Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

নির্বাচনে ভিন্ন নীতিতে জামায়াত

আবদুর রহিম

জুন ৬, ২০২৩, ০৭:৫৫ এএম


নির্বাচনে ভিন্ন নীতিতে জামায়াত
  • সুশীল নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনেও দ্বিমত
  • তৃতীয় পক্ষের নিয়ন্ত্রণ রুখতে ঐক্যের চেষ্টা
  • বিএনপির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন কর্মসূচি
  • আ.লীগ বিএনপি সবার সঙ্গে সখ্য বাড়াচ্ছে

নির্বাচনের আর মাত্র ছয় মাস বাকি। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য সরকারে রয়েছে বিদেশি চাপ। আবার দেশের সুশীল শ্রেণির বড় একটি অংশ দুই-তিন বছরের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার গঠনেরও দাবি তুলছে। দেশের বিচার ব্যবস্থা, অর্থনীতি, দুর্নীতি মুক্ততে এই সময় সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। সরকারবিরোধীরা বলছেন, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন দিতে হবে। অন্যথায় আন্দোলনে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করা হবে। 

এদিকে আওয়ামী লীগ তাদের সিদ্ধান্তে অনঢ়। কোনো নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। এমন পরিস্থিতিতে গেলো মাসে মার্কিন ভিসানীতি দেয়া হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ সরকার যেমন অস্বস্তিতে রয়েছে তেমনি জামায়াতে ইসলামীও এ প্রভাবকে ওয়েলকাম জানাচ্ছে না বলে শীর্ষ পর্যায় থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর জামায়াতে ইসলামী সরকারের সঙ্গে বসে ডোন্ট ডিস্টার্ব নীতি গ্রহণ করে বলেও রাজনীতির মাঠে কথা রয়েছে। তবে সেটি তিন বছরের বেশি যায়নি। দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান,নায়েবে আমির মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানকে গ্রেপ্তারের পর সেই নীতিও ভঙ্গ হয়। যদিও দলটির একাংশের দাবি করছেন, সরকার বিএনপির বিকল্প তৈরিতে জামায়াতকে ভোটে নিতে নেতাদের আটক করেছে। 

তবে জামায়াতের হাইকমান্ড এই কথাকে উড়িয়ে দেয়। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাংলাদেশের রাজনীতে আঁধারের ছায়া দৃশ্যত হচ্ছে। মৌলিক রাজনৈতিক দলের বাইরে অনেকেই হস্তক্ষেপ করতে চাচ্ছে। এমন পরিস্থতিতে দেশে নানা সময়ে আলোচিত সমালোচিত দল জামায়াত সব রাজনৈতিক দলের ঐক্য তৈরিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। একটি ভিন্ন চাওয়া নিয়ে কাজ করছেন দলটি। দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর থেকে বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলছে জামায়াত। দল ছাড়াছাড়ি নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক কথা এসেছে। তবে প্রকাশ্যে দলীয় ঘোষণা দেননি কেউ। এমন টানাটানির মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে ১০ ডিসেম্বর যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা আসে। তাদের সঙ্গে একই ছকে জামায়াতও সেদিন সংবাদ সম্মেলন করে সারাদেশে কর্মসূচি দেন। ৩০ ডিসেম্বর মালিবাগ মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে দলটির। আটকও হন কয়েকজন নেতাকর্মী। এ নিয়ে বিএনপি কোনো প্রতিক্রিয়া না দেয়ায় আবারও দূরে সরে যায় দলটি। এখন নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও জামায়াত বিএনপির সংসার জোড়া লাগছে। জামায়াত বলছে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য, সংঘাত সহিংসতা মুক্ত নির্বাচনের জন্য তারা এটি চাচ্ছে। এ জন্য বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারাও আগামী ১০ জুন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ওই দিন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বিভাগীয় তারুণ্য সমাবেশ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হয়ে জামায়াতের শীর্ষ দুই নির্বাহী সদস্য আমার সংবাদকে জানান, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি পক্ষ দেশে সংঘাত চাচ্ছে। এতে করে তৃতীয় পক্ষ রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবে। জামায়াত সেগুলো বুঝেই সতর্কতার সঙ্গে পা বাড়াবে। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামী চায় না দেশের নেতৃত্ব রাজনৈতিক ব্যক্তির বাইরে অন্য কারো কাছে যাক। জামায়াত অতীতেও চেয়েছে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। এবারও সেটিই চাচ্ছে। এ জন্য তারা সরকারের সঙ্গেও আলোচনায় বসতে চান। আন্দোলনে খারাপ পরিস্থিতি কোনো রাজনৈতিক দলের জন্যই শুভ নয়। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামী সুশীলদের মাধ্যমে কিছু সময় অন্তর্বর্তী সরকারের যে আওয়াজ শোনা যাচ্ছে সেটিও চায় না। এতে করে দেশের রাজনীতির ইতিহাস বিকৃতি হতে পারে বলেও মনে করছেন তারা। এ জন্য চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার আগে সরকারকে যেমন আলোচনার জন্য চেষ্টা করবেন একইভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বিএনপির সঙ্গেও রাজনীতি কর্মকাণ্ড করে যাবে দলটি। জামায়াত চায় না দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কেউ হস্তক্ষেপ করুন। দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিজেরা বসেই সমাধান করুক। রাজনীতির বাইরে কেউ নিয়ন্ত্রণে না আসুক— এমনি ভাষ্য দলটিতে।  

পিছু হটল জামায়াত : পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় পূর্বনির্ধারিত ঘোষণায় কর্মসূচি পালন থেকে পিছু হটল জামায়াতে ইসলামী। গতকাল ৫জুন কর্মসূচি স্থগিত করে নতুন তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১০ জুন শনিবার দুপুর ২টায় বায়তুল মোকাররমে ফের সমাবেশ ও মিছিল পালন করবে বলে জানায় দলটি। গতকাল সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল। এর আগে পুলিশের ভাষ্য ছিল জামায়াত সরকারি কার্যদিবসে কর্মসূচি করে বিশৃঙ্খলা করতে চায় এ জন্য দলটি এখন বন্ধের দিনে কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।

নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে স্বাধীনভাবে চলাফেরা, মত প্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ মিছিল-সভা সমাবেশ করার অধিকার রাখা হয়েছে। সংবিধান স্বীকৃত এই অধিকার বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। সংবিধান হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন। যেহেতু সংবিধানে মিটিং-মিছিলের কথা বলা হয়েছে, তাই মিটিং-মিছিলে বাধা দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই। অথচ গত ১৫ বছর যাবত রাজপথে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি পুলিশের নিকট শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা ও অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হলে উল্টো হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। 
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, জনগণের অধিকার আদায়ে সুনির্দিষ্ট তিনটি দাবিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন, নেতাদের মুক্তি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করতে চায় জামায়াতে। গোয়েন্দা প্রধান এখানে কীসের অসৎ উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছেন? রাষ্ট্রের সেবক হয়ে অসত্য কাল্পনিক কথা বলে রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়া সম্পূর্ণ বেআইনি।
 

Link copied!