Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ০৩ মে, ২০২৪,

আজ বিশ্ব পানি দিবস

বাড়ছে পানিবাহিত রোগ

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

সাহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া

মার্চ ২২, ২০২৪, ১২:০১ এএম


বাড়ছে পানিবাহিত রোগ
  • ৪১ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি সুবিধা থেকে বঞ্চিত
  • এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতভাগ বিশুদ্ধ পানি ব্যবহারের তাগিদ
  • পানিবাহিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা

মানবদেহের সুস্থতার জন্য পানির কোনো বিকল্প নেই। সবার জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে হবে
—অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ, জনস্বাস্থ্যবিদ

ঢাকা মেডিকেল কলেজে পেট ব্যথা নিয়ে পাঁচ বছর বয়সি ছেলেকে ভর্তি করিয়েছেন আবজাল হোসেন। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের সামনে তার সাথে কথা হয় আমার সংবাদের এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, আমার ছেলের বেশ কিছুদিন ধরেই ওজন কমছিল। খাওয়া-দাওয়া করতে চাইত না। এর মাঝে তিন দিন আগে হঠাৎ করে পেট ব্যথা শুরু হয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। মুন্সীগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে তারা দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসতে বলেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ছেলের জন্ডিস ধরা পড়ে। 

ডাক্তার জানিয়েছেন, পানি থেকে তার জন্ডিস হয়েছে। আবজাল হোসেন আরও বললেন, তিনি নিজেও একবার জন্ডিসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। শুধুমাত্র আবজাল হোসেন বা আবজাল হোসেনের ছেলেই নয়। পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস, আমাশয়, বদহজম, কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ, গ্যাসট্রিক, ক্ষুধামন্দায় দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ প্রতিবছর আক্রান্ত হয়। দেশে পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের বেশির ভাগই শিশু। এসব রোগের অন্যতম কারণ বিশুদ্ধ পানি না পাওয়া। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বে প্রতি চারজন মানুষের একজন নিরাপদ পানির অভাবে ভুগছে। বিশ্বে প্রতি বছর ১০ লাখের বেশি মানুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আর বাংলাদেশের ৪১ শতাংশ মানুষ এখনো নিরাপদ পানি সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নিরাপদ পানির এমন সংকটের মধ্য দিয়েই আজ শুক্রবার বিশ্বের সব দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব পানি দিবস।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষ খাবার পানি পায় টিউবওয়েল বা ট্যাপ থেকে। উৎসে ভালো থাকলেও ব্যবহারের সময় ত্রুটির কারণে পানি দূষিত হয়ে উঠতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। গ্রামাঞ্চলে পানি এক জায়গা থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার চল বেশি। তবে শহরে পরিবহনের বিষয়টি তেমন নেই। এখানে অধিকাংশ মানুষ ট্যাপের সরবরাহের পানি ব্যবহার করে বলে তাদের উৎস ঘরের কাছেই থাকে। গ্রামাঞ্চলে পরিবহনের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়। গ্রাম ও শহর— সবখানে সংরক্ষণ ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে পানিদূষণের ঝুঁকি থাকে। 

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ মানুষের কাছে নিরাপদ পানি পৌঁছাতে হবে। কিন্তু দেশে নিরাপদ পানি পৌঁছানো গেছে ৫৯ শতাংশ মানুষের কাছে। দুর্গম এলাকা, গ্রামাঞ্চল ও শহরের বস্তি এলাকায় নিরাপদ পানি সহজে পাওয়া যায় না। পানিতে জীবাণু, আর্সেনিক ও লবণাক্ততা রয়েছে। এসডিজি লক্ষ্য পূরণ করতে হলে নিরাপদ পানির জন্য এখন কমপক্ষে চারগুণ সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকার মানুষের দোরগোড়ায় মানসম্পন্ন পানি পৌঁছে দিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে ১৭৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৯ সালে নেয়া ‘পানির গুণগতমান পরীক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ’ প্রকল্প হাতে নেয়। যেখানে নতুন করে ৫২টি জেলায় পানির গুণগত মান পরীক্ষাগার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। প্রকল্পটির কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। স্থাপনার কাজ শেষ ছাড়াও সব ল্যাবরেটরিতে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, কম্পিউটার, ফটোকপিয়ার এবং ল্যাবরেটরির ইক্যুইপমেন্ট সরবরাহ করা সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু জনবল সংকটের অভাবে সবগুলো চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।

দেশে নিরাপদ পানি সংকট ও পানিবাহিত রোগ নিয়ে আমার সংবাদের এ প্রতিবেদক কথা বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে সাধারণত দুই সময়ে পানিবাহিত রোগ বেশি দেখা যায়। প্রথমত বন্যার সময় অনেক এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়। সে সময় মানুষ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। দ্বিতীয়ত, তীব্র গরমের সময় পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ দেখা যায়। পানির গুণগত মান ঠিক না থাকলে সে পানি পান করা যাবে না। পানি মানব দেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মানবদেহের সুস্থতার জন্য পানির কোনো বিকল্প নেই। সবার জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণ অর্থেই আমরা বলে থাকি পানির অপর নাম জীবন। জীবনের জন্য এই মূল্যবান উপদানটি আমাদের অবশ্যই বিশুদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।
 

Link copied!