Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪,

রমজানে ইফতার রাজনীতি

নেতাকর্মীদের মান ভাঙাচ্ছে বিএনপি

আবদুর রহিম

মার্চ ২৩, ২০২৪, ১১:৩৭ পিএম


নেতাকর্মীদের মান ভাঙাচ্ছে বিএনপি
  • সংসদ সদস্য প্রার্থীদের আসন-ভিত্তিক ইফতার আয়োজনের নির্দেশ
  • আজ রোববার কূটনীতিক ও ২৮ মার্চ রাজনীতিকদের সম্মানে ইফতার
  • পুরোনো সম্পর্কে ফিরছে জামায়াত-বিএনপি রমজানে বাড়ল সখ্য

আমরা ইফতার কর্মসূচির মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় করে হতাশ নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করছি 
—জয়নুল আবদীন ফারুক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা

ইফতার কর্মসূচিও আমাদের সাংগঠনিক কর্মসূচির অংশ মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা আনন্দিত
—নিতাই রায় চৌধুরী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান

দেড়যুগেরও বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যু, জনসম্পৃক্ত কয়েক ডজন বড় ইস্যু এবং টানা তিনটি জাতীয় নির্বাচনেও আন্দোলনের ডাক দিয়ে কাজে লাগাতে পারেনি দলটি। এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কয়েক দফায় হরতাল, অবরোধ ও সর্বশেষ অসহযোগ আন্দলনের ডাক দিয়েও ব্যর্থ হয় দলটি। বিশেষ করে কূটনৈতিক সমর্থনের ফসল ঘরে তুলতে না পারায়  হাইকমান্ডের উপর ক্ষোভ বেড়েছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ডাকা কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে নেতাকর্মীদের ভাটা। 

নির্বাচন পূর্ববর্তী কর্মসূচিগুলোতে যেমন নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা গেছে সেটি এখন আর দেখা মিলছে না। কর্মসূচি আসতে শীর্ষ নেতাদের অনেকের ফোনও রিসিভ করছেন না মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা। দলটির দায়িত্বশীল নেতাকর্মীরা বলছেন, পরিকল্পিত আন্দোলন না হওয়ায় মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকে হামলা মামলার শিকার হয়ে বছরের পর বছর বাড়ি যেতে পারছেন না। হাজার হাজার নেতাকর্মীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নির্বাচন এলে অনেকে প্রকাশ্যে আসে আবার তারা ক্ষমতাসীন দলের তালিকাভুক্ত হয়ে নির্যাতনের শিকার হয়। এমন দৃশ্যপটে বিএনপির নেতৃত্ব দুর্বলতা প্রকাশ্যে আসায় বড় অংশের এবার মন ভেঙেছে। নিয়মিত বৈঠকগুলোতেও অনেকে অংশগ্রহণ করছেন না। এমন পরিস্থিতিতে পবিত্র রমজানকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মান ভাঙাতে হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। 

জানা যায়, প্রথম রমজানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অনলাইনে অতিথি রেখে অসহায় এতিম মিসকিনদের আয়োজনে ইফতারের আয়োজন করা হয়। এরপর ঢাকাসহ সারা দেশে আসনভিত্তিক প্রতিটি বিভাগ, থানা, উপজেলায় এমনকী গ্রাম পর্যায়েও ইফতারের আয়োজনের নির্দেশনা দেয়া হয়। যারা নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী তাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে এই রমজানে জনসম্পৃক্তা বাড়াতে বলা হয়। বিভাগীয় পর্যায়ের ইফতারগুলোতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও অনলাইনে যুক্ত থাকছেন, বক্তব্য রাখছেন। নেতাকর্মীদের দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। 

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, এবার সাংগঠনিকভাবে সারা দেশে গুম-খুনের শিকার নেতাকর্মীদের পরিবার এবং কারা নির্যাতিত নেতাকর্মীদের সম্মানে ইফতার অনুষ্ঠান করার নির্দেশনা রয়েছে। 

কর্মসূচিগুলোতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি অংশ নেবেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩ মার্চ চিকিৎসা শেষে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরেছেন। তিনি আজ ২৪ মার্চ কূটনীতিক এবং ২৮ মার্চ রাজনীতিকদের সম্মানে বিএনপি আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। এই অনুষ্ঠানে ভোট বর্জনকারী সব দলকে আমন্ত্রণ জানানোর কথা রয়েছে। 

পুরোনো সম্পর্কে ফিরছে জামায়াত-বিএনপি, রমজানে বাড়ল সখ্য : দীর্ঘ সময় ধরে একলা চলা নীতিতে চলছে জামায়াতে ইসলামী। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সঙ্গে একই উদ্দেশ্যে আলাদা ব্যানারে কর্মসূচি পালন করেছে। দুই দলের একাংশ থেকে জামায়াত-বিএনপি মিলে এক ব্যনারে কর্মসূচি পালনের আহ্বান থাকলেও গণতন্ত্র মঞ্চের বাধা এবং রাজনৈতিক কৌশলগতভাবে শেষ পর্যন্ত আর এক হয়নি। 

