ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

উপকূলে সিত্রাংয়ের তাণ্ডব

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

অক্টোবর ২৫, ২০২২, ০১:০৫ এএম

উপকূলে সিত্রাংয়ের তাণ্ডব

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আঘাত হেনেছে। গতকাল সন্ধ্যায় সিত্রাংয়ের অগ্রভাগ বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত করে। পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও চট্টগ্রামের মাঝামাঝি অংশ দিয়ে সিত্রাং আঘাত হানে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, ‘ইতোমধ্যে সিত্রাংয়ের অগ্রভাগ উপকূলের জেলাগুলো অতিক্রম করেছে। সিত্রাংয়ের যে পেরিফেরি ইফেক্ট আছে তা শুরু হয়ে গেছে। এখন পানির উচ্চতা বাড়তে থাকবে।’

সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভারী বর্ষণ ও দমকা হাওয়ায় গতকাল নড়াইলের লোহাগড়ায় গাছের ডাল পড়ে এক নারীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এদিকে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নেও গাছের ডাল পড়ে মনির (৩৫) নামের একজন মারা গেছেন। পেশায় তিনি একজন স্বর্ণকার। এছাড়া দৌলতখান উপজেলার পৌর ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ঘরের নিচে চাপা পড়ে বিবি খাদিজা (৮০) নামে এক বৃদ্ধার মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

ঝড়ো হওয়ার কারণে তিন বিমানবন্দরে বিমান উড্ডয়ন-অবতরণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেন্ট মার্টিনে ডুবে গেছে ১৩টি ফিশিং ট্রলার। বরিশালের সব নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল 
স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ-সাত ফুট উচ্চতার জলোচ্চ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

ঘূর্ণিঝড়ের সময় অমাবশ্যা তিথি ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে এই জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে মহাবিপদ সংকেত আসারও আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অফিস।

এর আগে গতকাল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং সিভিয়ার সাইক্লোনে রূপান্তরিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সিত্রাং বাংলাদেশে আঘাত হানবে। ভারতে আঘাত হানার আশঙ্কা নেই। সব থেকে বেশি আঘাত হানবে বরগুনা এবং পটুয়াখালীতে।

এনামুর রহমান বলেন, এটি (ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং) এরই মধ্যে সিভিয়ার সাইক্লোনে রূপ নিয়েছে। কেন্দ্র থেকে উপকূলের দূরত্ব ৪০০ কিলোমিটারের মতো এবং পেরিফেরি (ঘূর্ণিঝড়ের সীমানা) উপকূল থেকে ১৫০ কিলোমিটারের মতো দূরত্বে আছে। তিনি বলেন, সাত হাজার ৩০টির মতো শেল্টার (আশ্রয়কেন্দ্র) প্রস্তুত করা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে লোক নেয়ার কাজ সকাল থেকে শুরু হয়েছে। এই মুহূর্তে এটি আরও জোরদার করতে হবে। আমরা আশা করি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার শতভাগ মানুষকে সরিয়ে আনতে পারব। ‘এরই মধ্যে আর্মড ফোর্স ডিভিশনের প্রতিনিধিদের বলা হয়েছে, তারা যেন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডকে সম্পৃক্ত করে। দুর্গম এলাকা থেকে লোকজনকে সরিয়ে আনার ক্ষেত্রে তারা যেন সহযোগিতা করে। তারা এতে সম্মতি দিয়েছে’ বলেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিস ও রেড ক্রিসেন্টের ভলান্টিয়াররা সিপিপি (ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি) ভলান্টিয়ারদের সাথে কাজ করছেন। কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ আরও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় যারা আছে, তারা তাদের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এটুকু বলতে পারি— সিত্রাং আজ সন্ধ্যা থেকে আগামীকাল সকাল পর্যন্ত আঘাত হানবে। উপকূলীয় ১৩টি জেলায় বেশ মারাত্মকভাবে আঘাত হানবে। আর দুটি জেলায় হালকাভাবে আঘাত হানবে। এই ১৩ জেলার মধ্যে রয়েছে— বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের দ্বীপ অঞ্চল মহেশখালী, হাতিয়া, সন্দ্বীপ এগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ। এখান থেকে লোকজন সরিয়ে নিতে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। এরই মধ্যে আমাদের মানবিক সহায়তা যা আছে পৌঁছে দিয়েছি। শেল্টারের লোকজনকে আমরা দুপুরে, রাতে ও আগামীকাল সকালে তিন বেলা খাবার দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। ১৫ জেলার কত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওা হবে? জবাবে তিনি বলেন, আম্ফানে আমরা ২৪ লাখ ৭৬ হাজার মানুষকে শেল্টার দিয়েছিলাম। এবার আমরা ২৫ লাখের মতো টার্গেটে রেখেছি।

