ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা মঙ্গলবার, ০১ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন

নুর মোহাম্মদ মিঠু

এপ্রিল ২১, ২০২৪, ০১:১০ এএম

তাপপ্রবাহে বিপর্যস্ত জনজীবন
  • হিট স্ট্রোকে পাবনা ও  চুয়াডাঙ্গায় তিনজনের মৃত্যু
  • যশোরে গলছে রাস্তার পিচ  
  • সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে বৃদ্ধ, শিশু, গর্ভবতী মহিলা, খেলোয়াড়সহ শ্রমজীবী মানুষ  
  • নেমে যাচ্ছে পানির স্তর, বিভিন্ন স্থানে তীব্র হয়ে উঠছে পানির সংকট  

দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে —আবহাওয়া অধিদপ্তর   

দেশজুড়ে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহ নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের জারি করা হিট অ্যালার্টের শুরুতেই চুয়াডাঙ্গা ও পাবনায় হিট স্ট্রোকে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সাথে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সারা দেশেই একই অবস্থা। দিনের বেলায় বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত যথাসম্ভব ঘর থেকে বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য বেড়ে যাওয়ায় স্ট্রোক ছাড়াও নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। এ অবস্থায় বয়স্ক মানুষ, শিশু, গর্ভবতী মহিলা, খেলোয়াড় এবং যারা বাইরে কায়িক পরিশ্রমের পেশার সঙ্গে জড়িত তারাই সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শুক্রবার থেকে দেশব্যাপী ৭২ ঘণ্টার তাপ সতর্কতার মধ্যে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলেই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত বিএমডির সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ‘এই সময়ের মধ্যে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে।’ এমতাবস্থায় গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। 

তাপপ্রবাহের এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা প্রয়োজন ছাড়া রোদে ঘর থেকে বের না হতে ও প্রচুর পানি পানের পরামর্শ দিয়েছেন। যশোরের বিমানবন্দর মতিউর রহমান ঘাঁটিস্থ আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, শুক্রবার যশোরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার ছিল ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার ছিল ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং মঙ্গলবার রেকর্ড করা হয় ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যশোরে ক্রমাগত বেড়ে যাওয়া তাপপ্রবাহে চরম দুর্ভোগে জনজীবন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে খেটেখাওয়া মানুষ। যশোরের রাস্তার পিচ গলে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে গতকাল। এ অবস্থায় বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। টিউবওয়েলে উঠছে না পানি। শহরের রিকশাচালকরা বলছেন, রোদের দাপটে লোকজন বাইরে কম বের হচ্ছে। আয় রোজগার কমে গেছে। এতে সংসার খরচের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা আয় হচ্ছে না। চুয়াডাঙ্গা শহরের হকার-ব্যবসায়ীরা বলছেন, গরমে লোকজন বাইরে বের হচ্ছে কম, তাই বেচা-বিক্রি বেশি একটা হচ্ছে না। এখানে গরমের কারণে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। যশোর জেনারেল হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে পাঁচ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছেন ৩৫ রোগী। যার মধ্যে ১৫ জনই শিশু রোগী। এদিকে লাগাতার তাপদাহের কারণে রোদের মধ্যে বাইরে না বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন যশোর জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসক মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, এই গরমে ডায়রিয়া, বমি, পেটে ব্যথার রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছে। রোগীদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা বেশি। তাদেরকে ঘরের বাইরে বের হতে দেয়া যাবে না। বেশি করে পানি খাওয়াতে হবে। এদিকে পানির স্তরও নেমে গেছে, টিউবওয়েলে ঠিকমতো পানি উঠছে না। যশোরের একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, গত ১৩ দিন ধরে তাদের বাড়ির টিউবওয়েলে ঠিকমতো পানি উঠছে না। কৃষিজমির স্যালোমেশিনের পানি দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ সারছেন তারা। কোথাও কোথাও স্যালোমেশিনেও কম পানি উঠছে। ছয় লিটার তেল ব্যয় করেও সাড়ে তিন বিঘা ধানের আবাদি জমি ভেজানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চাষিরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। টিউবওয়েলে পর্যাপ্ত পানি না ওঠার কারণে মানুষ দুর্ভোগে রয়েছেন। যেসব গ্রামে গভীর নলকূপ (ভ্যাটিক্যালযুক্ত টিউবওয়েল) রয়েছে সেখানে পানি নেয়ার জন্য মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে।  

