টিকে থাকার চ্যালেঞ্জে ছাত্রদলের ‘টার্ন ব্যাক’

গত ১৫ বছর সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির সাথেই বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে আসছে বিএনপি সমর্থিত ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। তবে মাঠের রাজনীতিতে সুবিধা করতে পারেনি ছাত্রদল। ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গেছে সংগঠনটিকে। বিশেষ করে ১৯৮০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্তও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্র সংসদে যেমন ছাত্রদলের উল্লেখযোগ্য অবস্থান ছিল, তেমনি রাজপথেও তাদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। 

তবে গত এক দশকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে কিংবা ছাত্রদের অধিকার সংশ্লিষ্ট আন্দোলনে বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি ছাত্রদল। বিভিন্ন সময়ে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে বিএনপির পাশাপাশি ছাত্রদল রাজপথে থাকার ঘোষণা দিলেও তা কার্যত ঘোষণা অব্দিই সীমাবদ্ধ ছিল। শুধু সরকার পতনের আন্দোলনই নয়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে, তারেক জিয়ার সাজা ঘোষণার পর, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় ধরনের আন্দোলন-প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েও রাজপথে আলোড়ন সৃষ্টি করার মতো কোনো আন্দোলনেই দেখা মেলেনি ছাত্রদলকে। রাজপথে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে না পারলেও অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং রাজনীতিতে নেতাদের কুশপুত্তলিকা পোড়ানো, দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটাতে দেখা গেছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের। এরই মধ্যে নতুন কমিটি দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে ছাত্রদল। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে সংগঠনটি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরাসরি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নেতাদের উপস্থিতিতে করা হচ্ছে কর্মিসভার আয়োজন। তবে গত ১৫ বছরে টিকে থাকাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বলে দাবি করছেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এ প্রসঙ্গে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও কবি জসীমউদ্দিন হল শাখা ছাত্রদলের সভাপতি তৌহিদুর রহমান তাজ বলেন, ‘বর্তমানে একটা অরাজক-ফ্যাসিস্ট সময় অতিবাহিত করছে সবাই। এই দমন নিপীড়নের পরও আমরা যে টিকে রয়েছি, এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় সফলতা।’

গত ১৫ বছরে কখনো কখনো কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঝটিকা মিছিল করতে দেখা গেলেও বড় ধরনের সমাবেশ কিংবা শক্তি প্রদর্শনে ব্যর্থ ছিল সংগঠনটি। ছাত্ররাজনীতির আতুরঘর খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রদলের সরব উপস্থিতি ছিল না এতদিন। তবে এ জন্য ছাত্রলীগের নির্যাতনকে দায়ী করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস দাবি করেন ছাত্রলীগ বাদে অন্য কোনো সংগঠনই চালাতে পারছে না স্বাভাবিক কার্যক্রম। এ প্রসঙ্গে আমার সংবাদকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিবেশ বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে সহনশীল বা সরগরম নয়। ক্যাম্পাসে এখন ছাত্রলীগ বাদে অন্য কোনো দলই আর নিরাপদে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারছে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সক্ষমতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের রয়েছে বলে দাবি করে এ ছাত্রনেতা বলেন, ‘ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা অন্যান্য সব নিয়মিত শিক্ষার্থীর মতোই ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া করছেন এবং দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম বাস্তবায়নের সাংগঠনিক সক্ষমতাও জারি রাখছেন।’ টিকে থাকার চ্যালেঞ্জের মাঝেই ছাত্রদল ঘুরে দাঁড়াতে নিয়মিত কর্মসূচি পালন করলেও মিডিয়াতে ছাত্রদলের রাজনৈতিক কর্মসূচির ‘কাভারেজ’ না দেয়ায় বিষয়টি প্রকাশ্যে আসছে না বলে দাবি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের। দৈনিক আমার সংবাদকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘সম্প্রতি রাজশাহীতে আট জেলার কর্মিসভা হয়েছে। হাজার হাজার ছাত্রদল নেতাকর্মী যোগদান করলেও কোনো মিডিয়া কাভারেজ পায়নি ছাত্রদল। তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা আন্দোলন-সংগ্রামে এগিয়ে যাচ্ছি। গত ১৫ বছরে শত শত ছাত্রদল নেতাকর্মীকে গুম-হত্যা করা হয়েছে, আটক করা হয়েছে। এই টিকে থাকার চ্যালেঞ্জের মাঝেই ছাত্রদল এগিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছে।’

ছাত্রদলের রাজনীতিকে সংকুচিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ক্যাম্পাসগুলোতে রাজনীতি চর্চা সংকুচিত করে ফেলা হচ্ছে, ছাত্রদলকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। ফলে ছাত্রদলের কর্মসূচি সেভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে না।’ কয়েক মাস আগে বিএনপির পক্ষ থেকে ছাত্রদলকে শক্তিশালী করতে নতুন করে ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দেয়া হয়। ঘোষণা অনুযায়ী ছাত্রদলকে শক্তিশালী করতে কাজ শুরু হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক ছাত্রনেতা হাবিবুর রহমান হাবিব।

আমার সংবাদকে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলকে ঢেলে সাজাতে মাস কয় আগেই ছাত্রদলের নতুন করে কমিটি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজশাহীতে ছাত্রদল কর্মী সম্মেলন করেছে। সারা দেশেই কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রদলকে আরও গতিশীল করার কাজ চলছে।’ বর্তমানে ছাত্রদল সেভাবে সক্রিয় কর্মসূচি পালন করতে পারছে না বলেও তিনি স্বীকার করেন। 

তবে এর জন্য ছাত্রদল দায়ী না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছাত্রদলের জন্য রাজনীতি করা কঠিন। আগের সাথে বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করা যাবে না। কোনো সংগঠনই সেভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। যেভাবে দমন-পীড়ন চলছে, সেই অবস্থায় ছাত্রদলকে দোষী করা আমার উচিত হবে না। এই কঠিন পরিস্থিতিতেও ছাত্রদল চেষ্টা করছে ঘুরে দাঁড়ানোর। নিয়মিত তারা কর্মিসভা করে যাচ্ছে। আমরাও তাদের পাশে আছি।’