ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫
Amar Sangbad

জনস্বাস্থ্যের প্রকল্পে নজিরবিহীন অনিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই ২৭, ২০২৫, ১১:৩৮ পিএম

জনস্বাস্থ্যের প্রকল্পে নজিরবিহীন অনিয়ম
  • প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষের আগেই বেশিরভাগ অবকাঠামো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে

জনস্বাস্থ্যের প্রকল্পে নজিরবিহীন অনিয়ম ঘটেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষের আগেই বেশিরভাগ অবকাঠামো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই) কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই এক হাজার ৮৮৩ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। 

মূলত গ্রামীণ জনস্বাস্থ্য, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নে ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি’ শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পে সুবিধাবঞ্চিত হতদরিদ্র মানুষের জন্য টুইন পিট ল্যাট্রিন, পাবলিক টয়লেট ও হাত ধোয়ার স্টেশনে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। পানি সরবরাহের জন্য নকশাবহির্ভূতভাবে পাইপলাইন বসানো হয়েছে, ব্যবহার হয়েছে নিম্নমানের উপকরণ। তাছাড়া জলাশয় ভরাট করে পাইপলাইন স্থাপন করা হলেও পরিবেশের ছাড়পত্র নেয়া হয়নি। 

অথচ যাচাই-বাছাই ছাড়াই ঠিকাদারদের বিল পরিশোধ করা হয়েছে। এমনকি কাজের গুণগত মান তদারকে দায়িত্বপ্রাপ্তদের নেতিবাচক প্রতিবেদন তৈরিতে বাধা দেয়া হয়েছে।

দেশের ৩০ জেলার মানবসম্পদ উন্নয়নের নামে নিম্নমানের কাজ করে বৈদেশিক ঋণের বিপুল অর্থ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদাররা হাতিয়ে নিয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ‘মানবসম্পদ উন্নয়নে গ্রামীণ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি’ শীর্ষক প্রকল্পের মোট বরাদ্দের মধ্যে বৈদেশিক ঋণ হিসেবে এক হাজার ৮৩১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এসেছে। বিশ্বব্যাংক এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার আগেই ব্যাপক অনিয়ম, ব্যর্থতা ও দুর্নীতিতে প্রকল্পটি বড় উদাহরণ সৃষ্টি করে। 

প্রকল্পটির আওতায় গ্রামীণ এলাকার বাসাবাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি সরবরাহ, স্বাস্থ্যসম্মত পাবলিক টয়লেট স্থাপন, কমিউনিটি ক্লিনিকে নতুন স্যানিটেশন ও হাইজিন সুবিধা, হাত ধোয়ার স্টেশন এবং হতদরিদ্র পরিবারের জন্য টুইন পিট ল্যাট্রিন নির্মাণ করার কথা।

বিগত ২০২১ সালে একনেক সভায় অনুমোদিত ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ নির্ধারিত ছিল। 

অথচ গত এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৪৬ শতাংশ। অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে নির্ধারিত মেয়াদ শেষের পথে থাকলেও এখনো প্রায় অর্ধেক কাজ বাকি রয়েছে। আর যেগুলো হয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই ক্রটিপূর্ণ এবং নিম্নমানের। এককথায় প্রকল্পটিতে উন্নয়নের চেয়ে অপচয় ও দুর্নীতিই বেশি। ইতোমধ্যে অকেজো  ও পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে প্রকল্পের অনেক স্থাপনাই।

