Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪,

তিন কারণে ধীরগতিতে নামছে বন্যার পানি

সিলেট ব্যুরো

সিলেট ব্যুরো

জুলাই ২, ২০২২, ০১:৫০ এএম


তিন কারণে ধীরগতিতে নামছে বন্যার পানি

সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ধীরগতিতে কমছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্য সময় বন্যার পানি দ্রুত নেমে গেলেও এবার পানি নামছে একবারে ধীরে। এর পেছনে নদীর নাব্য সংকট, হাওরে অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ, হাওর ভরাট হয়ে যাওয়া তিনটি কারণকে দায়ী করছেন নদী বিশেষজ্ঞরা। 

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুর এবং পরিবেশ কৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমদ বলেন, সাধারণত সিলেটের পানি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কালনী নদী দিয়ে ভৈরব হয়ে মেঘনায় গিয়ে মেশে। গত কয়েক দশকে কালনী ভরাট হয়ে পানিপ্রবাহের পথ অনেকটা রুদ্ধ হয়েছে। ভরাট হয়েছে হাওরও। 

তাই এখন বৃষ্টিপাত কমে এলেও বন্যার পানি সহজে নামছে না। হাওরের প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা লেখক-গবেষক পাভেল পার্থ মনে করেন, অতিবৃষ্টি ও ঢলের পানি ধরে রাখার প্রাকৃতিক জলাধারগুলো ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়া এবং পানিপ্রবাহের স্বাভাবিক পথ রুদ্ধ করায় সিলেট অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা দেখা দিয়েছে। 

তবে দুই জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তরা জানিয়েছেন বানের পানি ধীরগতিতে নামলেও সবকটি নদ-নদীর পানি ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে। যার ফলে বন্যা দীর্ঘমেয়াদি হওয়ার খুব একটা আশঙ্কা নেই। 

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ আমার সংবাদকে বলেন, সিলেটে আরও দুই-এক দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও বন্যার আশঙ্কা নেই। এছাড়া নদ-নদীর পানি ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। গতকাল সকাল থেকে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, জমে থাকা পানি নদীতে পানি নামতে না পেরে উপচে বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করেছে। 

এতে জলাবদ্ধ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নগরের উপকণ্ঠ উপশহর, তেররতন, যতরপুর, মিরাবাজার, সোবহানীঘাট, মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, ছড়ার পাড়, কালীঘাট, মির্জাজাঙ্গাল, তালতলা এলাকায় পাড়া-মহল্লার অভ্যন্তরে পানি রয়েছে। এ ছাড়া সিলেট সদর, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ, বালাগঞ্জ, বিশ্বনাথ, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, ফেঞ্চুগঞ্জ ও ওসমানীনগর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে বানভাসি মানুষরা জানিয়েছেন। 

সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ জুন থেকে বন্যার আঘাত শুরু হয়। এরপর দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও জেলা-উপজেলার অনেক জায়গা এখন জলমগ্ন। বন্যায় জেলার প্রায় ৩০ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে ভয়াবহ বন্যায় ৪০ হাজারের বেশি কাঁচা বাড়িঘর আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর বাইরে জেলার ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন।

এদিকে জেলার কোম্পনিগঞ্জে পানি নামতে শুরু করায় বন্যাক্রান্তেদের মাঝে পানিবাহিত নানা রোগবালাই দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী সংখ্যা উদ্বেগজনক। প্রতিদিন ১৫-২০ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। 

তবে এদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন বন্যায় তলিয়ে যাওয়া টিউবওয়েলের পানি ও বন্যার পানি পান করায় বাড়ছে পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্র জানায়, মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডে সিট খালি নেই। রোগীদের চাপে পুরুষ ওয়ার্ডে শিশুদের ভর্তি করা হচ্ছে। 

গতকাল বিকেল পর্যন্ত পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা ছিল ২১ জন। এর মধ্যে ১৪ জনই শিশু। সুনামগঞ্জ জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে। 

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৪ ঘণ্টা বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। বৃষ্টি হলেই জেলার নদ-নদীর পানি কিছুটা বাড়বে। তবে সেটার পরিমাণ বেশি হবে না। 

জানা গেছে, এখনো বিভিন্ন উপজেলায় মানুষের বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে বন্যার পানি আছে। পানি কিছুটা কমলেও অনেক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে থেকে বাড়িঘরে ফিরতে পারছেন না। অনেকের বাড়িঘর বন্যায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জেলার চারটি উপজেলার সঙ্গে এখনো সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়নি। 

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, জেলার ১১টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভায় ক্ষতিগ্রস্ত বসতঘরের সংখ্যা ৪৫ হাজার ২৮৮টি। এর মধ্যে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে ৪ হাজার ৭৪৭টি। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৪০ হাজার ৫৪১টির। 

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামসুদ্দোহ গতকাল জানিয়েছেন, বৃষ্টি হলে পানি বাড়তে পারে। তবে, ভারী বৃষ্টির পূর্ভাবাস নেই। পানি বড়লেও পরিস্থিতি আগের মতো হবে, এমন কোনো পূর্বাভাস নেই বলে জানান তিনি।

Link copied!