ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

আখেরাতে মুক্তি মিলবে যেসব আমলে

মো. মাসুম বিল্লাহ

ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৩, ০৫:৫২ পিএম

আখেরাতে মুক্তি মিলবে যেসব আমলে

ক্ষণস্থায়ী জীবনে মুমিনের প্রধান ভাবনা থাকতে হবে আখেরাতকেন্দ্রিক। কোরান-হাদিসের দৃষ্টিতে আখেরাত ভাবনা একটি ইবাদতও বটে। হাদিসে বেশি বেশি মুত্যুর কথা স্মরণ করতে বলা হয়েছে। কারণ এর দ্বারা অন্তর আল্লাহর দিকে ধাবিত হয়। আখেরাতের জীবনের তুলনায় দুনিয়ার জীবন অতল সমুদ্রের এক ফোঁটা পানির মতো। সুতরাং সে জীবনের জন্য পাথেয় জোগানোর প্রয়োজন অনেক বেশি।

পৃথিবীর জীবনে, অর্থবিত্ত যশ-জৌলুসের পাহাড় গড়ে কীভাবে উন্নতির চরমে পৌঁছানো সম্ভব সে স্বপ্নেই বিভোর থাকে মানুষের দিবস-রজনী। আজকের প্রয়োজন, সুযোগ-সুবিধা, ক্ষণস্থায়ী আরাম-আয়েশ ইত্যাদি একটি বিশেষ মাত্রায় অর্জন করতে পারাটাই যেন জীবনের সফলতা। এটাই সে বিষয় যার পেছনে ব্যয় হচ্ছে মানুষের সর্বোত্তম যোগ্যতা, ক্ষরিত হচ্ছে প্রদত্ত শক্তি, সাহস। আসছে আখেরাত দিবসের ভাবনা কারও নেই। প্রতিটি ব্যক্তির ম্যারাথন দৌড়ের চূড়ান্ত লক্ষ্য বর্তমান নিসর্গ। অথচ মানুষকে নশ্বর ইহজগৎ ছেড়ে একদিন চলে যেতে হবে অবিনশ্বর পরজগতে। পরকালে মানুষকে দাঁড়াতে হবে প্রতিপালকের সামনে যাপিত জীবনের হিসেব দিতে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন :

কিন্তু তোমরা পার্থিব জীবনকে পছন্দ করে থাকো। অথচ আখেরাতের জীবনই উত্তম ও চিরস্থায়ী। (সূরা আ’লা ১৬-১৭)

প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহচ্ছন্ন রাখে। যতক্ষণ না তোমরা সমাধিসমূহে উপস্থিত হচ্ছ। (সূরা তাকাছুর :১-২)

মানুষকে আল্লাহ ও আখেরাতের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে। আখেরাত বিশ্বাস মানুষের জীবনে সুদূরপ্রসারী ফলাফল নির্ণয় করে। আর সে জন্যই বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) আমাদেরকে আখেরাতের ওপর ঈমান আনার নির্দেশ দিয়েছেন । আখেরাত সংক্রান্ত যে বিষয়গুলোরওপর ঈমান রাখা জরুরি তা হচ্ছে:

একদিন আল্লাহ তা'য়ালা সমগ্র বিশ্বজগত ও তার ভিতরকার সৃষ্টিকে নিশ্চিহ্ন করে দেবেন । এ দিনটির নাম হচ্ছে ‘কিয়ামত’।

আবার তাদের সবাইকে দেয়া হবে নতুন জীবন এবং তারা সবাই এসে হাযির হবে আল্লাহর সামনে। একে বলা হয় ‘হাশর’।

সকল মানুষ তাদের পার্থিব জীবনে যা কিছু করেছে তার আমলনামা আল্লাহর আদালতে পেশ করা হবে।

আল্লাহ তা'য়ালা প্রত্যেক ব্যক্তির ভাল- মন্দ কাজের পরিমাপ করবেন। আল্লাহর মানদন্ডে যার সৎকর্মের পরিমাণ অসৎ কর্ম অপেক্ষা বেশী হবে, তিনি তাকে মাপ করবেন এবং যার অসৎকর্মের পাল্লাভারী থাকবে, তিনি তার উপযুক্ত শাস্তি বিধান করবেন।

