আমার সংবাদ ডেস্ক
জুন ২৬, ২০২৫, ১২:১০ এএম
ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ বিরতির পর এবার ইসরাইল-গাজা যুদ্ধ বন্ধে বড় ধরনের অগ্রগতির ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার দাবি, গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়টি ‘খুব কাছে’ এবং শিগগির ‘খুব ভালো খবর’ আসতে পারে।
গতকাল বুধবার নেদারল্যান্ডসে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, আমার মনে হচ্ছে গাজার বিষয়ে আমরা বড় অগ্রগতি করছি। বিশেষ করে ইরানে আমরা যে হামলা চালিয়েছি, সেটার পর।
তিনি আরও বলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা গাজায় ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তির সম্ভাবনাও কিছুটা বাড়িয়েছে। ‘এটি কিছুটা সহায়তা করেছে। তবে সত্যি বলতে, এর আগেই আমরা একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি ছিলাম,’ বলেন ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে তার এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। উইটকফের উদ্ধৃতি দিয়ে ট্রাম্প বলেন, তিনি আমাকে বলেছেন গাজার যুদ্ধবিরতির বিষয়টি খুবই কাছে। স্টিভ এ বিষয়ে অত্যন্ত জ্ঞানী একজন ব্যক্তি।
এদিকে ইরান-ইসরাইল যুদ্ধের মধ্যেই গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়ালো ৫৬ হাজার। ইরানে বোমাবর্ষণের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়ও অভিযান অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত রোববার ভোর থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ৭৯ জন। গত মঙ্গলবার দুপুরে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলের হামলায় গাজায় মোট নিহত হয়েছেন ৫৬ হাজার ৭৭ জন এবং আহত হয়েছেন আরও এক লাখ ৪৮ হাজার ৮৪৮ জন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস ইসরাইলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালিয়ে এক হাজার ২০০ জনকে হত্যা এবং জিম্মি হিসেবে ২৫১ জনকে গাজায় ধরে নিয়ে যাওয়ার পরের দিন থেকে গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্যান্য দেশগুলোর চাপে বাধ্য হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরাইল। কিন্তু বিরতির দুই মাস শেষ হওয়ার আগেই গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। দ্বিতীয় দফার এ অভিযানে গত আড়াই মাসে গাজায় নিহত হয়েছেন চার হাজার ৬৪৯ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও প্রায় ১৪ হাজার ৫৭৪ জন। যে ২৫১ জন জিম্মিকে হামাসের যোদ্ধারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জন এখনও জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করার ঘোষণা দিয়েছে আইডিএফ।
এর আগে ইরানের সঙ্গে দুই সপ্তাহ ধরে চলা যুদ্ধ বিরতি ঘোষণার পর এখন ইরান ‘আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করার পরিকল্পনা’ অনুমোদন করেছেন দেশটির পার্লামেন্ট সদস্যরা। এই প্রস্তাবের বিপক্ষে কোনো প্রতিনিধি ভোট দেননি। এর আগে, ইরানি পার্লামেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতি কমিশন একটি ‘খসড়া অনুমোদন করে যাতে সরকারকে আইএইএ- এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করতে বলা হয়।’ কমিশন সংস্থার প্রতিবেদনকে ইরানের ওপর হামলার অজুহাত বলে অভিহিত করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ‘নিরীক্ষণ ক্যামেরা স্থাপন, পরিদর্শন ও সংস্থায় রিপোর্ট প্রদান’ এর মতো কার্যক্রম স্থগিত থাকবে, যদি না ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। ইসলামি পরামর্শদাতা পরিষদের স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ বলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না। ‘আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা তাদের দায়িত্ব পালন করেনি এবং একটি রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।’
সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদনে, ইরানকে অসহযোগিতার জন্য সমালোচনা করা হয়েছে। সংস্থাটি ইরানকে অঘোষিত পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে বলেছিল। ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুতের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। ইরানি পার্লামেন্টের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে উত্তেজনা বাড়াতে পারে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির স্বচ্ছতা ও এর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে। তবে ইরানের এমন অবস্থানে ট্রাম্প বলেছেন, ইরান যদি ফের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি চালু করে তাহলে আবারও দেশটিতে হামলা চালাবে যুক্তরাষ্ট্র।
গতকাল নেদারল্যান্ডসের হেগে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো সম্মেলনে গিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইরানকে এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি। ইরান আবার পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করলে যুক্তরাষ্ট্র ফের হামলা করবে কিনা- সাংবাদিকের এই প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, ‘অবশ্যই। আমি মনে করি না তারা আবার কখনও এটি (পামাণবিক কর্মসূচি) করবে।’ খবর- টাইমস অব ইসরাইল।
ট্রাম্প বলেন, ‘ইরান আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করবে। তারা ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবে। তারা পরমাণু বোমা পাবে না। তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না।’
ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে মার্কিন হামলাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমায় পরমাণু বোমা হামলার সঙ্গে তুলনা করে ট্রাম্প বলেন, সেই হামলার ফলে যুদ্ধ থেমেছিল। আমি হিরোশিমা-নাগাসাকির উদাহরণ দিতে চাই না। তবে ঘটনা একই। এর মাধ্যমেই যুদ্ধ থেমেছিল।’
ন্যাটো সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, হামলার পর ইরান ঘটনাস্থলে গেছে। তারা বলেছে, স্থাপনাগুলো বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। আমরা কী করেছি সেটা দেখার পরই তারা স্থির হয়েছে। আমরা এটা না করলে তারা প্রচুর অস্ত্র তৈরি চালিয়ে যেত। তারা থামতো না। যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর যে অবস্থা হয়েছে, তাতে সেগুলোতে পুনরায় কাজ শুরু করা কঠিন।