দায়িত্বশীল নেতাকর্মীরা বলছেন, সরকার পতনের উদ্দেশ্যের সঙ্গে জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে কোনো দূরত্ব নেই। রমজান উপলক্ষে জামায়াতে ইসলামী নির্দিষ্ট দলীয় ছকে সাংগঠনিকভাবে ‘দাওয়াতি কাজ’ এবং ‘প্রশিক্ষণমূলক’ কার্যক্রম চালাচ্ছে। রোজা এসব কার্যক্রম নিয়েই দলীয় গতি আরও বাড়াচ্ছে। একই সঙ্গে বিএনপিও রমজান উলক্ষে তৃণমূল থেকে সবার সঙ্গে ইফতারকে কেন্দ্র করে চাঙা হওয়ার চেষ্টা করছেন। অন্য জোট নেতাদের সঙ্গে এবার রমজানে জামায়াতকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দ্বাদশেও আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার আগামীতে জামায়াতকে নিয়েই এক ব্যানারে কর্মসূচির সম্ভাবনার কথা বলছেন শীর্ষ নেতারা। 

দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান  বলেন, আমি মনে করি এক ব্যনারে আন্দোলন হলে বেশি সফলতা আসত। তবে এবার যারা বিরোধিতা করেছেন হয়তো তারাই বলবেন সব দলকে নিয়ে এক ব্যানারে আন্দোলন করতে। গত সপ্তাহে জামায়াতের আমির কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর বিএনপির হাইকমান্ডের অনেকেই ফোন দিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। একইভাবে দলটির আমিরের পক্ষ থেকে বিএনপির শীর্ষ তিন নেতা খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং মির্জা ফখরুলকে ইফতার সামগ্রী উপহার পাঠানো হয়েছে। 

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয় সংসদের সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুক বলেন, দীর্ঘদিন বিএনপি ক্ষমতায় নেই নেতাকর্মীরা আদালতের বারান্দায় দৌড়াতে দৌড়াতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত এ নিয়ে বড় দুঃখ-দুর্দশা তো অবশ্যই রয়েছে। এরপরও এ সরকার বিএনপিকে ভাঙতে, বিচ্ছিন্ন করে দিতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। আপনি দেখেন এখনো আমাদের কর্মসূচিগুলোতে ডাক দিলে বহু লোকের সমাগম হয়। আজকে আমি কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকার বাহিরে ইফতার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছি। নেতাকর্মীরা আসছে জেনে এখানে প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে শতশত নেতাকর্মী জড়ো হয়েছে এগুলোই বিএনপির বড় শক্তি। তবে হ্যাঁ! নির্বাচনের পরে হয়তো কিছু নেতাকর্মীর কষ্ট লেগেছে, আঘাত পেয়েছে এই স্বৈরাচার সরকারকে সরানো যায়নি বলে। তবে আমাদের সাংগঠনিক অংশ হিসেবে দ্রব্যমূল্যর ঊর্ধ্বগতির বিষয়ে কর্মসূচি এবং পবিত্র রমজানকে সাংগঠনিক মুজবতি অর্জনে বড় মাধ্যম হিসেবে নিয়েছে বিএনপি।  আমরা ইফতার কর্মসূচির মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় করছি হতাশ নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করছি। ইফতার কর্মসূচিগুলোর মাধ্যমে আমরা শক্তির জোগান দিচ্ছি।  খুব শিগগিরই চলমান আন্দোলনকে আমরা আরো বেগবান করব।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেছেন, ইফতারের বিষয়টি মুসলিমদের বড় ধর্মীয় বিষয় তবে এখানে কোনো জাতের বিভেদ নেই। নিয়মিত ইফতারের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের নেতাকর্মীদের একত্রিত করা হচ্ছে। তাদেরকে উজ্জীবিত করা হচ্ছে। তা ছাড়া বলা চলে, এটি পলিটিক্যাল পার্টির নেতাকর্মীদের সঙ্ঘবদ্ধ ও প্রশিক্ষণের বড় মাধ্যম। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মীরা একসঙ্গে এক টেবিলে বসে কথা বলছেন, খাওয়া খাচ্ছেন। এতে করে অবশ্যই রাজনৈতিক শক্তি আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। সব চাইতে বড় বিষয় হলো— এই ইফতার কর্মসূচিও আমাদের সাংগঠনিক কর্মসূচির অংশ। মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা শীর্ষ নেতাদের কাছে পেয়ে আনন্দিত। এক সাথে ইফতার আয়োজনের সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আমাদের যে কর্মসূচি চলছে সেখানে আমাদের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ধীরে ধীরে বাড়ছে।
 

Link copied!