আল্লাহর কাছ থেকে যারা মার্জনা লাভ করবে, তারা জান্নাতে চলে যাবে এবং যাদের শাস্তি বিধান করা হবে, তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

আখেরাতের ধারণা যেভাবে মুহাম্মাদ (সা) পেশ করে গেছেন, তার আগেকার নবীরা ও ঠিক তেমনি করে তা পেশ করে এসেছিলেন এবং প্রত্যেক যামানায় মুসলমান হওয়ার জন্য এটা ছিল অপরিহার্য শর্ত। যে ব্যক্তি আখেরাতকে অস্বীকার করেছে অথবা সে সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছে, সকল নবীই তাকে কাফের বলে আখ্যায়িত করেছেন, কেননা এ ধারণা ব্যতীত আল্লাহকে তার প্রেরিত কিতাব ও রাসূলদেরকে মেনে নেয়া সম্পূর্ণ নিরর্থক হয়ে যায় এবং মানুষের সমগ্র জীবনই হয় বিকৃত।

যে লোক আখেরাতে বিশ্বাসী নয় সে আল্লাহকে মানা ও তার ইচ্ছাঅনুযায়ী চলাকে মনে করে নিষ্ফল । তার কাছে আল্লাহর আনুগত্য যেমন কোন লাভ নেই, তেমনি তার না- ফরমানীতে ও কোন ক্ষতি নেই। আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর রাসূল ও কিতাবের মাধ্যমে যেসব আদেশ দিয়েছেন, তার আনুগত্য করা তার পক্ষে কি করে সম্ভব হবে? যদি ধরে নেয়া যায় যে সে আল্লাহকে মেনে নিয়েছে তা হলেও তার সে মানা সম্পূর্ণ নিরর্থক, কেননা সে আল্লাহর প্রদত্ত আইনের আনুগত্য করবেনা এবং তার ইচ্ছা অনুসারে চলবে না।

আখেরাত সম্পর্কে দুনিয়ায় মানুষের মধ্যে তিন রকমের বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে:

এক দলের ধারণা মরার পর মানুষ ধ্বংস হয়ে যায় । তারপর আর কোন জীবন নেই । এ হচ্ছে নাস্তিকের বিশ্বাস যারা নিজেরদেরকে বিজ্ঞানী বলে দাবী করে।

দ্বিতীয় দল বলে, মানুষ নিজস্ব কর্মফল ভোগ করার জন্য বারবার এ দুনিয়ায় দেহ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে । অসৎ কাজ করলে পরজন্মে তারা কুকুর বিড়ালের মত কোন জানোয়ার হয়ে আসবে , অথবা কোন গাছ হয়ে জন্মাবে , অথবা কোন নিকৃষ্ট স্তরের মানুষের আকৃতি ধারণ করবে। আর যদি ভাল কাজ করে তাহলে আরো উঁচু স্তরের জীবনে পৌঁছবে। কোন কোন জড়ত্ব প্রাপ্ত ধর্মে এ ধরনের ধারণা প্রচলিত রয়েছে।

তৃতীয় দল কিয়ামত , পুনর্জীবন লাভ , আল্লাহর আদালতে উপস্থিতি এবং কৃতকর্মের প্রতিদান ও প্রতিফলের উপর ঈমান পোষণ করে । এ হচ্ছে সকল নবীর সাধারণ বিশ্বাস।