তিন বিমানবন্দরে উড্ডয়ন-অবতরণ বন্ধ : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে উপকূলীয় অঞ্চলের তিনটি বিমানবন্দরে উড্ডয়ন এবং সার্বিক নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে উড্ডয়ন-অবতরণ কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং কক্সবাজার ও বরিশাল বিমানবন্দর গতকাল সোমবার বেলা ৩টা থেকে মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ-বেবিচক। বেবিচক এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আবহাওয়া পূর্বাভাসের প্রেক্ষিতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সম্ভাব্য প্রভাবের বিষয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে উপকূলীয় অঞ্চলের তিনটি বিমানবন্দরের উড্ডয়ন ও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে উড্ডয়ন-অবতরণ কার্যক্রম বন্ধ রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নোটাম জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া পরিস্থিতি বিবেচনা সাপেক্ষে পরবর্তীতে উড্ডয়ন কার্যক্রম পুনরায় চালু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।

সেন্ট মার্টিনে ডুবে গেছে ১৩ ট্রলার : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনে। ভোর থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে চার-পাঁচ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। ডুবে গেছে ঘাটে নোঙর করা ১৩টি ফিশিং ট্রলার। স্থানীয়রা বলছেন, এমন অবস্থা চলতে থাকলে শিগগিরই খাদ্য সংকট দেখা দেবে দ্বীপে। সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, ইতোমধ্যে সেন্ট মার্টিনে একটি সার্ভিস বোটসহ ছোট-বড় ১৩টি ট্রলার ডুবে গেছে। টেকনাফ থেকে সব ধরনের ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। যার কারণে খাদ্য সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, সাগরে পানির উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে দ্বীপের বিভিন্ন পয়েন্টে ফাটল দেখা দিয়েছে। যার কারণে হুমকির মুখে রয়েছে সেন্ট মার্টিন। দ্বীপে খাদ্যের মজুত নেই। কারণ আমরা দিনের বাজার দিনে আনি। সব ধরনের ট্রলার চলাচল বন্ধ থাকায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। প্রচণ্ড বাতাসের কারণে গাছপালা ভেঙে পড়ছে। সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, গাছপালা ভেঙে পড়ার কারণে প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি ট্রলার ডুবে গেছে। লোকজনকে নিরাপদে রাখার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় কাজ চলছে। সমুদ্রবেষ্টিত সেন্ট মার্টিনে আটকা পড়া চার শতাধিক পর্যটককে পর্যটকবাহী জাহাজের মাধ্যমে গতকাল রাতে ফিরিয়ে আনা হয়। এই মুহূর্তে সেখানে কোনো পর্যটক আটকে নেই।

