ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

‘পাট নিয়্যা খুব চিন্তাত আছি বাহে’

রংপুর প্রতিনিধি

রংপুর প্রতিনিধি

জুলাই ২৬, ২০২২, ০২:৩১ এএম

‘পাট নিয়্যা খুব চিন্তাত আছি বাহে’

রংপুর সহ উত্তরাঞ্চলে বর্ষা মৌসুমে স্মরণকালের দাবদাহ চলছে। গত ২০ দিন ধরে তাপমাত্রা ২৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। প্রখর রোদে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির হয়ে গেছে, ভরা বর্ষায় দেখা দিয়েছে খরা। খাল-বিল, নালা শুকিয়ে গেছে। 

বৃষ্টির পানি-নির্ভর চাষিরা পড়েছেন বিপাকে। গেল কয়েক দিন ধরে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু এলাকায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও কাঙ্ক্ষিত বর্ষণ শুরু হয়নি। এ কারণে পাট জাগ দিতে পারছেন না চাষিরা। এখন ক্ষেতেই পাট শুকিয়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

চাষিরা বলছেন, এখন পাট কেটে দ্রুত পানিতে জাগ দিয়ে হবে। কিন্তু খাল-বিল, নালা, পুকুর ও ডোবায় পানি না থাকায় ক্ষতির সম্মুখীন তারা। সময় মতো পাট কেটে জাগ দিতে না পারলে বাধাগ্রস্ত হতে পারে আমনের আবাদও। এ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন রংপুরের লাখ লাখ পাটচাষি। 

পানির অভাবে পাট চাষিদের স্বপ্ন, চেষ্টা ও সব শ্রম যেন বৃথা না হয়, সে জন্য মাঠপর্যায়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। রিবন রোটিং পদ্ধতিতে পাট পচানোর জন্য চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। এ ছাড়াও উন্নতজাতের পাট চাষেও উদ্বুদ্ধ করছেন। 

গত বছর রংপুরে পাটের ভালো দাম থাকায় এবার আশানুরূপ ফলন হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পানির অভাবে সেচের মাধ্যমে পাট জাগ দেয়ার স্থানগুলোতে পানি জমিয়ে জাগ দিচ্ছেন অনেকেই। 

এতে বাড়তি খরচের চাপ সইতে হচ্ছে তাদের। পাট জাগে হেরফের হলে এবং পরিষ্কার পানি না থাকলে মানসম্মত পাট পাওয়া সম্ভব হবে না। আর এমনটা হলে কাঙ্ক্ষিত মূল্যও পাবেন না বলে দাবি করছেন চাষিরা। কেউ কেউ বিকল্প উপায়ে সেচ সুবিধায় পাট জাগ দেয়া শুরু করলেও অর্থাভাবে বিপাকে পড়েছেন বেশির ভাগ চাষি। পানির অভাবে ক্ষেতেই পাট শুকিয়ে যাওয়ায় ফলন কমার আশঙ্কাও করছেন তারা।

রংপুর সদর উপজেলার মমিনপুর ইউনিয়নের দোলাপাড়া গ্রামের কৃষক সোহেল মিয়া বলেন, পানির অভাবে পাট পচাতে না পেরে সমস্যায় পড়েছি। অনেক কৃষক দিনমজুর বা পরিবহনের মাধ্যমে দূরে নিয়ে গিয়ে পাট পচাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ সেচের মাধ্যমে পানি জমিয়ে জাগ দিচ্ছেন। আমরা গরিব মানুষ, বৃষ্টির পানির ওপর ভরসা করেই চাষাবাদ করি। কিন্তু এখন গ্রামের আশপাশের খাল-বিলে পানি নেই। এ বছর তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। অর্ধেক জমির পাট কেটে ফেলে রেখেছি। শুধু পানির অভাবে জাগ দিতে পারছি না। 

সদ্যপুষ্করিনী ইউনিয়নের ধাপেরহাট এলাকার কৃষক হজরত আলী বলেন, ‘হামার এত্তি পাট তো ভালোয় হইছে। কিন্তু পানির জনতে হামরা চিন্তিত। আগের মতো এ্যালা খাইল-বিল, নালাত পানি পাওয়া যাওছে না। ওইদোতে সোদ কিছু খা খা করোছে। কোনোটে পাট জাগ দেয়ার তো পানি নাই। কয়দিন থাকি বৃষ্টি হওছে, কিন্তু সেই রকম পানি কই? এবার যদি পাট পচেবার না পাই, তাইলে লাভ তো দূরের কতা, আসল টাকাও খুঁজি পামো না। পাট নিয়্যা খুব চিন্তাত আছি বাহে।’  

পীরগাছার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের প্রতিপাল বগুড়াপাড়ার পাটচাষি সোহবার মুন্সি জানান, বাড়ির পাশের একটি ডোবায় তিনি পাট জাগ দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় ডোবাতে পানি কম। এ কারণে শ্যালোমেশিন ভাড়া করে সেচের মাধ্যমে ডোবায় পানি এনেছেন। এখনো কিছু পাট ক্ষেতে আছে। কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাত হলে তিনি পাট কেটে জাগ দেয়া শুরু করবেন।
 
