ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad
ভর্তুকি তুলে দিতে রয়েছে আইএমএফের ঋণের শর্ত

বিদ্যুতের ব্যয় কমানোর উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ২৩, ২০২৫, ১২:১৮ এএম

বিদ্যুতের ব্যয় কমানোর উদ্যোগ

বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। যদিও সরকারের ওপর  দাতা সংস্থা আইএমএফ ঋণের শর্ত হিসেবে বিদ্যুতের ভর্তুকি তুলে দেয়ার চাপ রয়েছে। কিন্তু বিদ্যুৎ খাতে বিপুল পরিমাণ লোকসানের কারণে প্রতিবছরই বাড়ছে সরকারের আর্থিক চাপ। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিগত সরকার দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করেছে। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চেষ্টা করছে অযাচিত ব্যয় কমিয়ে ও দুর্নীতির লাগাম টেনে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিদ্যুৎ খাতের খরচ কমাতে সরকার পুরনো, অদক্ষ ও ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ ও সিস্টেম লস কমানো, ক্যাপাসিটি চার্জ কমানো, কেনাকাটায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, বিদ্যুৎ উৎপাদনে সস্তা জ্বালানিকে অগ্রাধিকার দেয়া, পিডিবি ও অন্যান্য সংস্থাগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যয় হ্রাস, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, সব ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হওয়াসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি ৬৮২ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়েকটি রেন্টাল, কুইক রেন্টাল এবং আইপিপি কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি করা হবে। তাতে এক অর্থবছরে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

সূত্র জানায়, বিগত সরকারের দেড় দশকে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে। তাতে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়লেও প্রয়োজনীয় জ্বালানির অভাবে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। আবার প্রাথমিক জ্বালানির সংস্থান নিশ্চিত না করে চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে এখন ওসব কেন্দ্রের মাত্রাতিরিক্ত ক্যাপাসিটি চার্জ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত বিদ্যুৎ খাতে অযৌক্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, ব্যয়বহুল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং বিনা দরপত্রে কাজ দেয়ার কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। ফলে বিদ্যুৎ খাতের লোকসান এবং ভর্তুকি বাড়তে থাকায় দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়। এমনকি এক বছরে তিনবার বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিরও রেকর্ড আছে। আর বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দামও।

সূত্র আরও জানায়, দেশের বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সঙ্গে ডলারে চুক্তি এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) লোকসান বেড়েছে। ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ডলারের দাম ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ে তার প্রভাব পড়েছে। যদিও দেশীয় মুদ্রা টাকায় বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করতে বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে তাগিদ দিয়ে এলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে বিগত সরকার দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পরও গত অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে দিয়েছে। চলতি অর্থবছরে ১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হলেও সংশোধিত বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে মোট ভর্তুকি বরাদ্দ বেড়ে ৬২ হাজার কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি আইএমএফ ঋণ দেয়ার শর্ত হিসেবে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য প্রয়োজনে গ্রাহক পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির পরামর্শ দিলেও সরকারের পক্ষ থেকে তা নাকচ করে দেয়া হয়।

এদিকে বিগত সরকারের সময় স্থাপিত যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে এবং নতুন করে চুক্তি নবায়নের করার প্রস্তাব আসছে, তার কোনোটিই নবায়ন করা হচ্ছে না। এমনকি বিগত ৫ আগস্টের আগে যেসব চুক্তি নবায়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় কমানোর উদ্যোগের অংশ হিসেবে মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য একটি চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়েছে, যেখানে ইউনিটপ্রতি ট্যারিফ নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ টাকা ৪ পয়সা। সব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এই রেট বেঞ্চমার্ক হিসেবে কাজ করবে।

উৎপাদন ব্যয় কমাতে অন্যান্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশাপাশি গ্যাস ও তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের শুল্ক পুনর্নির্ধারণের কাজ চলছে। পাশাপাশি, স্বাধীন বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর (আইপিপি) জন্য ক্যাপাসিটি চার্জসহ শুল্ক কাঠামো পর্যালোচনার লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতির কারণে বিভিন্ন গ্রাহক পর্যায় ও শিল্পে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এখন খরচ কমানোর দিকেই মনোযোগী হতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিদ্যুৎ গ্রাহক সেবা বৃদ্ধি ও সম্পর্ক উন্নয়ন করার পাশাপাশি এ খাতে দুর্নীতি কমাতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম না বাড়িয়ে অন্যান্য যেসব ব্যয় রয়েছে সেগুলো কমানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে।

মূলত বিদ্যুৎ খাতে অপচয়, চুরি, লুণ্ঠনমূলক ব্যয় কমানো গেলে ভর্তুকি বাড়ানো নয়, বরং কমিয়ে দেয়া শতভাগ সম্ভব। বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন খরচ ছিল ৬ টাকা ৬১ পয়সা এবং পাইকারি বিক্রির দর ছিল ৫ টাকা ১৩ পয়সা। ফলে প্রতি ইউনিটে পিডিবির ১ টাকা ৪৮ পয়সা লোকসান ছিল। চলতি অর্থবছরে গড় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৩১ টাকা। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের পাইকারি মূল্য ৭ টাকা ৪ পয়সা। অর্থাৎ এক ইউনিটে ক্ষতি হচ্ছে ৫ টাকা ২৭ পয়সা। আর বিগত ২০০৯ সালে বিদ্যুতের খুচরা দাম ছিল ইউনিটপ্রতি ৩ টাকা ৭৩ পয়সা।

গত ১৫ বছরে প্রতি ইউনিটের খুচরা দাম বেড়ে হয়েছে ৮ টাকা ২৫ পয়সা। দাম বাড়িয়েও লোকসান কমেনি। তাই ভর্তুকির মাধ্যমে এই লোকসান সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি বেড়ে হয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। প্রতিবছর ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দকৃত অর্থের বড় অংশ ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতেই চলে যায়। বর্তমানে চাহিদার চেয়ে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৫৪ শতাংশ বেশি। অতিরিক্ত সক্ষমতার কারণে বিদ্যুৎ না কিনেও ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে বিদ্যুৎ বিভাগকে প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করতে হয়। তাছাড়া চাহিদার অতিরিক্ত সক্ষমতার বিদ্যুৎ এখন বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত অর্থবছরের শেষে রিজার্ভ মার্জিন, ক্যাপাসিটি ও সর্বোচ্চ চাহিদার মধ্যে পার্থক্য দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৬২১ মেগাওয়াট।

বার্ষিক চাহিদা বৃদ্ধির হার ৮ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হলেও প্রকৃত প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার তুলনায় কম হয়েছে। আদর্শ রিজার্ভ মার্জিন ২০ শতাংশ হলেও বর্তমানে বাংলাদেশে এটি প্রায় ৪১ শতাংশ, যা বিনিয়োগের সুযোগ ব্যয় বাড়িয়ে তুলছে।

অন্যদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানিয়েছেন, অনেক চাপ সত্ত্বেও বর্তমান সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়ায়নি। এই মুহূর্তে দাম বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেই। নিকট ভবিষ্যতেও বিদ্যুতের দাম বাড়বে না। সরকার অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা এবং খাতভিত্তিক সংস্কারের মাধ্যমে ভর্তুকি কমাতে চায়। সেক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হওয়া, কেনাকাটায় স্বচ্ছতাসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

Link copied!