ঘূর্ণিঝড়ে সেন্ট মার্টিনে ভেসে এলো জাহাজ : দেশের একমাত্র  প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপে ভেসে এলো নাবিকবিহীন পুরনো বিশাল আকারের একটি বিদেশি জাহাজ। গতকাল সোমবার দুপুরে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের মুখে পড়ে ভেসে এসে ছেঁড়াদ্বীপে আটকা পড়েছে। জাহাজের ভেতরে কনটেইনারসহ বেশ কিছু সরঞ্জাম রয়েছে। জানা যায়, নাবিকবিহীন জাহাজটির ওপরের অংশ খোলা। এতে অনেক কনটেইনার ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় মালামাল রয়েছে। জাহাজটিতে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানায়। সেন্ট মার্টিনের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, ভেসে  আসার  জাহাজটির খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন ছুটে যায়। প্রথমে পর্যটকবাহী  জাহাজ মনে হলেও পরে কাছে গিয়ে দেখা গেছে।  এটি একটি কনটেইনার বোঝাই জাহাজ। সেখানে কারো দেখা মেলেনি। যদি প্রশাসনের কেউ না আসে, তবে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল লুট হতে পারে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে জাহাজটি তীরে এসেছে। এটি কোন দেশের সেটিও বুঝতে পারছি না। বিদেশি জাহাজের খবরটি স্থানীয়রা জানালে পুলিশ প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় ২৯০টি মেডিকেল টিম গঠন করেছে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন। একই সাথে স্বাস্থ্য বিভাগের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। গতকাল সকালে এক জরুরি সভায় নেয়া হয় এই সিদ্ধান্ত। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী ২০০ ইউনিয়নে একটি করে, ১৫ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঁচটি করে ৭৫টি, চট্টগ্রামের ৯টি আরবান ডিসপেনজারিতে একটি করে ৯টি, স্কুল হেলথ ক্লিনিকে একটি এবং আন্দরকিল্লা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঁচটি মেডিকেল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রামেও আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। তাই পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে চট্টগ্রামে ২৯০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া স্বাস্থ্য বিভাগের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে বাধ্যতামূলকভাবে কর্মস্থলে অবস্থান করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সিত্রাংয়ের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে আমার সংবাদ প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ তুলে ধরা হলো— 
নাড়াইলে গাছের ডাল পড়ে মহিলার মর্মান্তিক মৃত্যু : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভারী বর্ষণ এবং দমকা হাওয়ায় নড়াইলের লোহাগড়ায় গাছের ডাল পড়ে এক গৃহপরিচারিকার মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বাগেরহাট জেলার স্বামী পরিত্যক্তা মর্জিনা বেগম (৩২) ছেলে জিহাদকে (১১) নিয়ে দীর্ঘদিন লোহাগড়া পৌর এলাকার রাজুপুর গ্রামের আব্দুল গফফারের বাড়িতে ভাড়া থেকে বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। অন্যান্য দিনের মতো গতকাল সকালে ভাড়া বাসা থেকে কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়। সকাল ১১টার দিকে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের কাছে পৌঁছলে একটি মেহগনি গাছের ডাল ভেঙে মাথার ওপর পড়ে। এতে ওই মহিলা গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা দেখতে পেয়ে মহিলাটিকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে আতঙ্কে সাতক্ষীরা উপকূলবাসী : বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাব ফেলতে পারে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায়। ইতোমধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রোববার রাত থেকে হালকা বৃষ্টি শুরু হয়ে গতকাল পর্যন্ত হালকা বাতাসসহ মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার আতঙ্কে আছেন উপকূলীয় এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। সাতক্ষীরা উপকূলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ৮০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৩৫টি পয়েন্টের ২০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিতে থাকায় ওই এলাকার জনপদগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে।

বাগেরহাটে মুষলধারে বৃষ্টি, আতঙ্ক বাড়ছে উপকূলবাসীর : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে মুষলধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। গতকাল সকাল থেকে বৃষ্টির সাথে হালকা এবং মাঝারি ধরনের দমকা হাওয়াও রয়েছে। সময় বাড়ার সাথে সাথে এই বৃষ্টি ও বাতাসের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে ঝড়ের সময় যত এগিয়ে আসছে উপকূলবাসীর আতঙ্ক তত বাড়ছে। স্থানীয়রা প্রস্তুত রয়েছেন প্রয়োজনীয় মালামাল গুছিয়ে আশ্রয়ণ কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য। মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহর বুনিয়া এলাকার হাফিজুর রহমান বলেন, সিত্রাং যদি সিডরের মতো রূপ নেয়, তাহলে আমরা খুব বিপদে পড়ে যাব। নদীবেষ্টিত আমাদের এই ইউনিয়নকে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষার জন্য কোনো বাঁধও নেই। জলোচ্ছ্বাস হলে অনেক জানমালের ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, আমাদের ৩৪৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। নির্দেশনা পাওয়া মাত্রই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের আশ্রয়ণকেন্দ্রে নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া ২৯৮ মেট্রিক টন চাল ও নগদ চার লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজন দেখা দিলেই সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিতরণের নির্দেশনা দেয়া হবে।

