Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪,

দাবি আদায়ে ঘুরছে গ্রাহক

জাহিদুল ইসলাম

ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩, ১২:৫২ পিএম


দাবি আদায়ে ঘুরছে গ্রাহক
  • পাঁচ বছরেও অগ্নিবিমা দাবি পায়নি সরকার প্রিন্টিং
  • এসবিসি-মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স পরস্পর দোষারোপ
  • আইডিআরএর নির্দেশনাও পাত্তা পাচ্ছে না

বিমা খাতের প্রতি মানুষের অনীহার সবচেয়ে বড় কারণ দাবি পেতে ভোগান্তি। ২০২৩ সালের বর্তমান সময়ে এসেও যেন সেই ভোগান্তি থেকে নিস্তার পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। বরং অনিয়ম যেন আরো জেঁকে বসেছে। সাধারণ মানুষ তো দূরে থাক! প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা পর্যন্ত বিমার এ ধরনের কতিপয় অর্থ আত্মসাৎকারীদের কবলে পড়ে ঘুরতে থাকেন বছরের পর বছর। তেমনই একটি প্রতিষ্ঠান সরকার প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং। দীর্ঘ পাঁচ বছরেও প্রতিষ্ঠানটি তার দাবির টাকা পায়নি। এমনকি আইডিআরএর কাছে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি। এখন প্রতিষ্ঠানটির মালিক বিমার কথা শুনলেই জ্বলে ওঠেন তেলেবেগুনে। আত্মীয়-স্বজন এমনকি পরিচিতজনদেরও নিরুৎসাহিত করছেন বিমা করতে। জানা গেছে, সম্পদের রক্ষাকবচ হিসেবে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর  মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে পাঁচটি অগ্নিবিমা পলিসি করেন সরকার প্রিন্টিংয়ের স্বত্ব্বাধিকারী আবু নাসের

সরকার দুলাল। সে সময় তাকে জানানো হয়, সামান্য কিছু প্রিমিয়ামের মাধ্যমে কোটি টাকা সম্পদের সুরক্ষা দেবে প্রতিষ্ঠানটি। দাবি পেতেও পোহাতে হবে না কোনো ভোগান্তি। কিন্তু গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে কারখানাটিতে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে বিমার বাস্তব চিত্র তার সামনে আসে। বিমা প্রতিষ্ঠানকে জানানো, জরিপকারীর পরিদর্শন, পরিদর্শন প্রতিবেদন, ফায়ার সার্ভিস ডকুমেন্টস, দাবির আবেদন, দাবি পেতে স্টোর ম্যানটেইনেন্স লেজারসহ প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্রাদি দাখিলের পরও পায়নি বিমা দাবির টাকা। সর্বশেষ গত বছরের ১২ মে দুর্ঘটনাকবলিত প্রতিষ্ঠানটির ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের জন্য বলে মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, যা বিধি বহির্ভূত বলে জানিয়েছেন গ্রাহক। গ্রাহক বলেন, ট্যাক্স রিটার্ন একান্তই আমার গোপনীয় বিষয়। বিমা করা সময় এ ধরনের কোনো বিষয় উল্লেখ ছিল না। তা হলে এখন কেন এসব অযৌক্তিত দাবি তুলবে। আর সেই দাবি পাঁচ বছর পর কেন? এই কাগজ লাগবে সেটি তো আরো পাঁচ বছর আগে দুর্ঘটনার পরপরই বলতে পারত। এগুলো আসলে টাকা মারার অপকৌশল। এ জন্যই বিমা কোম্পানির কাছে মানুষ পারতপক্ষে যায় না।