চুয়াডাঙ্গার অবস্থাও ভয়াবহ। সেখানে গতকাল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা মৌসুমের সর্বোচ্চ। এ অবস্থায় হিট স্ট্রোকে মৃত্যু হয়েছে জাকির হোসেন নামের এক কৃষকের। জাকির হোসেন দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থানার সীমান্ত সংলগ্ন ঠাকুরপুর গ্রামের আমির হোসেন ছেলে। তিনি পেশায় ঠাকুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি ছিলেন। জাকির হোসেনের বাবা আমির হোসেন ও দর্শনা থানার ওসি বিপ্লব কুমার সাহা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আমির হোসেন বলেন, ‘তীব্র গরমে মাঠের ধান মরার মতো অবস্থা। ধানের জমিতে সেচ দেয়ার জন্য সকাল ৮টার দিকে মাঠে যায় জাকির। মাঠে যাওয়ার ঘণ্টাখানেক পর খবর পাই ছেলে স্ট্রোক করেছে। মাঠের অন্য কৃষকরা ছেলেকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথেই সে মারা যায়।’ তার মৃত্যুর সাত ঘণ্টা পরই মারা যান একই উপজেলার সদর ইউনিয়নের আজিমুদ্দিনের স্ত্রী মর্জিনা খাতুন (৬০)। কয়েক দিন ধরেই তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। বৈশাখের তাপমাত্রার পারদ দিন দিন ঊর্ধ্বগামী হচ্ছে। এবার তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে এ জেলায়। শুক্রবারের তাপমাত্রা ছিল ৪১.৫, বৃহস্পতিবার ৪০.৪, বুধবার ৪০.৭ ও মঙ্গলবার ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। 

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক তহমিনা নাছরিন বলেন, টানা তীব্র তাপপ্রবাহের পর এবার তাপমাত্রা আরও বেড়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় এ তাপপ্রবাহ চলছে। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা অনেকটাই হ্রাস পাবে। তা ছাড়া মার্চ-এপ্রিল মাসে এমনিতেই এ জেলার গড় তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে। আপাতত বৃষ্টির কোনো পূর্বাভাস নেই। তবে কালবৈশাখী ঝড় হলে তার সঙ্গে বৃষ্টি হতে পারে। এদিকে, টানা তাপপ্রবাহের ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের জনপদ। সাধারণ মানুষ খুব প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না। সড়ক-মহাসড়কে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় যান চলাচল অনেক কম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এক প্রকার জনমানবশূন্য হয়ে পড়ছে সড়কগুলো। বৈরী আবহাওয়ায় কৃষির ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। জমিতে পানি সেচের বাড়তি খরচ মেটাতে গিয়ে কৃষকের নাভিশ্বাস অবস্থা। অন্যদিকে, তীব্র গরম থেকে নিম্নআয়ের সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিনামূল্যে ঠাণ্ডা পানি, খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

চলমান তাপপ্রবাহে পুড়ছে পাবনা জেলাও। অসহনীয় গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। চলতি মৌসুমে জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে জেলার ঈশ্বরদীতে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রার দিন গতকাল জেলা শহরে হিট স্ট্রোক করে একজনের মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে। গতকাল ঈশ্বরদীতে ৪১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি মৌসুমের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন জানান, কয়েক দিন ধরে পাবনায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল রেকর্ড করা হয়েছে ৪১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে এ বছর এত তাপমাত্রা রেকর্ড হয়নি। এ তাপমাত্রা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরই মধ্যে হিট স্ট্রোক করে মারা যান সুকুমার দাস নামে একব্যক্তি। তিনি শহরের শালগাড়িয়ার জাকিরের মোড়ের বাসিন্দা। পাবনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, ওই ব্যক্তি হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন। পাবনা শহর থেকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তাকে। আমরা তাকে চিকিৎসা দিতে পারিনি।
 

Link copied!