বরিশালে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রস্তুত স্বেচ্ছাসেবক : বঙ্গোপসাগরে  সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে বরিশালসহ উপকূলীয় এলাকায় গতরাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আগাম আবহাওয়ার পূর্ভাবাসে এরই মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় সাধারণ মানুষ পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। যদিও জানমালের হেফাজতে সম্ভাব্য বিপদগ্রস্ত মানুষকে সতর্ক করার পাশাপাশি দুর্যোগ-পরবর্তী উদ্ধার তৎপরতার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) বরিশাল বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন মিয়া জানান, ৪ নম্বর সিগন্যাল হলে সিপিপির স্বেচ্ছাসেবকরা পতাকা উত্তোলন এবং মাইকিং করবে। এ লক্ষ্যে বরিশাল অঞ্চলে ৩২ হাজার ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ধেয়ে আসছে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে। সময় যত ঘনিয়ে আসছে আরও উত্তাল হচ্ছে সাগর। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বরিশালসহ উপকূলে ঝড়োহাওয়াসহ ভারী বৃষ্টি হচ্ছে, সঙ্গে বাড়ছে বাতাসের গতিও। ঘূর্ণিঝড়টি সরাসরি বরিশাল উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এর প্রভাবে দেশের চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পাঁচ থেকে আট ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে এর প্রভাব পড়েছে বরিশাল নগরীতেও। গতকাল ভোর রাত থেকেই শুরু হয় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। বেলা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে বৃষ্টির পরিমাণ। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ছিন্নমূল মানুষ, পথচারী, কর্মজীবীসহ সব শ্রেণির মানুষ। বৃষ্টি উপেক্ষা করে চাকরিজীবীদের সকালে অফিসে যেতে দেখা গেছে। বরিশাল নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৃষ্টির কারণে রাস্তায় মানুষ ও যানবাহনের সংখ্যা ছিল তুলনামূলক অনেকটা কম। প্রয়োজন ছাড়া খুব বেশি মানুষকে রাস্তায় দেখা যায়নি। তবে যারা কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়েছেন তাদের অনেককেই সিএনজি-রিকশা করে কর্মস্থলে যেতে হয়েছে। অন্যদিকে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় নগরীর বিভিন্ন সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে পথচারীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

চাঁদপুর থেকে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে চাঁদপুরে বৃষ্টি ও বাতাসের তীব্রতা বেড়েছে। অতি বৃষ্টির কারণে জনজীবন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। চাঁদপুর লঞ্চঘাট থেকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের মধ্যে সব ধরনের যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। গতকাল বেলা ১১টা থেকে ঢাকা-চাঁদপুরের মধ্যে লঞ্চ চলাচল বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাঁদপুর বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা শাহাদাত হোসাইন।