একদিন কিয়ামত আসবে এবং আল্লাহ নিজেই তার এ কারখানাকে ভেঙ্গে চুরে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে তার জায়গায় গড়ে তুলবেন আর এক উচ্চতর পর্যায়ের উৎকৃষ্টতর কারখানা। এ হচ্ছে এমন একটি বিষয় যার সত্যতা সম্পর্কে কোন সন্দেহ ও অবকাশ নেই । দুনিয়ার এ কারখানা নিয়ে যত চিন্তা করা যায় , তত বেশী করে প্রমাণ পাওয়া যায় যে , এটা একটি স্থায়ী কারখানা নয়, কারণ যেসব শক্তি এর ভিতরে কাজ করে যাচ্ছে , তারা সবাই সীমাবদ্ধ ও একদিন তাদের সমাপ্তি নিশ্চিত। এ কারণে সকল বিজ্ঞানী এ সম্পর্কে এক মত যে , একদিন সূর্য শীতল ও জ্যোতিহীন হয়ে যাবে , গ্রহ উপগ্রহসমূহের পরস্পরের মধ্যে ঘটবে সংঘাত এবং দুনিয়া হয়ে যাবে ধ্বংস।

আল্লাহ হাশরের দিনে আদালত বসাবেন, ন্যায়নীতি অনুযায়ী আমাদের ভাল মন্দ কাজের পুরস্কার ও শাস্তি বিধান করবেন। একে কে অসম্ভব বলতে পারে? এর মধ্যে কোন কথাটি যুক্তি বিরোধী ? যুক্তির দাবীই হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তাঁর ন্যায়ের আদালতে ন্যায়নীতি অনুযায়ী সবকিছুর সিদ্ধান্ত করবেন।

সর্বশেষ জিনিস হচ্ছে জান্নাত ও জাহান্নাম। তার অস্তিত্ব অসম্ভব নয়। যে আল্লাহ চন্দ্র , সূর্য , মঙ্গল গ্রহ ও যমীন সৃষ্টি করতে পারলেন, শেষ পর্যন্ত- তিনি কেন জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করতে পারবেন না? তিনি যখন আদালত বসিয়ে মানুষের ভাল মন্দের পুরস্কার ও শাস্তি বিধান করবেন, তখন পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য লোকদের কোন বিশেষ সম্মান, সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের এবং শাস্তি পাওয়ার যোগ্য লোকদের জন্য অপমান দুঃখ বেদনা ভোগের জন্য স্থান নির্দিষ্ট থাকাও প্রয়োজন।

বিশ্বপ্রতিপালক তাঁর প্রেরিত পুরুষদের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছেন - মানুষ যেন একমাত্র তাঁরই ইবাদত করে, অন্যের অধিকার যথার্থভাবে আদায় করে দেয়, একমাত্র তাঁরই মর্জি মোতাবেক জীবনযাপন করে; না করলে মুখোমুখি হতে হবে কঠিন শাস্তির। ইরশাদ হয়েছে : যে আমার স্মরণ হতে বিমুখ তার জীবনযাপন সংকুচিত এবং আমি তাকে কিয়ামতের দিন উত্থিত করব অন্ধ হিসেবে।

মৃত্যু-পরবর্তী-জীবন সম্পর্কে দু’ভাবে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। প্রতিটি মানুষই মৃত্যুর পর মাটির সাথে মিশে যায়, আর তাই বুঝে আসে না কীভাবে সে জীবনপ্রাপ্ত হবে দ্বিতীয়বার।

মৃত্যু-পরবর্তী-জীবন আমাদের দৃষ্টির অন্তরালে। আজকের পৃথিবীকে তো সবাই স্পর্শ করছে, চোখে দেখছে। কিন্তু পরবর্তী জগতকে কেউ কখনো দেখেনি। এজন্য আমাদের বিশ্বাস হতে চায় না, এ জীবনের পর অন্য আরো-একটি জীবন রয়েছে, যে জীবন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখা সবারই কর্তব্য।

রাসুল (সা.) এক সমাবেশে তার সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, কে সবচেয়ে বুদ্ধিমান? সাহাবিরা স্বভাবসুলভভাবে বললেন, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। তখন রাসুল (সা.) বললেন, সেই ব্যক্তি প্রকৃত বুদ্ধিমান, যিনি মৃত্যুর জন্য সব সময় প্রস্তুত থাকে। সাহাবিরা বললেন, হে রাসুল! আমরা মৃত্যুর জন্য কীভাবে প্রস্তুত থাকবো? রাসুল (সা.) বললেন, মৃত্যু যে খুব কাছে সে অনুযায়ী প্রস্তুত থাকবে।