একই ইউনিয়নের জহুরুল মিয়া বলেন, মাঠের পাট কেটে রেখেছি। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। একটু একটু করে নালাতে পানিও জমতে শুরু করেছে। আর কয়দিন বৃষ্টি হলে তারপর জাগ দেয়া শুরু করব। এবারের মতো কখনো পানির জন্য এতদিন অপেক্ষা করতে হয়নি। কিন্তু এবার বর্ষাকালে বৃষ্টির দেখা নেই। উল্টো প্রচণ্ড খরায় অবস্থা খারাপ। সময় মতো পাট জাগ দিতে না পারলে তার দুই বিঘা জমির পাট নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তিনি জানান। পাটগাছ কাটার পর কাঁচা থাকা অবস্থায় গাছ থেকে ছাল ফিতার মতো পৃথক করে পরে ছাল পচানোর ব্যবস্থা করাই হলো রিবন রেটিং পদ্ধতি। কিন্তু এ পদ্ধতিতে লাভবান হচ্ছেন না বলে দাবি করছেন তারা। 

কৃষকরা জানান, রিবন রেটিং পদ্ধতিতে আঁশ ছাড়ানোর পাটকাঠিটি আর কাজে লাগানো যায় না। কিন্তু সনাতন পদ্ধতিতে ছাড়ালে পাটকাঠিটি বেড়া তৈরিসহ জ্বালানি ও অন্য কাজে ব্যবহার করা যায়।

সদর উপজেলার পানবাড়ি গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, রিবন রেটিং পদ্ধতিতে যন্ত্র দিয়ে আঁশ ছাড়িয়ে পাট পচানো অত্যন্ত ঝামেলার কাজ। পাটের বীজ বপন থেকে শুরু করে আঁশ ছাড়িয়ে ঘরে তোলা পর্যন্ত যেখানে সনাতন পদ্ধতিতে ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক লাগে, সেখানে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে ২৫ থেকে ৩০ জন লাগে। রিবন রেটিং পদ্ধতিতে এক বিঘায় ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়। আর সনাতন পদ্ধতিতে খরচ হয় মাত্র ১৩ হাজার টাকা। এ কারণে অনেকেই বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করে সনাতন পদ্ধতিতে পাট জাগ দেয়ার আশায় আছেন। 

এদিকে আবহাওয়া অফিস বলছে, জুলাই মাসে সাধারণত বৃষ্টিপাত হয় ৪৫৩ মিলিমিটার। কিন্তু গেল ২১ দিনে বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ৮০ মিলিমিটার। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বর্ষার এই মৌসুমে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩২-৩৩  ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। 

গেল ২১ দিনে রংপুর বিভাগে ২৮ থেকে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা ওঠানামা করেছে। মৌসুমের এ সময়টাতে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি তাপমাত্রা বাড়লেও তা দুই থেকে তিন দিনের বেশি স্থায়ী হওয়ার কথা নয়।

 তবে এবার এর ব্যতিক্রম ঘটেছে। আবহাওয়ার এমন পরিবর্তন উত্তরের কৃষির জন্য অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন রংপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ কে এম কামরুল হাসান। তিনি বলেন, স্বাভাবিক বৃষ্টি না হলে কৃষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েন।

রংপুর অঞ্চলে অনাবৃষ্টির কারণে সেই রকম পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। রংপুর বিভাগে ২০২০ সালে জুলাইয়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৮০৪ মিলিমিটার। তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল সর্বোচ্চ ৩৪ দশমিক শূন্য ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গত বছর ২০২১ সালে বৃষ্টি হয়েছিল ১৯৬ মিলিমিটার, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক চার এবং সর্বনিম্ন ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অথচ এবার জুলাইয়ে তেমন বৃষ্টিপাত নেই। এখন পর্যন্ত যা হয়েছে, এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।

এদিকে অনাবৃষ্টির কারণে কৃষকরা পাট পচাতে না পারলে, বিকল্প কী করা যায় তা নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। ভালো ফলনে উন্নত পাটবীজ ব্যবহারের পরামর্শের সঙ্গে অনাবৃষ্টির সময়ে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে পাট আঁশ ছাড়ানোসহ পচানোতে উদ্বুদ্ধ করছেন তারা। 

রংপুর জেলা কৃষি কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান বলেন, খাল-বিলে, পুকুর-ডোবা বা নালায় পানি না থাকলে পাটের ছাল ছিঁড়ে প্লাস্টিক দিয়ে মুড়িয়ে মাটিতে গর্ত খুঁড়ে স্বল্প পানি দিয়ে পাট পচানো যায়। আমরা রিবন রোটিং পদ্ধতিতে পাট পচানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি। এ ছাড়াও উন্নতজাতের পাট চাষেও উদ্বুদ্ধ করছি।

Link copied!