সূত্র জানায়, দরিদ্রদের জন্য অনেক জেলায় তৈরি টুইন পিট ল্যাট্রিনগুলোয় খুবই নিম্নমানের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া নির্মিত টয়লেটের টাইলস ভেঙে গেছে, নষ্ট হয়ে গেছে ফিটিংস, দরজার কাঠামোও দুর্বল। আর হাত ধোয়ার স্টেশনগুলো ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। তাছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য নির্মিত টয়লেটগুলো অনেক ক্ষেত্রে ক্লিনিক থেকে অনেক দূরে, কোথাও কোথাও আবার ডোবার পাশে নির্মাণ করায় বেশিরভাগ টয়লেট ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আর দরপত্রে উল্লিখিত স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী কোথাও বাসাবাড়িতে স্থাপন করা হয়নি পানি সরবরাহের পাইপলাইন। এমনকি চলমান থাকা অবস্থায়ই প্রকল্পের প্রধান অঙ্গগুলো পরিত্যক্ত এবং ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অথচ সাতজন অভিজ্ঞ পরামর্শকের পেছনে প্রায় ২৭ কোটি টাকা খরচ করা হলেও কাজের অগ্রগতি, গুণগতমান এবং রক্ষণাবেক্ষণ প্রশ্নবিদ্ধই রয়েছে। প্রকল্পটি ঠিকমতো বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা দেখভালে বছরে চারটি করে পিআইসি ও পিএসসি সভা হওয়ার কথা। কিন্তু কোনো বছরই ঠিকমতো হয়নি ওই সভাগুলো। আর আলোচ্য প্রকল্পে এ পর্যন্ত দুবার অডিট হয়েছে এবং তাতে বেশ কিছু অডিট আপত্তি উঠে এসেছে। যা এখনো নিষ্পন্ন হয়নি। 

সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পটির কাজের গুণগতমান নিয়ে নেতিবাচক প্রতিবেদন তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। কাজের গুণগতমান নিশ্চিতের দায়িত্বে থাকা জেলা সমন্বয়কারীরা ঠিকাদারদের কাজের অনিয়ম চিহ্নিত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ায় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তৈরির পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রতিবেদন না করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়। সেজন্যই নেতিবাচক প্রতিবেদন তৈরি থেকে সমন্বয়কারীরা বিরত থেকেছেন। এমনকি জেলা পর্যায়ে সমন্বয়কারীদের টার্মস অব রেফারেন্স অনুসারে ঠিকাদারদের বিল যাচাই-বাছাই বিষয়ে উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে তাদের ওই ক্ষমতা দেয়া হয়নি। এমনকি অনিয়ম-ত্রুটির জন্য ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, স্বয়ং প্রকল্প পরিচালকসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা এ অনিয়মে সহায়তা করেছে। 

এদিকে অনিয়মের বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মো. তবিবুর রহমান তালুকদার জানান, আইএমইডির প্রতিবেদনে আংশিক তথ্য এসেছে, পুরো প্রকল্পের চিত্র উঠে আসেনি। যেসব জেলায় খারাপ কাজ হয়েছে তারা সেসব জেলা পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিয়েছেন। সব জেলা পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিলে অনিয়মের হার এতো বেশি হতো না। আর এত বড় প্রকল্পের কাজ পিডির একার পক্ষে সব দেখভাল করা সম্ভব নয়। যথাযথভাবে কাজ করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। আর কাউকে নেতিবাচক প্রতিবেদন দিতে নিষেধ করা হয়নি। 

অন্যদিকে প্রকল্প মূল্যায়ন প্রতিবেদন সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের পেছনে প্রকল্প পরিচালকেরই দায় বেশি। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালক জেনেশুনেই অনিয়ম করেছে, নিয়মকানুন মানেনি। পরিচালকই ঠিকাদারদের কাজের অনিয়ম নিয়ে নেতিবাচক প্রতিবেদন তৈরি না করতে জেলা সমন্বয়কারীদের নির্দেশনা দেন। আর চাকরি বাঁচানোর ভয়ে প্রকল্প পরিচালকের নির্দেশনা মেনে নেতিবাচক প্রতিবেদন দেয়া বন্ধ করে। 

প্রকল্প পরিচালকের সহায়তা ছাড়া ঠিকাদারদের পক্ষে এতো বড় অনিয়ম করা সম্ভব নয়। এমনকি আইএমইডির মূল্যায়ন প্রতিবেদন যাতে নেতিবাচক না হয় সে চেষ্টাও করা হয়েছে। আর মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরির কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নেতিবাচক প্রতিবেদন না করার জন্যও বিভিন্নভাবে ম্যানেজ (রাজি করানো) করার চেষ্টা করা হয়।

Link copied!