দুনিয়ার নেয়ামতের তুলনায় আখেরাতের নেয়ামতসমূহ উত্তম। কারণ দুনিয়ার নেয়ামত অল্প এবং আখেরাতের নেয়ামত অধিক। দুনিয়ার নেয়ামত ক্ষণস্থায়ী এবং আখেরাতের নেয়ামত অনন্ত-অফুরন্ত। দুনিয়ার নেয়ামতসমূহের সাথে নানা রকম অস্থিরতাও রয়েছে, কিন্তু আখেরাতের নেয়ামত এ সমস্ত জঞ্জালমুক্ত। দুনিয়ার নেয়ামত লাভ অনিশ্চিত, কিন্তু আখেরাতের নেয়ামত প্রত্যেক মুত্তাকী ব্যক্তির জন্য একান্ত নিশ্চিত।

আখেরাতে জীবন হবে আলোকিত করার জন্য উত্তম আমল তালাশ করা।

উত্তম আমলের সঙ্গে দীর্ঘ বয়স পরম সৌভাগ্যের বিষয়। শুধু আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবাসা এটা মুমিনের প্রশংসনীয় ও ঈর্ষান্বিত একটি গুণ।

সাহাবি বুরায়দাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যারা অন্ধকার রাতে মসজিদে যাতায়াত করে তাদের কিয়ামতের দিন পূর্ণ জ্যোতির সুসংবাদ দাও। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫৬১)

আখিরাতে আল্লাহর প্রিয় ও আলোকিত ব্যক্তি হওয়ার অন্যতম একটি উপায়, কোরআন মাজিদ শেখা-শেখানো। নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআন শরিফ শিখবে এবং শেখাবে এবং সে অনুযায়ী আমল করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামতের দিন একটি নূরের টুপি পরিধান করাবেন, যার আলো সূর্যের আলোর ন্যায় হবে। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস : ২১২৮)

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে আদায় করা। যারা এ ব্যাপারে সচেষ্ট থাকবে পরকালে তাদের আলোকিত জীবনের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পবিত্রতা হলো ঈমানের অর্ধেক অংশ।

নুআইম ইবনে আবদুল্লাহ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি আবু হুরায়রা (রা.)-কে অজু করতে দেখলেন। অজু করতে তিনি মুখমণ্ডল ও হাত দুটি এমনভাবে ধুলেন যে প্রায় কাঁধ পর্যন্ত ধুয়ে ফেললেন। এরপর পা দুটি এমনভাবে ধুলেন যে পায়ের নালার কিছু অংশ ধুয়ে ফেললেন। এভাবে অজু করার পর বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমার উম্মত অজুর প্রভাবে কেয়ামতের দিন দীপ্তিময় মুখমণ্ডল ও হাত-পা নিয়ে উঠবে। কাজেই তোমরা যারা সক্ষম তারা যেন অধিক বিস্তৃত দীপ্তিসহ উঠার চেষ্টা করে। (মুসলিম, হাদিস : ৪৬৮)

নবী (সা.) বলেছেন, কেউ যদি রাতে সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করে, সেটাই তার জন্য যথেষ্ট। (বুখারি, হাদিস : ৫০০৯)

বিখ্যাত সাহাবি আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করবে তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তীকাল জ্যোতির্ময় হবে। ’ (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস : ৩৩৯২)।

আখিরাতে তারাই সফল, যাদের অন্তর পরিশুদ্ধ। পরিশুদ্ধ হৃদয়ের ভাগ্যবান ব্যক্তিরাই পরকালে আলোকিত জীবনের অধিকারী। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা আলোকিত তথা পরিশুদ্ধ অন্তরের সফলতার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘কিয়ামত দিবসে ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততি কোনো উপকারে আসবে না; কিন্তু যে আলোকিত ও পরিশুদ্ধ অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে। ’ (সুরা : শুআরা, আয়াত : ৮৮-৮৯)।

মহান আল্লাহ আমাদের দুনিয়া-আখিরাতে আলোকিত জীবন দান করুন।

Link copied!