প্রস্তুত কক্সবাজার : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় কক্সবাজার প্রস্তুত রয়েছে। একই সাথে কক্সবাজারের সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ১১৯৮ বস্তা শুকনো খাদ্য, ৩২৩ টন চাল, নগদ আট লাখ ২৫ হাজার টাকাসহ অন্যান্য সামগ্রী মজুত রাখা হয়েছে। খুলে দেয়া হয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র। প্রস্তুত রয়েছে ৮৬০০ সিপিপি সদস্যসহ ১০ হাজার ৬০০ স্বেচ্ছাসেবক, গঠন করা হয়েছে ৮৮টি মেডিকেল টিম। কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহিদ ইকবাল এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দুমকিতে কৃষি ও পল্লী বিদ্যুতের ব্যাপক ক্ষতি : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে দুদিন ধরে হালকা বৃষ্টি ও বাতাস হওয়ায় দুমকী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিভিন্ন ধরনের রেন্টি, চাম্বল, মেহগনিসহ অন্যান্য গাছ পড়ে আঠারোগাছিয়া, মুরাদিয়া, জামলা পারকার্ত্তিকপাশা, আলগী, নলদোয়ানী, পাংগাসিয়া, পাগলার মোড়সহ এলাকার ২৫টি পয়েন্টে বিদ্যুতের খুঁটি, তার ছিঁড়ে পড়ে আছে বলে জানান পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দুমকি সাব-জোনালের জুনিয়ার ইঞ্জিনিয়ার মো. জামাল উদ্দিন বিশ্বাস। এসব এলাকায় তাদের লোকজন কাজ করে যাচ্ছে। অন্যদিকে  উপজেলা  কৃষি কর্মকর্তা মেহের মালিকা জানান, আমন ধানের  এখন  পর্যন্ত আংশিক ক্ষতি হয়েছে তবে আরও ভারী বর্ষণ হলে ৪০ হেক্টর  জমির আমনসহ সবজির ক্ষতি হতে পারে।

বরগুনায় ১৭৬ সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত, আতঙ্কে উপকূলবাসী : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে উপকূলীয় আমতলী ও তালতলী উপজেলায় গত রোববার রাতভর ভারী বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে দুই উপজেলার আমন ধান ও সবজির ক্ষেত। তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মানুষকে আশ্রয়ণকেন্দ্রে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। দুই উপজেলায় ১৭৬টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপকূলের এক লাখ মানুষকে সাইক্লোণ শেল্টারে নিতে তিন হাজার ৪৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। উপকূলের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।  

জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। উপকূলীয় আমতলী ও তালতলীকে ৭নং বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সাগর ও পায়রা নদীতে মাছ ধরারত জেলে ট্রলার ও নৌকাকে নিরাপদ স্থানে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় সাগর ও পায়রা নদীতে মাছ ধরা ট্রলার ও নৌকা অবস্থান করছে না, তারা নিরাপদ স্থানে অবস্থান করছে। এদিকে সোমবার রাতভর ভারী বর্ষণে আমতলী ও তালতলীতে আমন ধান ও সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ধসে পড়েছে পানের বরজ। পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তাল সাগর ও নদীর ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ছে। এতে পায়রা নদীর চার কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে চাওড়া ঘটখালীর তিনশ মিটার, বালিয়াতলীর দুই কিলোমিটার ও জয়ালভাঙ্গার এক কিলোমিটার বাঁধ অধিক ঝুঁকিতে রয়েছে। এদিকে দুপুর ১২টা থেকে আমতলী ও তালতলী উপজেলা প্রশাসন তিন হাজার ৪৬০ জন সিপিপির স্বেচ্ছাসেবক নিম্নাঞ্চলের মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে কাজ করছে। উপজেলার মানুষকে সচেতন করতে সর্বত্র মাইকিং করা হয়েছে। দুই উপজেলায় এক লাখ মানুষের জন্য ১৭৬টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শুকনো খাবার মজুত রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন আমতলী  উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জামাল হোসাইন। ঘূর্ণিঝড়ের খবর শুনে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে প্রস্তুত রয়েছে।

গতকাল বিকালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাগর ও পায়রা নদী সংলগ্ন নিদ্রা সকিনা, আশারচর, জলায়ভাঙ্গা, খোট্টারচর, আমখোলা, তালুকদারপাড়া, আগাপাড়া, নিউপাড়া, ফকিরহাট, চরপাড়া, গাবতলী, পচাঁকোড়ালিয়া, বালিয়াতলী, আড়পাঙ্গাশিয়া, পশ্চিম আমতলী, আমুয়ার চর, ঘটখালী, গুলিশাখালী ও হরিদ্রাবাড়িয়ার এলাকার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

Link copied!