বরিশাল ব্যুরো
জুলাই ১৬, ২০২৫, ০৩:০৪ পিএম
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা বলেছিলাম—ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলুপ্ত করতে হবে। একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে থাকবে না চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও বৈষম্য। কিন্তু এখনো দেখি, রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে রক্তের দাগ লেগে আছে। একে অপরকে খুনি বলে গালি দিচ্ছে। সবাই কোনো না কোনোভাবে রক্তাক্ত।”
তিনি বলেন, “আমরা একটি রাজনৈতিক সহিংসতামুক্ত সংস্কৃতি চেয়েছিলাম, চাঁদামুক্ত অর্থনীতি চেয়েছিলাম। এখনো তরুণ প্রজন্ম ঘুমিয়ে যায়নি—তারা রাজপথে আছে। ইনশাআল্লাহ, বাংলাদেশকে চাঁদাবাজ, দুর্নীতি ও বৈষম্যমুক্ত করেই ঘরে ফিরব।”
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় বরিশাল নগরীর ফজলুল হক এভিনিউতে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এই সমাবেশ রাত ১০টা পর্যন্ত চলে।
নাহিদ ইসলাম তার বক্তব্যে বরিশালের দুই কৃতি সন্তান—শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের রাজনৈতিক অবদান স্মরণ করে বলেন, “এনসিপি এই দুই মহৎ রাজনীতিবিদের চেতনার পুনরুত্থান ঘটাবে।”
তিনি আরও বলেন, “আগামী ৩ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই ঘোষণাপত্র আদায়ের লক্ষ্যে একটি সমাবেশ হবে। বরিশালের সর্বস্তরের মানুষকে সেখানে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। ৫ আগস্ট আমাদের লক্ষ্য ছিল গণভবন, এবার আমাদের লক্ষ্য সংসদ ভবন।”
এনসিপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় দলকে গতিশীল করতে হবে। কেউ যদি এনসিপির কোনো সদস্যকে চোখ রাঙায়, তাকে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।”
বক্তব্যের শুরুতে তিনি বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, “মোরা দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা শুরু হরছি। মোগো লাগে বরিশালবাসী আছেন তো?”
সমাবেশটি পরিচালনা করেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম।
এতে আরও বক্তব্য রাখেন দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, “বর্তমান নির্বাচন কমিশনারের রিমোট কন্ট্রোল কোথা থেকে চলছে—ভারত নাকি সেনাবাহিনী? তারা এখনো কেন ‘শাপলা’ প্রতীক দিতে গড়িমসি করছে?”
তিনি বলেন, “নৌকাকে ব্যালট থেকে বাদ দিতে হবে। এই নির্বাচন কমিশন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, কমিশন পুনর্গঠন প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, “আগে ভোট চোর বললে এক দলের গায়ে লাগত, এখন চাঁদাবাজ বললেও আরেক দলের গায়ে লাগে। কারণ এখন দেশের নীতি হয়ে গেছে—‘জিন্দা থাকতে হলে, দিতে হবে চান্দা।’”
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, “তিনি বলেছেন তারেক রহমানকে নিয়ে কিছু বললে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি—এ ধরনের বক্তব্য রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বে নয়।”
তিনি বলেন, “এনসিপি সেনানিবাস থেকে নয়, সংকট থেকেই জন্ম নিয়েছে। তাই সংকট মোকাবেলায় আমরা সদা প্রস্তুত। আমাদের সাধারণ সদস্যের গায়েও যদি কেউ হাত তোলে, তাকে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।”
ইএইচ