Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

হজ্বযাত্রীদের যেসব জিনিসপত্র অবশ্যই সাথে নিতে হবে

মো. মাসুম বিল্লাহ

মে ১৬, ২০২৩, ১১:২২ এএম


হজ্বযাত্রীদের যেসব জিনিসপত্র অবশ্যই সাথে নিতে হবে

ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে হজ চতুর্থ। প্রতিটি মুমিনের আকাঙ্ক্ষা থাকে জীবনে একবার হলেও পবিত্র হজ পালন করা। ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী, হজ অবশ্যই পালনীয়। তবে হজ কাদের জন্য পালন করা ফরজ? 

পরিবারের আবশ্যকীয় খরচ বাদে যে ব্যক্তির কাছে মক্কা শরীফ থেকে হজ করে ফিরে আসা পর্যন্ত যাতায়াতের মোটামুটি খরচ পরিমাণ অর্থ থাকে তার ওপর হজ ফরজ। হজের সময় কোনো কোনো জিনিস সংগ্রহ করা উচিত, তা অনেকেরই জানা থাকে না। তবে হজযাত্রার পূর্বেই কিছু জিনিস সংগ্রহে রাখতে হবে।

হজের ফ্লাইট শুরু হচ্ছে রোববার (৫ জুন) থেকে। সে হিসেবে হজযাত্রীদের প্রস্তুতি আগেভাগে সেরে নেওয়া শ্রেয়। নিচে হজযাত্রার আগে সংগ্রহ করার মতো প্রয়োজনীয় উপকরণগুলোর একটা তালিকা উপস্থাপন করা হলো—

শুরুতে ইহরামের কাপড় সংগ্রহ করতে পারেন : পুরুষের ইহরামের কাপড়; কমপক্ষে দুই সেট (গায়ের জন্য আড়াই হাত বহরের তিন গজ ও শরীরের নিচে পরার জন্য একই বহরের আড়াই গজ)। ইহরামের কাপড় সাদা ও সুতি হলে আরামদায়ক। নারীদের ইহরামের কাপড় তাদের স্বাভাবিক পোশাক-পরিধেয়ই। 

তবে মুখের পর্দা রক্ষার জন্য মহিলা হাজিদের জন্য কিছু বিশেষ সানক্যাপ পাওয়া যায়, যেগুলোতে যুক্ত বিশেষ পর্দাটি নারী হাজিদের মুখের পর্দা যথাযথভাবে রক্ষা করে, আবার ইহরামেরও কোনো সমস্যা হয় না। ইহরাম বাঁধার টাওয়াল সেট ও বেল্ট।

একান্ত ব্যক্তিগত উপকরণ : কোরআন শরিফ, হজ গাইড, মানিব্যাগ, পাসপোর্ট ব্যাগ, জুতা রাখার ব্যাগ, পাথর রাখার ব্যাগ, প্লাস্টিক জায়নামাজ, নখ কাটার বক্স, কাঁধের ব্যাগ, মহিলাদের হিজাব, মহিলাদের চুল বাঁধার টুপি, হাত মোজা ও পা মোজা, হাওয়ার বালিশ, বোডিং হোল্ডার, সানক্যাপ, চামড়ার মোজা, তায়াম্মুমের মাটি, মিসওয়াক, ছাতা, গামছা, লুঙ্গি, গেঞ্জি, পায়জামা, পাঞ্জাবি, টাওয়াল, জুতা, টুপি, তসবি, আতর, বোরকা, সাবান, ছোট আয়না, চিরুনি, কাঁচি, রেজর, ব্লেড, সুঁই-সুতা, থালা, বাটি, ও গ্লাস।

এছাড়াও সাবান দুটি, সাবানের গুঁড়া ৫০০ গ্রাম, নীলের ছোট কৌটা একটি, ব্যবহারের তেল পরিমাণমতো, পেট্রোলিয়াম জেলি মাঝারি সাইজের একটি, টয়লেট পেপার তিনটি, টুথপেস্ট একটি, ব্রাশ ও মেসওয়াক দুটি, ছোট তালা-চাবি এক সেট। তবে নেওয়ার সময় অবশ্য হাতব্যাগে রাখা যাবে না। বরং এগুলো বড় ব্যাগে দিতে হবে। ধাতব পদার্থ ও দড়ি হ্যান্ডব্যাগে বহনে বিমানের নিষেধাজ্ঞা আছে।

দুই ফিতার জুতা : ইহরাম অবস্থায় পুরুষদের পরার জন্য দুই ফিতার স্যান্ডেল বা জুতা দুই জোড়া। হালাল অবস্থায় পুরুষদের পরার জন্য শু বা চামড়ার জুতা এক জোড়া। মা-বোনদের জুতায় কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তারা দুই-তিন জোড়া আরামদায়ক জুতা সঙ্গে নিতে পারেন। মসজিদে জুতা বহনের জন্য কাপড়ের ছোট দুটি ব্যাগ সঙ্গে রাখতে পারেন।

