ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

রোহিঙ্গা মাঝিরাই টার্গেট

নুর মোহাম্মদ মিঠু

ডিসেম্বর ১৩, ২০২২, ১২:৫১ এএম

রোহিঙ্গা মাঝিরাই টার্গেট

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সক্রিয় রয়েছে ছোট-বড় প্রায় শতাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ। গ্রুপগুলোর একেকটির সদস্য সংখ্যা সর্বনিম্ন ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ জন। গ্রুপগুলোর ছোট-বড় সন্ত্রাসীরাই নিয়ন্ত্রণ করছে ক্যাম্পের বিভিন্ন এলাকা। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা, মানবপাচার, অপহরণসহ ১২ ধরনের অপরাধ করছে গ্রুপগুলো। ক্যাম্পে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে প্রায়ই জড়িয়ে পড়ছে সঙ্ঘাতে।

সাধারণ সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর পাশাপাশি সক্রিয় মিয়ানমারভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলোও। আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি-আরসা, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন-আরএসও, ইসলামী মাহাজ ও জমিয়াতুল মুজাহিদিনের পাশাপাশি নতুন করে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন।

মাস্টার মহিবুল্লাহ খুনের পর আরসা কোণঠাসা থাকলেও ফের অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করছে। আর শুরু থেকে রোহিঙ্গ ক্যাম্পে শৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারি সংস্থার সাথে সমন্বয় করে কাজ করায় সবকটি গ্রুপেরই টার্গেটে পরিণত হয়েছে ক্যাম্পভিত্তিক ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতা— মাঝি ও পাহারারত স্বেচ্ছাসেবকরা।

সূত্র বলছে, যেকোনো সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আবারো হত্যাকাণ্ড ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতেও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৪০-৫০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল ৮-ইস্ট ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ রফিককে হত্যার উদ্দেশ্যে তার বাড়ি ঘেরাও করে। ভাগ্যের সহায়তায় ওই যাত্রায় বেঁচে যান তিনি।

তবে ওই দিন হেড মাঝি রফিককে হত্যার উদ্দেশ্যে বাড়ি ঘেরাও করা সন্ত্রাসীদের দুজন পুলিশের সাথে গোলাগুলিতে নিহত হয়। উখিয়ার বালুখালী ৮-ইস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-৪০ ব্লকের এ ঘটনায় নিহত সলিম উল্লাহ ৮-ইস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-২৪ ব্লকের মৃত মোহাম্মদ নুর প্রকাশ ইউনুসের ছেলে। নিহত অপরজনের পরিচয় পুলিশ নিশ্চিত না করলেও তিনিও ৮-ইস্টের বাসিন্দা মোহাম্মদ জুবায়ের বলে জানিয়েছে স্থানীয় একটি সূত্র।

ওই সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দেশীয় (এলজি) অস্ত্রের অংশবিশেষ, চারটি তাজা কার্তুজ, একটি ছোরা, ১১টি গুলিসহ একটি ম্যাগাজিন ও চারটি শটগানের কার্তুজ উদ্ধার করে।  

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, রাত আড়াইটার দিকে ৮-ইস্ট ক্যাম্পের হেড মাঝি মোহাম্মদ রফিকের ওপর হামলা চালায় ৪০ থেকে ৫০ জন সন্ত্রাসী। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ৮-এপিবিএনের সদস্যরা সেখানে গেলে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা পুলিশ— পুলিশ বলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।

এসময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা ৭৩টি গুলি ছুড়লে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যেতে থাকে। পরে ঘটনাস্থল থেকে দুটি মরদেহ ও অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত ১৮ অক্টোবর রাতেও ক্যাম্প ১৩-ও ক্যাম্প-১৯-এর অংশে এফ ব্লকের হেড মাঝি আনোয়ার ও এফ/২ ব্লকের সাব মাঝি মৌলভী ইউনুসকে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।

সে সময় উখিয়া ৮-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের-এপিবিএন সহকারী পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ জানান, স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে ক্যাম্পের নিরাপত্তা বিষয়ে কথা বলার সময়ে ১৫-২০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। হাসপাতালে নেয়ার পরই চিকিৎসক দুই মাঝিকেই মৃত ঘোষণা করেন।

