Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪,

আইন ভাঙল অ্যাপোলো ইস্পাত

এমডি-পরিচালকদের অর্থদণ্ড

মো. মাসুম বিল্লাহ

মার্চ ২০, ২০২৩, ১১:৩৬ এএম


এমডি-পরিচালকদের অর্থদণ্ড

আইন ভঙ্গ করে শাস্তির মুখে পড়েছেন অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেডের পর্ষদ। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তিন পরিচালককে এক কোটি টাকা করে মোট চার কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন ২২ এর অধীন শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় কোম্পানির পরিচালক ইভানা ফাহমিদা মাহমুদ, রোকসানা বেগম, এম এ মাজেদ ও এমডি মোহাম্মদ রফিকুলকে শাস্তির আওতায় এনেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি।

জানা গেছে, চার বছর ধরে শেয়ার হোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়নি অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেড। এছাড়া উৎপাদন বন্ধ রাখার পাশাপাশি ঋণে জর্জড়িত হয়ে কঠিন সময় পার করছে কোম্পানিটি। আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকলেও গত চার বছর ধরে কোম্পানির অবস্থা বিনিয়োগকারী, বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জকে জানায়নি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, কোম্পানির পর্ষদ ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনেক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

কোম্পানির তিন পরিচালক ও এমডিকে এক বছর ৯ মাসের আর্থিক প্রতিবেদন জমা না দেয়ার কারণে চার কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত এক বছর এবং ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের ২১ মার্চ পর্যন্ত মোট ৯ মাসের তিন প্রান্তিকের প্রতিবেদন জমা দেয়নি অ্যাপোলো ইস্পাত।

নিয়ম অনুসারে, এক বছরের আর্থিক প্রতিবেদন বছর শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জ, বিএসইসি ও গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে হয়। আর প্রতি প্রান্তিক অর্থাৎ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিক শেষ হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে প্রকাশ করতে হয়। কোম্পানি এসব নিয়মও ভঙ্গ করেছে। বিএসইসির বিশেষ তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, অ্যাপোলো
ইস্পাত ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০ এর রুলস ১৪ (৪) মোতাবেক প্রস্তুতপূর্বক সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন, স্টক এক্সচেঞ্জ ও শেয়ার হোল্ডারদের কাছে দাখিল করতে বাধ্য যা পরিপালনে উক্ত ইস্যুয়ার ব্যর্থ হয়েছে।

এছাড়াও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর সেকশন-২ সিসির অধীনে জারিকৃত সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশনের নোটিফিকেশন অনুযায়ী হিসাব বিবরণী দাখিল করতে ব্যর্থ হয়েছে কোম্পানিটি। বিএসইসির শুনানিতে প্রতিবেদন জমা না দেয়ার উপযুক্ত কারণ ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হওয়ায় পর্ষদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন।

বিএসইসির প্রতিবেদনে বলা হয়, অ্যাপোলো ইস্পাতের বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়, উপস্থাপিত অভিযোগগুলো সঠিক। এ ক্ষেত্রে অ্যাপোলো ইস্পাতের ব্যাখ্যা কমিশনের কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি। এটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হওয়ায় এর পরিচালকমণ্ডলীর সদস্য ও প্রতিনিধিরা সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত আইন ও বিধিবিধান পরিপালনের ব্যর্থতার জন্য দায়ী।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ জুন কোম্পানির সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, কোম্পানির ব্যাংক ঋণ রয়েছে ৩০৬ কোটি ৫০ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে স্বল্প মেয়াদি ঋণ রয়েছে ২৩৫ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আর দীর্ঘমেয়াদি ঋণ রয়েছে ৭০ কোটি ৬১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানের ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮৭২ কোটি ৭২ লাখ টাকা। ঋণে জর্জরিত কোম্পানির এই অবস্থা দেখে কোম্পানির শেয়ারের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে ২০২২ সালে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে কোম্পানির শেয়ারের কোনো ক্রেতা নেই। তাই কোনো শেয়ার লেনদেন হয়নি। কোম্পানির শেয়ার ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ আট টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হয়েছিল।

২০১৩ সালে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ৪০ কোটি ১৩ লাখ আট হাজার ৬০০ শেয়ার রয়েছে। প্রকৌশল খাতের এই কোম্পানি তালিকাভুক্ত হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে আর কোনো লভ্যাংশের মুখ দেখেনি। অর্থাৎ ৩০ জুন ২০১৮ সমাপ্ত বছরের ৩ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছিল। তারপর থেকে ২০১৯, ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ মোট চার বছর ধরে লভ্যাংশ দেয়নি।

Link copied!