Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ০৫ মে, ২০২৪,

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ২৮ বছর পর গ্রেপ্তার

মো. মাসুম বিল্লাহ

ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৩, ০৩:০৬ পিএম


মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ২৮ বছর পর গ্রেপ্তার

১৪ বছরের হেলেনা নামক এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে পরবর্তীতে হত্যা করছিলেন গ্রেপ্তারকৃত জাকির হোসেন। নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা এলাকায় ১৯৯৫ সালে গণধর্ষণপূর্বক এ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এবং ২৮ বছর যাবৎ পলাতক প্রধান আসামি আ. রাজ্জাক জাকির হোসেন (৬০) কে গতকাল রাতে গাজীপুর জেলার গাছা থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৩।

রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে র‌্যাব-৩ টিকাটুলিতে প্রেস ব্রিফিং থেকে এ তথ্য জানান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন।

দীর্ঘ ২৮ বছর আসামি জাকির হোসেন কিভাবে পালিয়ে ছিলো জানতে চাইলে, র‌্যাব-৩ অধিনায়ক জানান ১৯৯৫ সালে ঘটনার পরপরই সে নিজ এলাকা নেত্রকোনা থেকে পালিয়ে রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় এসে কিছুদিন রিকশাচালক হিসেবে আত্মগোপনে থাকে। এখান থেকে পালিয়ে সে সপরিবারে উত্তরায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে আত্মগোপনে থাকে এবং সিএনজি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে।

এখানে ছয় বছর থাকার পর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার ভয়ে সে পুনরায় স্থান পরিবর্তন করে গাজীপুরের গাছা থানা এলাকায় গা-ঢাকা দেয়। সেখানে গিয়ে সে নাম পরিবর্তন করে জাকির হোসেন ছদ্মনাম দিয়ে এনআইডি ইস্যু করে এবং দাড়ি ও চুল বড় রেখে নতুন পরিচয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকে।

এ সময় সে দুইটি সিএনজি কিনে একটি নিজে চালাত এবং অপরটি ভাড়া দিয়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করত। এছাড়াও জিজ্ঞাসাবাদে সে বিভিন্ন মাদকের চালান সংক্রান্ত কাজেও সম্পৃক্ততার কথা জানায়। এভাবে প্রায় ২৮ বছর আত্মগোপনে থাকার পর র‌্যাব কর্তৃক গ্রেপ্তার হয় ঘৃণ্য ও দুর্ধর্ষ এই অপরাধী।

র‌্যাব-৩ অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন জানান, ধৃত আসামী আ. রাজ্জাক তার প্রতিবেশী মো. রুস্তম আলীর কিশোরী মেয়ে মোছা. হেলেনাকে কু-প্রস্তাব দেয়। এতে সে রাজি না হলে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার এবং হত্যার হুমকি প্রদান করে রাজ্জাক। এতেও কাজ না হলে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে ১৯৯৫ সালের ১২ এপ্রিল দুপুরে আ. রাজ্জাকের বাড়িতে বসে ধৃত আসামী এবং তার অপকর্মের সঙ্গী আ. আজিজ, আলাল, আব্দুর রব, শাহিদ মিয়া, রহমান এবং হান্নানসহ বেশ কয়েকজন মিলে হেলেনাকে উঠিয়ে নিয়ে গণধর্ষণপূর্বক উচিত শিক্ষা প্রদানের পরিকল্পনা করে।

এরপর ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকেই আ. রাজ্জাক তার দলবল নিয়ে হেলেনার বাড়ির আশেপাশে ওৎপেতে থাকে।এবং যখন সন্ধ্যা ৭ টার দিকে হেলেনা বাড়ির অদূরে একটি শৌচাগারে গেলে আ. রাজ্জাক ও তার সহযোগী আ. আজিজ, শাহিদ মিয়া এবং রহমান মিলে হেলেনার মুখে গামছা পেঁচিয়ে অজ্ঞান অবস্থায় অপহরণ করে পাউরা গ্রামের একটি হাওরে নিয়ে যায়। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক পাউরা হাওরে রাজ্জাক বাহিনীর অপর ৮ জন সহযোগী অপেক্ষমান ছিল। ভিকটিম (হেলেনাকে) সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর তারা ১২ জন মিলে একের পর এক গণধর্ষণ করে।

একপর্যায়ে হেলেনা অসুস্থ এবং মৃতপ্রায় হয়ে পড়লে সে বারবার তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য আকুতি মিনতি করতে থাকে। এতে কোন কাজ না হলে একপর্যায়ে ভিকটিম চিৎকার করার চেষ্টা করলে ধৃত আঃ রাজ্জাক তার গলা টিপে ধরে এবং অন্যান্য সহযোগীরাও তাকে মারধর করতে থাকে যার ফলে শ্বাসরোধ হয়ে ভিকটিম হেলেনা মারা যায়। ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর তারা হাওরের একটি ধান ক্ষেতে ভিকটিমের লাশ বস্তাবন্দী করে মাটিতে পুতে রেখে পালিয়ে যায়।

আরিফ মহিউদ্দিন আরও জানান, এ হত্যা মামলার অন্যান্য আসামিদের ২০০২ সালে বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে উক্ত খুনসহ ধর্ষণের অপরাধে ধৃত আ. রাজ্জাকসহ ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ডে এবং অপর ৭ জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়। উক্ত ১২ জন আসামির মধ্যে ২ জন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ধৃত হয়ে জেল হাজতে মৃত্যুবরণ করে, ৮ জন বর্তমানে জেল-হাজতে রয়েছে এবং একজন পলাতক রয়েছে।

এআরএস

Link copied!