ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad
সংকটেও বিদ্যুৎ চুরি

ফুটপাতে অবৈধ সংযোগ

মহিউদ্দিন রাব্বানি

জুলাই ২৭, ২০২৩, ১২:৫২ এএম

ফুটপাতে অবৈধ সংযোগ
  • ঢাকার ফুটপাতে জ্বলছে পাঁচ লাখ বাতি
  • জড়িত ডিপিডিসি-ডেসকোর কর্মচারী
  • সরকার হারাচ্ছে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব

এসব অবৈধ সংযোগ বন্ধে আমরা তৎপর

প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডিপিডিসি

দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি মোকাবিলায় যখন হিমশিম খাচ্ছে সরকার তখনো বিদ্যুৎ চুরি ঠেকানোর বিশেষ উদ্যোগ নেই। সংকটেও হরহামেশাই চুরি হচ্ছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুতে ঘাটতি মোকাবিলায় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এত উদ্যোগ নেয়ার পরও ঠেকানো যাচ্ছে না বিদ্যুৎ চুরি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ফুটপাত-দোকান-পাটে অবৈধ সংযোগের নামে চলছে বিদ্যুৎ চুরির মহোৎসব। 

রাজধানীর ফুটপাতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ দোকানে জ্বলছে পাঁচ লাখেরও বেশি বাতি। এর প্রায় সবই চলছে অবৈধ সংযোগে। এলাকা বেধে স্থানীয় চক্র প্রতিদিন এসব বাতিপ্রতি নিচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। যার ফলে ফুটপাতের একজন দোকানিকে প্রতি মাসে ৭৫০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হয় এক বাতির জন্য যা এখন ওপেন সিক্রেট। সংঘবদ্ধ একটি অসাধু চক্র বিদ্যুতের অবৈধ সংযোগ দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এতে করে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, অন্য দিকে বিদ্যুৎ সংকটে ভুগছেন বৈধ গ্রাহকরা। কখনো কখনো ডিপিডিসি বা ডেসকো এসব অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করে। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ফের সংযোগ নিয়ে থাকে বিদ্যুৎ চুরির সাথে জড়িতরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমাদেরকে সরকার বৈধ সংযোগ আর কোনো অসুবিধা থাকে না। আমাদেরও অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হয় না। এ ছাড়াও সরকারও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় না। তারা বলেন, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কারণেই বন্ধ হচ্ছে না এসব অবৈধ সংযোগ।

সন্ধ্যা হলেই রাজধানীর ফুটপাতে জ্বলে ওঠে লাখ লাখ বৈদ্যুতিক বাল্ব। স্থানীয় প্রভাবশালী ও এক শ্রেণির দালাল এসব বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ দিয়ে চুটিয়ে অবৈধ ব্যবসা করছে। পকেট ভরছে ডেসকো-ডিপিডিসির এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, কর্মচারী, প্রভাবশালী ও মাস্তান। সূত্র মতে, শুধু ঢাকা শহরেই ডিপিডিসির (ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি) সরবরাহকৃত বিদ্যুতের ২০-২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অবৈধভাবে ব্যবহূত হচ্ছে। আর এ অবৈধ বিদ্যুতের অধিকাংশই ব্যবহার করা হচ্ছে রাতের বেলায় ঢাকার ফুটপাতে। ঢাকার কয়েক লাখ হকার ফুটপাতে যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে তার পুরোটাই অবৈধ সংযোগ বলে বিবেচিত। ফুটপাতে বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য মিটারের ব্যবস্থা নেই। তাই কতটুকু বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে তার কোনো হিসাবও নেই। 

ডিপিডিসি কর্মকর্তারা জানান, এসব অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নে লাইনম্যান, ইঞ্জিনিয়ার এবং টাস্কফোর্স প্রতিনিয়ত এসব এলাকা মনিটরিং করছে। গুলিস্তানের এক ব্যবসায়ী আমার সংবাদকে বলেন, সন্ধার পর থেকে মাত্র তিন ঘণ্টা দোকান খোলা রাখতে পারি। এরপরই দোকান বন্ধ করতে হয়। এই তিন ঘণ্টার জন্য একটি লাইট ব্যবহার করি। এতে প্রতিদিন ৩০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। পল্টন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিকেলের পর থেকেই জ্বলছে বিদ্যুতের বাতি। এসব দোকানে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে দিনের বেলা সূর্যের আলোতেও জ্বলছে বৈদ্যুতিক ভাল্ব। সূত্র জানায়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রায় ১৬৩ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ফুটপাত। এসব ফুটপাতে সন্ধ্যা হলে লাখ লাখ বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বলে ওঠে। চলে রাত ১১টা পর্যন্ত।  অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফুটপাতের বেশির ভাগ সংযোগই অবৈধ। তবে  কিছু কিছু বৈধ সংযোগও রয়েছে। অবৈধ সংযোগের জন্য ঢাকার কয়েকটি এলাকায় দালাল নিয়োগ করা আছে। তারাই নিজ নিজ এলাকার ফুটপাতের বৈদ্যুতিক সংযোগ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এ জন্য তাদেরকে কয়েকগুণ বেশি টাকা দিতে হয়। যেমন— একটি ২০ ওয়াটের এনার্জি সেভিং বাল্ব রাতে পাঁচ ঘণ্টা জ্বললে মাসে ২০০ টাকার বেশি বিল হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ফুটপাতে জ্বালানোর জন্য প্রতিদিন দিতে হয় বাল্বপ্রতি ৩০ টাকা। অর্থাৎ মাসে ৯০০ টাকা। এই বাড়তি টাকা যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট দালাল, প্রভাবশালী, বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় মাস্তানদের পকেটে।

রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল, গুলিস্তান ও জুরাইন, মহাখালী, মিরপুর এলাকার ফুটপাতের হকারদের সাথে কথা বললে কয়েকজন হকার জানান, মিটার আছে কি নাই তা তাদের জানা নাই। বাল্বপ্রতি ৩০ টাকা করে তারা প্রতিদিন বিল দেন। রাস্তার হকাররা একটি এবং ফুটপাতের হকাররা তিনটি থেকে পাঁচটি লাইটও ব্যবহার করেন। দালালকে সেই হিসাবেই টাকা দিতে হয়।  

রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বর, সোনালী ব্যাংকের পেছনে, আলিকো ভবন থেকে মধুমিতা সিনেমা হল, দৈনিক বাংলা মোড় থেকে ফকিরেরপুল, বিমান অফিসের আশেপাশে, রাজউক ভবনের সামনে, সড়ক ভবনের সামনে ও স্টেডিয়ামের গেটের দুদিকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় কয়েক হাজার দোকান বসে। এসব দোকানে সন্ধ্যা হলেই হাজার হাজার বাল্ব জ্বলে। দোকানগুলোর আশপাশের মেইন লাইন থেকে বৈদ্যুতিক সংযোগ নেয়া। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাত নিয়ন্ত্রণ করছে একেক ব্যক্তি। গুলিস্তান এলাকায় প্রায় তিন হাজার সংযোগের মালিক নুরু নামের এক ব্যক্তি। মাসিক আয় কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা। এই অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে সে এখন কোটিপতি। তার পক্ষ হয়ে কাজ করে মতিঝিল এলাকার কয়েকজন লাইনম্যান। তারাই নামমাত্র কয়েকটি মিটার দেখিয়ে সেখানে মাস শেষে কয়েক হাজার টাকা বিল জমা দেয়। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার বাইরে নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাত ও সড়কের বিপণিবিতানে শত শত অবৈধ বিদ্যুৎ বাতি জ্বলে। একটি বাতি থেকে দিনে গড়ে ২৫ টাকা আদায় করা হয়। সে হিসাবে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে শহরের প্রভাবশালী একটি চক্র। এভাবে চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় এসব অবৈধ সংযোগে চলছে বিদ্যুতে হরিলুট। ডিপিডিসি সূত্র জানায়, অবৈধভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে জরিমানার বিধান আছে। আবাসিক, বাণিজ্যিক, দাতব্য প্রতিষ্ঠান, স্ট্রিট লাইটের জন্য ৫০০ টাকা, সেচ সংযোগ পাঁচ হাজার টাকা, শিল্প কারখানা (৪৫ কেভিএ পর্যন্ত) সাত হাজার ৫০০ টাকা, শিল্প কারখানা (৪৫ কেভিএ থেকে ৭৫ কেভিএ পর্যন্ত) শিল্প কারখানা (৭৫ কেভিএর ঊর্ধ্বে) ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু ফুটপাতের ক্ষেত্রে এসব বিধান শুধু কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ। জানতে চাইলে ডিপিডিসির এক কর্মকর্তা আমার সংবাদকে বলেন, আগের মতো অবৈধ সংযোগ এখন আর নেই। টাস্কফোর্স রাত-দিন কাজ করছে। এখন দিনের পর দিন অবৈধ সংযোগ চালানো সম্ভব নয়।

ঢাকায় বিদ্যুৎ বিতরণে পর্যায়ক্রমে কয়েকটি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা গঠিত হলেও বন্ধ হয়নি সিস্টেম লস। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) থেকে প্রথমে বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় গঠিত হয় ঢাকা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই অথরিটি (ডেসা)। পরে অনিয়মের মুখে পড়ে বিলুপ্ত হয় ডেসা। গঠিত হয় ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লই কোম্পানি (ডেসকো) এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। বিদ্যুতের গ্রাহকদের অভিযোগ, দুটি বিতরণ কোম্পানি থেকে তারা আশানুরূপ সেবা পাচ্ছেন না। পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। নতুন সংযোগ পেতে অসাধু কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, এ খাতে সিস্টেম লসের কারণে অপচয় হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ২০১০-১১ সালে বিদ্যুৎ খাতে সামগ্রিকভাবে বছরে গড় সিস্টেম লস ছিল ১৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে এটি কমে ১১ দশমিক ১১ শতাংশ হয়েছে। এর মধ্যে সঞ্চালন লাইনে ক্ষতি হয়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। এদিকে মিটারে এসিড দিয়ে অভিনব পদ্ধতির বিদ্যুৎ চুরির ঘটনাও ঘটছে বিভিন্ন জায়গায়। এর আগে বিদ্যুৎ চুরির এমন ঘটনায় সাড়ে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। 

স্পেশাল টাস্কফোর্সের এক কর্মকর্তা জানান, মিটার ছিদ্র করে তাতে এসিড স্প্রে করে করে মিটারের সার্কিট বিনষ্ট করা হয়েছে। এতে যাতে মিটারটির ডিসপ্লে বন্ধ হয়ে যায়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান বলেন, অবৈধ এসব সংযোগ বন্ধে আমরা তৎপর। তবে কিছু অসাধু লোক আছে, তারা এসব করছে। তাদের পেছনে আমরা আছি। শুধু রাজধানীতেই নয়, বেশির ভাগ জেলা শহরের একই চিত্র।
 

Link copied!