ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad
কোনো কাজেই আসছে না বাংলাদেশ ব্যাংকের হাঁকডাক

কৌশলে অর্থপাচার অব্যাহত

রেদওয়ানুল হক

আগস্ট ১৭, ২০২৩, ১০:৫৮ পিএম

কৌশলে অর্থপাচার অব্যাহত

আমদানি পণ্যের দাম বেশি দেখিয়ে (ওভার ইনভয়েসিং) বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করত একটি চক্র। প্রতি মাসে পাচার হওয়া এ অর্থের পরিমাণ ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এতে তীব্র ডলার সংকট তৈরি হওয়ায় টালমাটাল দেশের অর্থনীতি। রীতিমতো ধস নেমেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। এমন প্রেক্ষাপটে পাচার রুখতে পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আমদানি এলসি পরীক্ষা করে অস্বাভাবিক মূল্য পাওয়া গেলে তা আটকে দেয়া হচ্ছে। এ উদ্যোগের ফলে অর্থপাচার বন্ধ হয়েছে বলে দাবি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অধীন আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। 

কিন্তু ভিন্ন কৌশলে অর্থপাচার অব্যাহত রেখেছে চক্রটি। এখন পণ্যের দাম কম দেখিয়ে (আন্ডার ইনভয়েসিং) আমদানি করে বাকি অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে। এতে দ্বিগুণ ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশ। একদিকে হুন্ডিতে রেমিট্যান্সের অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে পণ্যের দাম কম দেখিয়ে বিপুল রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে চক্রটি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভুল নীতির কারণে পাচার ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। কারণ পাচারের বিরুদ্ধে হাঁকডাক দিলেও হাতেনাতে ধরার পরও পাচারচক্রের নাম প্রকাশ করছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ফলে কোনো শাস্তিও হচ্ছে না ওইসব অপরাধীর। ক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্থানকারী প্রভাবশালী ব্যক্তিরা পাচারে জড়িত থাকায় শাস্তি হচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত বুধবার আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার ও রাজস্ব ফাঁকি ঠেকাতে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে ব্যাংকগুলোকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার। সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নিয়ে আয়োজিত ব্যাংকার্স সভায় এ নির্দেশনা দেন তিনি। বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের জানান, ‘ওভার ইনভয়েসিং নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনো আন্ডার ইনভয়েসিং হচ্ছে। সে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিরোধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে।’ 

এর আগে গত বছরের ৩১ অক্টোবর ডলার-সংকটের কারণ প্রসঙ্গে অর্থপাচার প্রতিরোধ সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা বিএফআইইউর প্রধান কর্মকর্তা মো. মাসুদ বিশ্বাস দাবি করেছিলেন, অর্থপাচারের মাধ্যম শনাক্ত করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়ায় পাচার বন্ধ হয়েছে। বিএফআইইউর বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২১-২২ প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্য বেশি দেখিয়ে কোনো কোনো পণ্য আমদানি করা হয়েছে। নজরদারি জোরদার করার ফলে এখন তা হচ্ছে না। এটা ঠেকানো গেছে। এখন কর ফাঁকি দিতে মূল্য কম দেখিয়ে যা আমদানি হচ্ছে, তা নিয়ে কাজ করতে হবে। এ তালিকায় রয়েছে গাড়ি। এদিকেও তদারকি জোরদার করা হচ্ছে।’

এরপর গত ১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) তিন দিনব্যাপী উন্নয়ন সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘বেশি দামের পণ্য কম দামে এলসি খুলে বাকি অর্থ হুন্ডিতে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। এক লাখ ডলারের মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি মাত্র ২০ হাজার ডলারে আমদানির ঋণপত্র খোলা হচ্ছে। বাকি অর্থ হুন্ডিতে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। আবার আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যে ২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত ওভার ইনভয়েস (আমদানি মূল্য বাড়িয়ে দেখানো) হয়েছে। গত জুলাই মাসে এমন আশ্চর্যজনক প্রায় ১০০টি ঋণপত্র বন্ধ করা হয়েছে।’

এরপর গত ২১ মে ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) আয়োজিত ‘ব্যাংকিং সেক্টর আউটলুক-২০২৩’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়— বাণিজ্যের আড়ালে প্রতি মাসে দেড় বিলিয়ন ডলার পাচার হতো। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী দেশীয় মুদ্রায় এ অঙ্ক ১৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণের পর এটি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। বড় শিল্পগ্রুপগুলো ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে এ অর্থ পাচার করত।

ওই সংবাদ সম্মেলনে এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসাইন বলেন, ‘অনেক বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত। তাদের দৌরাত্ম্য কমানোর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতি সংশোধনের মাধ্যমে আমদানিতে এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম আমার সংবাদকে বলেন, ‘অর্থপাচার বন্ধের প্রক্রিয়া কার্যকর করা হচ্ছে না। ধরা পড়ার পরও অপরাধীদের শাস্তি না হলে কোনো লাভ হবে না। এর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি কাস্টমস ও দুর্নীতি দমন কমিশনকেও (দুদক) পদক্ষেপ নিতে হবে।’ তিনি বলেন, এখন বেশিরভাগ পণ্যের আন্তর্জাতিক দাম অনলাইনে পাওয়া যায়। তাই খুব সহজেই এটি পরীক্ষা করা সম্ভব যে, কেউ আমদানি পণ্যের দাম বেশি কিংবা রপ্তানি পণ্যের দাম কম দেখাচ্ছে কি না।
ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। ফলে প্রতি মাসে দেড় বিলিয়ন ডলার অবৈধ লেনদেন বন্ধ হয়েছে।’ 

একই অনুষ্ঠানে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিন বলেন, আগে আমাদের প্রতি মাসে সাত বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হতো; কিন্তু তা এখন কমে সাড়ে চার বিলিয়নে এসেছে। কমে যাওয়া আড়াই বিলিয়নের মধ্যে এক বিলিয়ন তৈরি পোশাক খাতের মেশিনারিজ আমদানি এবং বাকি দেড় বিলিয়নের মধ্যে ওভার ইনভয়েসিং হতো— যা এখন কমে এসেছে।’ ব্যাংকের মাধ্যমেই অর্থপাচার হচ্ছে— ব্যাংকাররা এ দায় এড়াতে পারেন কি-না, এমন প্রশ্নে মাশরুর আরেফীন বলেন, ‘এখন আর ব্যাংকারদের বিশ্বাস করা যাচ্ছে না বলেই বাংলাদেশ ব্যাংক পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদের দায়বদ্ধতার ঘাটতি ছিল।’ 

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থপাচার রুখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপ কাজে আসেনি। আর ফিরে আসেনি ব্যাংকারদের দায়বদ্ধতাও। এছাড়া বিচার হয়নি অর্থপাচারকারী বড় শিল্পগ্রুপগুলোরও। গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের সঙ্গে কারা জড়িত, তা প্রকাশ করতে বারবার যোগাযোগ করা হলেও অপরাধীদের নাম গোপন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন নমনীয় ও ভুল নীতির কারণে অর্থপাচার অব্যাহত রয়েছে। ওভার ইনভয়েসিংয়ের পরিবর্তে এখন আন্ডার ইনভয়েসিং হচ্ছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা ও রাজস্ব দুটোই হারাচ্ছে  দেশ। লোক দেখানো হাঁকডাক বন্ধ করে পাচারকারীদের শাস্তির আওতায় এনে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হলে অর্থপাচার বন্ধ হবে।
 

Link copied!