নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ২৪, ২০২৫, ০১:৩৩ পিএম
দেশের ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে প্রশাসনিক তৎপরতা। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে এবার আরও আগেভাগেই নড়েচড়ে বসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
নির্বাচনে সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় ভোটকেন্দ্রে নজরদারি বাড়ানোর অংশ হিসেবে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে। এই উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক শাখা-২ থেকে সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আবদুল হাই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিব বরাবর ইতোমধ্যেই একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ইসি যেন দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১১তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
ওই সভার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো হলো : ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করে সেখানে সিসিটিভি স্থাপন ও মনিটরিং, সব সংস্থার সমন্বয়ে একটি স্পষ্ট কর্মপরিকল্পনা তৈরি, জেলা প্রশাসক, এসপি, ইউএনও ও ওসিদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনি প্রস্তুতি সম্পন্ন করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে প্রয়োজনীয় সদস্য নিয়োগ ও পাসিং আউট কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা, দুই দফা প্রস্তুতিমূলক মহড়া পরিচালনা ও নির্বাচনের আগে ও সময়কালে বিদ্বেষমূলক প্রচারণা ঠেকাতে সংস্থাগুলোকে সতর্ক থাকা।
সভায় নির্বাচন-পূর্ব ও নির্বাচনকালীন সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব সংস্থাকে একযোগে, নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশও দেয়া হয়।
এদিকে, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন নিয়ে ইসি এখনো নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আসেনি। নির্বাচন কমিশনের সচিব আখতার আহমেদ বলেন, এটা এখনই বলা সম্ভব নয়। কমিশনের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। এমন মন্তব্যে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, যখন নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিয়ে সরকার পক্ষ দৃশ্যমানভাবে উদ্যোগ নিচ্ছে, তখন কমিশনের অবস্থান কেন এতটা সংরক্ষিত? গত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রিক সহিংসতা, ব্যালট ছিনতাই, কেন্দ্রে জাল ভোট, সন্ত্রাসী হামলা এবং প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ ঘুরেফিরে এসেছে।
বিশেষ করে, অতীত নির্বাচনে যেসব কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ছিনতাই বা সহিংসতা হয়েছে, এবার সেসব কেন্দ্রেই নজরদারি বাড়াতে চায় প্রশাসন। সিসিটিভির মাধ্যমে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র নজরদারির ধারণা অবশ্য নতুন নয়। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু কেন্দ্রে এটি ব্যবহার হলেও, তখনও তা পূর্ণমাত্রায় কার্যকর হয়নি। তবে এবার এই ব্যবস্থা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের দিকেই এগোচ্ছে প্রশাসন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু সিসিটিভি বসালেই হবে না, তা কার্যকরভাবে রিয়েল টাইম মনিটরিং ও রেকর্ড সংরক্ষণ, সেগুলোর ওপর নির্ভরযোগ্য প্রযুক্তি এবং প্রশিক্ষিত জনবল নিশ্চিত না করলে এসব উদ্যোগ ফাঁকা ফ্রেমেই সীমাবদ্ধ থাকবে। তারা আরও মনে করছেন, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পক্ষগুলোর চাপ ও মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে যতটা উদ্বেগ আছে, তা নিরসনেও প্রয়োজন নীতি-নির্ধারকদের কঠোর অবস্থান।
তারা আরও বলছেন, আগামী নির্বাচন যেন সহিংসতা বা অনিয়মের কারণে বিতর্কিত না হয়, সেজন্য সরকার, প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের সম্মিলিত ভূমিকা প্রয়োজন। সিসিটিভি ক্যামেরা একধরনের নিয়ন্ত্রণের প্রতীক হতে পারে, কিন্তু গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে জরুরি উপাদান হলো— জনগণের আস্থা। যদি সেই আস্থা হারিয়ে যায়, তবে হাজার ক্যামেরাও গণরায় রক্ষা করতে পারবে না।