Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪,

আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস আজ

নির্দিষ্ট সময়ে মিলছে না তথ্য

বেলাল হোসেন ও মেহেদী হাসান মাসুদ

বেলাল হোসেন ও মেহেদী হাসান মাসুদ

সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৩, ১১:৫০ পিএম


নির্দিষ্ট সময়ে মিলছে না তথ্য
  • তথ্য চাইলে দেখা হচ্ছে প্রতিপক্ষ হিসেবে
  • তথ্য দিতে অনীহা আবেদন প্রত্যাহারের হুমকি

আজ আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস। যদিও দিবসটি ২৮ সেপ্টেম্বর পালন করা হয়, তবে এ বছর সরকারি ছুটির কারণে  একদিন আগে পালিত হচ্ছে।  ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মধ্যেই ‘তথ্য অধিকার আইন-২০০৯’ সংসদে পাস হয়। এতে করে নাগরিকদের তথ্য পাওয়ার অধিকারের তাত্ত্বিক স্বীকৃতি অর্জিত হয়। আইনটি পাসের ১৪ বছরে এসেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে মিলছে না এর সুফল। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই তথ্য দিতে গড়িমসি করছেন। আপিলে কোনো ধরনের সাড়া মিলছে না। এমনকি তথ্য চেয়ে হুমকির ঘটনাও ঘটছে। 

আমার সংবাদের প্রতিবেদক (রাজবাড়ী) গত চার মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় মহিলা সংস্থা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, নির্বাচন কমিশন, তথ্য কমিশন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরসহ ২০টি দপ্তরে আবেদন করেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, রাজবাড়ী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, তথ্য কমিশনসহ পাঁচটি দপ্তর দেরিতে হলেও তথ্য সরবরাহ করে। বাকি ১৫টি আবেদনের ন্যূনতম প্রাপ্তি স্বীকার মেলেনি। এর মধ্যে সময়ক্ষেপণ করে তথ্য সরবরাহ করা হবে বলে মুঠোফোনে জানিয়েছে পাঁচটি দপ্তর। জাতীয় মহিলা সংস্থায় তথ্য চেয়ে রীতিমতো হুমকির শিকার হয়েছেন প্রতিবেদক।

তথ্য কমিশন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য কমিশনে অভিযোগ জমা হয় এক হাজার ৭২৩টি। এর মধ্যে ২০২১ সালে শুনানি হয় ২৩৪টি অভিযোগের, ২০২২ সালে ৩৬০টি শুনানি এবং ২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১০৭টি অভিযোগের শুনানি গ্রহণ করা হয়। ৭৮টি অভিযোগের শুনানি গ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান। শুনানির পর ১২টি অভিযোগে জরিমানা হয় ১৬ হাজার ৬০০ টাকা। অপরদিকে শুনানির থেকে তথ্য কমিশনে বাতিলের সংখ্যা বেশি রয়েছে। ২০২১ সালে ২২৯টি, ২০২২ সালে ৪৩১টি এবং ২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২২৩টি অভিযোগের শুনানি গ্রহণ করা হয়নি। একই সময়ে তথ্য সরবরাহ না করায় ১৪ জন কর্মকর্তাকে ২৭(১)(ঙ) ধারা মোতাবেক জরিমানা করা হয়েছে।
আইন অনুযায়ী ‘ক’ ফরমে আবেনের ২০ কার্যদিবসের মধ্যে তথ্য প্রদান অথবা ১০ কর্মদিবসের মধ্যে অপারগতা প্রকাশ। আবেদনকারী তথ্য বা জবাব না পেলে ৩০ দিনের মধ্যে ‘গ’ ফরমে আপিল দায়ের। ১৫ দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি। আপিলের জবাব না পেলে ৩০ দিনের মধ্যে তথ্য কমিশনে অভিযোগ দায়ের। অভিযোগ রয়েছে শেষ ধাপে তথ্য কমিশনে অভিযোগ করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেখান থেকে বিবাদী পক্ষকে শুধুমাত্র নির্দেশ দিয়েই ছেড়ে দেয়া হয়। আবেদন, আপিল অভিযোগের নানা নাটকীয়তা শেষে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর তথ্য কমিশনে শুনানিতে উপস্থিত হয়। 

এ সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তথ্য সরবরাহ করার সময় নিয়ে পাঁচ দিনের মধ্যে ‘তথ্য নেই বলে পত্র দেয়’। গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাজবাড়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুনানিতে উপস্থিত হননি। পরবর্তীতে ১০ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য্য করা হয়। গত জুন মাসে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করা হলে তারা ২১ সেপ্টেম্বর তথ্য সরবরাহ করে অল্পকিছু তথ্য। এতে করে যারা তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে থাকেন তারা হতাশ হন। 

এ বিষয়ে প্রধান তথ্য কমিশনার ড. আবদুল মালেক আমার সংবাদকে বলেন, তথ্য কমিশন গঠন হয়েছে ২০০৯ সালে। আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে তথ্যের অবাধ প্রবাহ রাখার স্বার্থে। আন্তর্জাতিক ফান্ড যারা পায় তারাসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও, সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথ্য সরবরাহ করবে। যদি সময়ের মধ্যে আবেদন না দেয় তাহলে আপিল করবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর। সেখানে না পেলে আমাদের কাছে অভিযোগ করতে পারে। প্রধান তথ্য কমিশনার আরও বলেন, কমিশন তথ্য দেয়ার জন্য হুকুম দিয়ে থাকে জরুরিভিত্তিতে তথ্য সরবরাহের জন্য। অতীতে শাস্তিও দেয়া হয়েছে যারা অন্যায়ভাবে বাধা দিয়েছে। এসব বিধান আছে। অনেকে তথ্য দিতে চায় না, এই দিতে না চাওয়ার মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসার জন্য আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তথ্য কমিশন আদালতের ভূমিকা পালন করে থাকে। আমাদের কমিশনে অভিযোগ করে তথ্য পায় না এমনটা নয়। 

আবদুল মালেক বলেন, পৃথিবীতে মোট ১৩৬টি দেশে তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে মর্যাদাগতভাবে বাংলাদেশের অবস্থান ২৬তম। আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিআইসি (ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব ইনফরমেশন কমিশনার)। এখানে ১৩৬টি দেশেই এ সংস্থার সদস্য।       
 

Link copied!