শুকনা খাবার : সুবিধার জন্য অল্প চিড়া ও গুড়, দুই-তিন প্যাকেট বিস্কুটও সঙ্গে রাখা যেতে পারে। যাত্রাপথে বিশেষ করে আরাফাত ও মিনায় খাবার পৌঁছতে বিলম্ব হলে এগুলো কাজে আসবে। কারণ গত হজে এসব জায়গায় দোকানের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

ব্যক্তিগত ক্রোকারিজ সামগ্রী : চা-কফি পানে অভ্যস্ত ব্যক্তিরা কফির উপকরণ সঙ্গে নেবেন। সেই সঙ্গে মেলামাইনের থালা একটা, গ্লাস একটি, মগ একটি, চা চামচ একটি, ফল কাটার ছোট চাকু একটি। কোমর বেল্ট, টাকার ব্যাগ, গলায় ঝোলানো ব্যাগ—এগুলো বিভিন্ন সংস্থা প্রচার ও সওয়াবের নিয়তে হাদিয়া দিয়ে থাকে। তাই এগুলো আগে কেনার দরকার নেই।

হালকা ওজনের আয়রন মেশিন : মক্কা-মদিনায় কাপড় ইস্তিরি করা খুব ব্যয়বহুল। তাই সমমনা পাঁচ-ছয়জন মিলে একটি হালকা আয়রন সঙ্গে নিলে বেশ উপকার হবে। একইভাবে কয়েকজন মিলে একটি মাল্টিপ্লাগ নিয়ে গেলেও বেশ উপকার পাওয়া যায়। তাই বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

তাওয়াফ তাসবিহ : তাওয়াফের সময় নির্ভুল হিসাব রাখার জন্য একটি তাওয়াফ তাসবিহ সংগ্রহে রাখা যেতে পারেন।

হজ গাইড : নির্ভরযোগ্য কোনো আলেমের লিখিত হজের মাসয়ালা-মাসায়েল সংক্রান্ত বই।

বৈদেশিক মুদ্রা : কোরবানির খরচ ও হজের ব্যক্তিগত খরচের জন্য প্রয়োজন মতো সৌদি রিয়াল আগে থেকেই সংগ্রহ করে রাখা ভালো, কারণ বিগত বছরগুলোতে যারা হজ করেছেন, তাঁদের অভিজ্ঞতা হলো—শেষ সময়ে রিয়ালের দাম বেড়ে যায়।

সৌদি আরবের সিম : অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও সৌদি এয়ারপোর্টে বিভিন্ন কোম্পানি মোবাইলের সৌদি সিম ফ্রি উপহার দেয়। না পেলে মোবাইল সিম মক্কা-মদিনায় কিনতে পাওয়া যায়। আর সিমের রিচার্জ কার্ড সেখানকার মুদি দোকান বা ‘বাকালা’গুলোতে সহজে পাওয়া যায়। অনেক সময় সিম বিক্রেতারা রিচার্জ কার্ড না রাখায় হাজিরা বিড়ম্বনায় পড়ে যান। 

তবে হজের সফরে পুণ্যভূমিতে একান্ত বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া মোবাইলে কথা না বলাই উত্তম। এতে পবিত্র কাবায় মনঃসংযোগ বিঘ্নিত হয় এবং কোনো খারাপ সংবাদ পেলে মন উতলা হতে পারে। বিশেষ করে ইহরাম অবস্থায় এ ব্যাপারে খুবই সতর্ক থাকা দরকার।

হাওয়ার বালিশ : একটি ছোট বাতাসের বালিশ নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় তোয়ালে বা গামছা, একটি চাদর, একটি কাঁথা। এগুলো মুজদালিফায় কাজে আসতে পারে।

অন্যান্য কাপড় : পুরুষরা হজে হালাল অবস্থায় পরার জন্য কমপক্ষে তিনটি পাঞ্জাবি, দুটি পায়জামা, দুটি লুঙ্গি, দুটি গেঞ্জি বা ফতুয়া সঙ্গে নেওয়া যেতে পারেন। মহিলারা সব সময় পরার জন্য কমপক্ষে চার সেট সালোয়ার-কামিজ, স্কার্ফ ও দুটি বোরকা, হাতমোজা এবং মোজা সঙ্গে নিতে পারেন। এগুলো আগে থেকে থাকলে নতুন করে কেনার দরকার হবে না। এ ছাড়া কাউন্টিং তাসবিহ, মেসওয়াক ইত্যাদি সাধারণত মানুষের কাছে থাকে, যদি না থাকে তাহলে এগুলো সংগ্রহ করা যেতে পারে।

