Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪,

বেকারের কাঁধে রাজস্বের বোঝা

মো. নাঈমুল হক

মো. নাঈমুল হক

ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৩, ০৩:০২ পিএম


বেকারের কাঁধে রাজস্বের বোঝা

সরকার ইচ্ছা করলে বেকারদের চাকরি বাবদ ফি মওকুফ করতে পারে

—ড. মীজানুর রহমান

সাবেক ভিসি, জবি

আবেদন ফি বাড়ানো হয়নি সমন্বয় করা হয়েছে

—মো. গোলাম মোস্তফা

অতিরিক্ত সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়

স্নাতক উত্তীর্ণ হওয়ার পর লাখ লাখ শিক্ষার্থী চাকরির প্রতিযোগিতায় নামেন। স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পাস একজন শিক্ষার্থীকে এই সময়ে চরম আর্থিক টানাপড়েনে থাকতে হয়। চাকরির প্রস্তুতির পাশাপাশি নিজস্ব খরচ নির্বাহে চাপে থাকেন গ্রাজ্যুয়েটরা। কারো ক্ষেত্রে পরিবারের খরচ বহনের দায়িত্বও থাকে। এমনি পরিস্থিতে প্রতি মাসে কমপক্ষে চারটি চাকরির পরীক্ষায় ছুটতে হয়। প্রতি মাসে আবেদন ফি বাবদ এক থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হয়। এরপরও সরকার বেকারদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে আবেদন ফি নামক বোঝা। আবার অনেক সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান সরকার নির্ধারিত ফি থেকেও বেশি নিচ্ছে। চাকরিপ্রার্থীদের বক্তব্য হচ্ছে— সরকার নির্ধারিত চাকরির ফি আগে কম ছিল। বর্তমানে এ ফি বাড়ানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, আবেদন ফি বাড়ানো হয়নি, সমন্বয় করা হয়েছে। শিক্ষাবিদরা বলেন, সরকার ইচ্ছা করলে বেকারদের থেকে চাকরি বাবদ ফি মওকুফ করতে পারে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭-এর হিসাব বলছে, দেশে কর্মক্ষম বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। যদিও বাস্তবে বেকারের সংখ্যা আরও বেশি। দেশে শ্রমশক্তির মোট পরিমাণ পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ। এর মধ্যে কাজ করছে পাঁচ কোটি ৫১ লাখ ৮০ হাজার জন। প্রতি বছর দেশের শ্রমবাজারে কয়েক লাখ যুবক প্রবেশ করে। তাদের জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বরে অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আবেদন ফি নির্ধারণ করে দেয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে— সরকারি সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহে জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে নিম্মলিখিত আবেদন ফি বেঁধে দেয়া হচ্ছে, নবম গ্রেড বা এর বেশি গ্রেডভুক্ত পদে ৬০০ টাকা, দশম গ্রেডের পদে ৫০০ টাকা, ১১ থেকে ১২তম গ্রেডের জন্য ৩০০ টাকা, ১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডের জন্য ২০০ টাকা ও ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডের জন্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত আবেদন ফি এর চেয়ে বেশি নিচ্ছে। গত বছরের ২২ নভেম্বর ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ১৫তম গ্রেডের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আবেদন ফি ছিল এক হাজার টাকা। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) ডিসেম্বরের এমপিওভুক্ত প্রায় ৭০ হাজার নিয়োগ পরীক্ষার আবেদন ফি ছিল এক হাজার টাকা। যদিও এর আগেই নিবন্ধন পরীক্ষার জন্য ফি নেয়া হয়েছিল।

অতিরিক্ত ফি নেয়ার বিষয়ে এনটিআরসিএর যুগ্ম সচিব এ এস এম জাকির হোসেন আমার সংবাদের প্রতিবেদকের প্রশ্ন শুনে ফোন রেখে দেন। এরপর যোগাযোগের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

নিজের অবস্থার কথা জানিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমরান আহমেদ বলেন, পড়ালেখা শেষে পরিবার থেকে চাকরির জন্য চাপে থাকতে হয়। চাইলেই চাকরি পাওয়া যায় না। গত চার বছরের ধরে বিভিন্ন স্থানে চাকরির পরীক্ষা দিয়ে প্রচুর টাকা খরচ হয়েছে। এমনিতেই নিজের খরচ চালানোর জন্য অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়। এর মধ্যে চাকরির ফি জোগানো আমাদের জন্য বাড়তি বোঝা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান বলেন, একটি পদে চাকরির জন্য প্রায় লক্ষাধিক প্রার্থী আবেদন করেন। সার্কুলারে হাজারের ওপর পদ থাকলে আবেদনকারীর সংখ্যা কয়েক লাখে ছাড়িয়ে যায়। সবাই তো চাকরি পান না। এভাবে কয়েক বছর চেষ্টা করা পর একজন প্রার্থী চাকরি পান। কিন্তু এর মধ্যে তার আবেদন ফি বাবদ লাখের বেশি টাকা খরচ হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম বলেন, বিদেশে বেকারদের জন্য সরকার নির্ধারিত ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ থাকে। আমরা যেহেতু তৃৃতীয় বিশ্বের নাগরিক সে জন্য আমাদের চাকরির আবেদন ফি বাদ দেয়া প্রয়োজন। আবেদন ফি আগে কম ছিল। সরকার এখন সেটি বাড়িয়ে দিয়েছে। ১১-১৬ পর্যন্ত আগে ১০০ টাকা নেয়া হতো। এখন ১১-১২তম গ্রেডের জন্য ৩০০  টাকা ও ১৩ থেকে ১৬ তম গ্রেডের জন্য ২০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে। ১৭-২০ এর ক্ষেত্রে ৫০ টাকা থাকলেও এখন ১০০ টাকা হয়েছে। আবেদন ফি সমন্বয় করা হয়েছে জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘চাকরির আবেদন ফি সরকারের আয়ের উৎস নয়। আবেদন ফি নেয়ার ক্ষেত্রে সব প্রতিষ্ঠানকে একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা আমাদের লক্ষ্য। প্রজ্ঞাপনে যেসব প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তারা যেন এটি মানে সে ব্যবস্থা করা হবে। আগে নবম ও দশম গ্রেডের আবেদন ফি এক সাথে ৫০০ টাকা ছিল। এখন সেটি আলাদা নবম গ্রেডের ক্ষেত্রে ৬০০ টাকা ও দশম গ্রেডের ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বেকারদের জন্য আবেদন ফি মওকুফের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি সরকারি সিদ্ধান্ত। সরকার চাইলে এ ফি নাও নিতে পারে।’ এ ব্যাপারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও শিক্ষাবিদ ড. মিজানুর রহমান বলেন, ‘উন্নত ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে বেকাররা ভাতা পান। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের চাকরির আবেদনের জন্য টাকা দিতে হয়। সরকার চাইলে নিজস্ব খরচে, চাকরির পরীক্ষা নিতে পারে। তবে একটি চাকরির পরীক্ষায় কেন্দ্র ভাড়া, পরীক্ষকদের ভাতা, প্রশ্ন প্রণয়ন, খাতা দেখা ও ফল প্রকাশ করাসহ আরো বিভিন্ন খরচ রয়েছে। অন্যদিকে সরকার সর্বোচ্চ ফি বেঁধে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত হচ্ছে, বেঁধে দেয়া ফি থেকে কম টাকা নেয়া।’

Link copied!