সাধারণ রোহিঙ্গাদের একটি সূত্র দাবি করছে, আলোচিত নবী হোসেন গ্রুপের জবুর নেতৃত্বাধীন লোকজনই এই দুই রোহিঙ্গা নেতাকে হত্যা করেছে। এর মাস দেড়েক পরই আবার খুন করা হয় উখিয়ার পালংখালী ১২ নম্বর ক্যাম্পের সাব-মাঝি শাহাব উদ্দনীকে। রোহিঙ্গারা বলছেন, শাহাব উদ্দীনের জন্য সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা নির্বিঘ্নে করতে পারছিল না। নিহত শাহাব উদ্দীন ওই ক্যাম্পের এইচ/১৪ নম্বর ব্লকের মনির আহম্মদের ছেলে।

উখিয়া থানার সে সময়কার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, ভোররাতে অজ্ঞাত ২০-৩০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী আকস্মিক হামলা চালিয়ে শাহাব উদ্দীনের বুকে, পেটে ও ডান বাহুতে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে এবং পেটের নাভির উপরে গুলি করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

এর আগে চাঞ্চল্যকর চার মাঝি হত্যার ঘটনায়ও ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। চার মাঝি খুনের ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনাও দেয় হত্যার মিশনে অংশ নেয়া মোহাম্মদ হাশিম নামের এক রোহিঙ্গা যুবক। পিস্তল হাতে নিয়ে এই যুবক ফেসবুক লাইভে এসে নিজেকে ‘ইসলামী মাহাজ’ নামে একটি সংগঠনের সদস্য বলে দাবি করেছিল। হাশিম তার বর্ণনায় বলেছিলেন, কিভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চার মাঝিকে হত্যা করা হয়। সে জানায়, তার মতো আরও ২৫ জনকে অস্ত্র দিয়েছে ইসলামী মাহাজ। দেয়া হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। তাদের কাজই হত্যার মিশন বাস্তবায়ন। চারজন মাঝি— আজিম উদ্দিন, সানা উল্লাহ, জাফর ও ইসমাইলকে তারাই হত্যা করেছে। ইসলামী মাহাজের ছয় মুখপাত্রের নামও উল্লেখ করেছে সে। সামনে তাদের আরও বড় মিশন ছিল। হাশিম তার নিজের ভুল বুঝতে পেরে এই অপরাধের জগৎ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ইঙ্গিত রয়েছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সহিংসতার পেছনে শুধু আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি কিংবা মাদক ব্যবসাই জড়িত নয়, জড়িত রয়েছে জঙ্গি তৎপরতাও। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অসহায়ত্ব, অভাব ও ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে একটি গোষ্ঠী ক্যাম্পগুলোতে তৎপরতা শুরু করেছে। যারা রোহিঙ্গা যুবকদের বিভ্রান্ত করে কাজে লাগাতে চায়। মগজ ধোলাইয়ের পাশাপাশি যুবকদের টাকা ও অস্ত্র দিয়ে গড়ে তুলছে সন্ত্রাসী গ্রুপ।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক সন্ত্রাসীদের টার্গেট হচ্ছেন মাঝিরা— এর নেপথ্যের কারণ জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, এর অন্যতম কারণ— মাঝিরা নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। অনৈতিক কার্যকলাপ, অনিয়মকে নিরুৎসাহিত করেন।

আইনশৃঙ্খলাসহ সার্বিক কার্যক্রমে সরকারি সংস্থাকে সাহায্য করেন। পক্ষান্তরে কতিপয় দুষ্ট প্রকৃতির লোক, শৃঙ্খলা থেকে বের হতে চায়। বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে লাভবান হতে চায়, প্রভাব বিস্তার করতে চায়। এর বিরুদ্ধে কাজ করায় মাঝিরা তাদের টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন। মাঝিদের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্যাম্পের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়েই আমরা সবসময় কাজ করছি। গোটা ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলেই মাঝিদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে বলে আশা করছি।  

Link copied!