এদিকে কয়েকটি বিমা কোম্পানির সিইওর সাথে কথা বলে জানা গেছে, গ্রাহকের দাবির বিষয়টি শুধু সংশ্লিষ্ট বিমা কোম্পানি নয়, এখানে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনেরও (এসবিসি) দায় রয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে ক্লেমের বিষয়টি ফার্স্ট পার্টি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকেই দেখতে হয়, কারণ গ্রাহক তো আর এসবিসিকে দেখে বিমা করেনি। তা ছাড়া পলিসি করার সময় গ্রাহক এটিও বলা হয়নি, এসবিসি থেকে রি-ইন্স্যুরেন্স ক্লেম দিলে তবেই গ্রাহক দাবির টাকা পাবে। তাই বিষয়টি মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের ওপরই বর্তায়। দীর্ঘদিন দাবি অনাদায়ী এবং নতুন করে কাগজ চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের সিইও ফিরোজ আহমেদের কাছে। তিনি আমার সংবাদকে বলেন, ট্যাক্স রিটার্ন দরকার নেই। এটি আসলে চেয়েছে রি-ইন্স্যুরার এসবিসি। তাদের কারণেই দাবি পরিশোধে বিলম্ব হচ্ছে। না হয়, আরো আগে দাবি পরিশোধ হয়ে যেত। তিনি বলেন, এর সমাধান আইডিআরএ করতে পারত। কিন্তু তারাও করেনি। এটি আইডিআরএ শুনানি করেছিল গ্রাহক, আমরা ও এসবিসিকে নিয়ে। সেখানে এসবিসিকে বলা হয়েছে— ক্লেমটি দিয়ে দেয়ার জন্য, কিন্তু তারা শোনেনি। তারা (এসবিসি) বলেছে, ক্লেম দিতে নির্দেশ দেয়ার অধিকার আইডিআরএর নেই। অবশ্য তিনি স্বীকার করেন, এসবিসি থেকে ক্লেম পেলে দাবি পরিশোধ করা হবে— বিমা করার সময় গ্রাহককে এমন কিছু বলা হয়নি।

গ্রাহক ভোগান্তির কারণে বিমা খাতে সুনাম নষ্ট হচ্ছে কি-না, এমনটি জানতে চাইলে বলেন, অবশ্যই নষ্ট হচ্ছে। সে তার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে বলছে বিমা না করতে। এসবের দায় আমাদেরই নিতে হয়। কিন্তু যাদের কারণে এমন হচ্ছে তারা কি করছে? সাধারণ বীমার সাথে একটি রিটেনশন আছে, সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা পর্যন্ত কোম্পানি বিমা দাবি পরিশোধ করবে। বাকিটা সাধারণ বীমা করবে। আমি নিজেই বিমা নিয়ে হতাশ, গ্রাহকের কথা কি বলব। হয়তো শেষ পর্যন্ত গ্রাহককে আইনের আশ্রয় নেয়া লাগতে পারে। এমন একটি ঘটনা বহু বছর আগে হয়েছিল। ৯৩ লাখ টাকা দাবি পরিশোধ করেনি এসবিসি। ১০ বছর পরে ১৮ কোটি টাকা দিতে বাধ্য হয়েছে। হয়তো শেষ পর্যন্ত এটিও তেমন হবে। এদিকে বিমা দাবি দীর্ঘায়িত করার বিষয়ে এসবিসির পুনঃবিমা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, রি-ইন্স্যুরার হিসেবে এসবিসি মূলত রিকভারি দেয়। ক্লেম সেটেলমেন্ট করে কোম্পানি। সেটেল করে এরপর তারা আমাদের কাছ থেকে রিকভারি নেয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের বোর্ড ও ক্লেম কমিটির অনুমোদন লাগে। এ ক্ষেত্রে কিছু রিক্যুইজিট পেপার আমাদের কর্তৃপক্ষ চেয়েছে, কিন্তু কোম্পানি এখনো তা জমা দিতে পারেনি। দাবি পরিশোধে পলিসিহোল্ডারের ট্যাক্স রিটার্ন প্রয়োজন কেন, এমনটি জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, বড় ক্লেমের ক্ষেত্রে এটি হয়। মূলত গ্রাহক যে স্টক পজিশন দেখায়, মেশিনারিজ বা অন্যান্য জিনিসের ক্ষতি, এর সাথে তাদের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী মিল রয়েছে কি-না, তা যাচাই করতে ট্যাক্স রিটার্ন চাওয়া হয়। সংক্ষিপ্তভাবে বললে, ট্যাক্স রিটার্নের সাথে অডিটেড অ্যাকাউন্টসও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানকে জমা দিতে হয়। আমরা আসলে অডিটেড অ্যাকাউন্টসই দেখতে চাচ্ছি যে, তারা যে স্টক দেখাচ্ছে বড় ক্ষতির, তার সাথে মিল আছে কি-না। তবে এ বিষয়ে আইডিআরএর পদক্ষেপ জানতে চেয়ে মুখপাত্র জাহাঙ্গির আলমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি একটি মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

Link copied!