্ষা পদ্ধতির ত্রুটিগুলো শনাক্ত করে সর্বাগ্রে সেগুলোর সংস্কার সাধন করতে হবে।

 

গবেষকগণ:

শামসুল আরেফীন

আইরিন পারভীন

আবুল কালাম

সহকারী অধ্যাপক

সমাজবিজ্ঞান বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

 

লেখক: শামসুল আরেফীন

পিএইচডি গবেষক

সমাজবিজ্ঞান বিভাগ

ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র

এবং

সহকারী অধ্যাপক ( শিক্ষাছুটি)

সমাজবিজ্ঞান বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ইমেইলঃ shams.rehan@bsmrstu.edu.bd

এআরএস

Link copied!