প্রয়োজনীয় ওষুধ : হজে যাওয়ার আগে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সঙ্গে নিয়ে যাওয়া উচিত। নিজের দৈনন্দিন ব্যবহারের ওষুধের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জ্বর, ঠাণ্ডা, পেটের পীড়া ইত্যাদির জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাওয়া ভালো। কারণ সৌদি আরবে ওষুধের দাম তুলনামূলক বেশি।

জরুরি কাগজপত্র ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী : দীর্ঘ হজযাত্রায় কাগজপত্র গুছিয়ে রাখা জরুরি। সে জন্য পাসপোর্ট আকারের ১০ কপি ছবি, স্ট্যাম্প আকারের ৬ কপি ছবি, পাসপোর্টের ২-৩ পাতার সত্যায়িত ফটোকপি, স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদপত্র, টিকাকার্ড, ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার রসিদ, নারী হজযাত্রীর ক্ষেত্রে শরিয়তসম্মত মাহরামের সঙ্গে সম্পর্কের সনদ ইত্যাদি সঙ্গে রাখা চাই।

সব হজযাত্রীর জন্য বাংলাদেশ থেকে একটি পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। এতে পিলগ্রিম নম্বর, নাম, ট্রাভেল এজেন্সির নাম ইত্যাদির তথ্য থাকে। এটা গলায় বা হাতের কাছে রাখুন। একটি কাগজে নিজের নাম, পাসপোর্ট নম্বর, এজেন্সির নাম ও সৌদি আরবে সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সির প্রতিনিধির মোবাইল নম্বর ইংরেজিতে লিখে রাখুন। এ ছাড়া সৌদি আরবে থাকাকালে মোয়াল্লেমের পক্ষ থেকে হজযাত্রীকে পরিচয়পত্রের একটি কার্ড দেওয়া হয়। সেই কার্ড ও যে হোটেলে থাকবেন, সেই হোটেলের কার্ড অবশ্যই সঙ্গে রাখুন।

একটা বড় ট্রলি ব্যাগ : অনেক ক্ষেত্রে হজ কাফেলা সম্মানিত হাজি সাহেবদের বাংলাদেশের পতাকা চিহ্নিত ও হজ কাফেলার ঠিকানা সংবলিত ব্যাগ সরবরাহ করে তাই মোয়াল্লেমকে না জানিয়ে বড় কোনো ব্যাগ কিনলে অর্থের অপচয় হতে পারে।

সহজে বহনযোগ্য ব্যাগ : সহজেই কাঁধে বা হাতে বহন করা যায় এমন একটি ছোট হালকা চামড়া বা কাপড়ের ব্যাগ নিয়ে যাওয়া ভালো। এই ব্যাগটি যাত্রাপথে বিশেষ করে হজের মূল সফরে (৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ) বিশেষ দরকার হবে। কারণ ওই সময় বড় ব্যাগ হাজিদের কাছে রাখা সম্ভব হয় না। তাই সেই দিনগুলোতে একান্ত প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সঙ্গে রাখতে ছোট ব্যাগটি খুব উপকারে আসবে।

ব্যাগ ও জিনিসপত্র গোছানো : নিজের প্রতিটি ব্যাগে ইংরেজিতে নাম, ঠিকানা, পাসপোর্ট নম্বর ও বাংলাদেশের কাছের কারও মোবাইল নম্বর লিখে রাখুন। বড় ব্যাগ তালাবদ্ধ রাখা খুবই জরুরি। তবে ব্যাগ যত ছোট ও হালকা করা যায়, যাত্রা ততই আরামদায়ক হবে। যেসব জিনিসপত্র সঙ্গে নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর একটি তালিকা করে রাখলে ভালো।

উল্লিখিত উপকরণগুলো বাইতুল মোকাররম ও হাজি ক্যাম্প এলাকায় সহজে পাওয়া যেতে পারে। তা ছাড়া এখন বিভিন্ন অনলাইন শপে প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো একসঙ্গে পাওয়া যায়। শুধু গুগলে বা ফেসবুকে ‘ইহরাম প্যাকেজ’, ‘হজ প্যাকেজ’ বা ‘হজের উপকরণ’ ইত্যাদি লিখে সার্চ দিলে সহজেই পাওয়া যেতে পারে। প্রডাক্ট লিস্ট, স্থায়ী অফিস ইত্যাদির তথ্য সংগ্রহের পর তাদের সঙ্গে কথা বলে বিশ্বস্ত মনে হলে তাদের থেকেও সংগ্রহ করা যেতে পারে।

এইচআর

Link copied!