Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪,

বাস্তুচ্যুত হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ৫ বছর

সফিউল  আলম, কক্সবাজার

সফিউল আলম, কক্সবাজার

আগস্ট ২৪, ২০২২, ০৭:৫১ পিএম


বাস্তুচ্যুত হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ৫ বছর

মিয়ানমারে সৃষ্টি সহিংসতায় বাস্তুচ্যুত হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। গত ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ব্যাপকভাবে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে ২৫ আগস্ট ২০২২।

সংকট কালে কয়েক দফা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নিলেও নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ায় স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গারা ফেরত যায়নি। ফলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্থবির হয়ে পডেছে।

শুরুর দিকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিলেও খুব দ্রুত সময়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ।সে সময় কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দারাও রোহিঙ্গাদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছিলো। কিন্তু পাঁচ বছর পার হলেও তাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার কোনো লক্ষন দেখা যাচ্ছে না।

গত বছর নির্দষ্ট সংখ্যক রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে  স্থানান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও ২৫ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা নিতে সক্ষম হয়েছে। এখনো চলমান

রোহিঙ্গারা আসার পর উখিয়া  টেকনাফ সহ কক্সবাজারের শ্রমবাজারও বদলে গেছে। ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে তারা নানা ধরনের কাজ করছেন। ফলে স্থানীয় বাংলাদেশিদের জন্য এখন কাজ পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, বাঙালিদের চেয়ে রোহিঙ্গাদের শ্রম সস্তা।

স্থানীয়দের অভিযোগ হচ্ছে, রোহিঙ্গারা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা থেকে খাদ্য এবং নানা ধরণের সহায়তা পাচ্ছে। ফলে কম দামে শ্রম দিলেও তাদের অসুবিধা নেই। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারা যেহেতু কোনো সহায়তা পায় না। সে জন্য শ্রমের টাকাই তাদের মূল উপার্জন।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২ ধরণের অপরাধে মোট ২ হাজার ৪৩৮ মামলা দায়ের করা হয়েছে। যেখানে মোট আসামীর সংখ্যা ৫ হাজার ২২৬ জন।

তথ্য বিশ্লেষনে দেখা যায়, এ ৫ বছরে অস্ত্র উদ্ধার মামলা ১৮৫ টি, মাদক উদ্ধার মামলা ১ হাজার ৬৩৬ টি। ধর্ষণ মামলা ৮৮ টি। অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় বা আদায়ের চেষ্টা মামলা হয়েছে ৩৯ টি। এ ৫ বছরের হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে  ১১০ টির বেশি। যদিও ৫ বছরের হত্যা মামলার সংখ্যা ১০০ টি। যেখানে জোড়া খুন, ৬ খুনের ঘটনাও রয়েছে।

এর আগে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৪ বছরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, ধর্ষণ, অপহরণ, বিশেষ ক্ষমতা আইন, পুলিশ আক্রান্ত, ডাকাতি বা ডাকাতির প্রস্তুতি, হত্যা, মানব পাচার সহ ১২ ধরনের অপরাধে ১ হাজার ২৯৮ টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৭০টি খুন, ৭৬২টি মাদক, ২৮টি মানব পাচার, ৮৭টি অস্ত্র, ৬৫টি ধর্ষণ ও ১০টি ডাকাতি এবং ৩৪টি অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের
মামলা ও অন্যান্য আইনে ৮৯ টি মামলা।

২০১৭ সালে নানা অপরাধে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ছিল ৭৬টি আর আসামি হন ১৫৯ জন। ২০১৮ সালে ২০৮ মামলায় আসামি ৪১৪ জন।  ২০১৯ সালে মামলারসংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৬৩টি আর আসামি হন ৬৪৯ জন। ২০২০ সালে ১৮৪ মামলায় ৪৪৯জন রোহিঙ্গা আসামি হন। ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত ৫৬৭ টি মামলায় ১ হাজারের উপরে রোহিঙ্গা আসামী হয়েছিল।

ফলে গত ১ বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২ অপরাধে মামলা হয়েছে ১ হাজার ১৪০ টি। যেখানে অস্ত্র উদ্ধার ৯৮ টি, মাদক উদ্ধার ৮৭৪ টি, ধর্ষণ ২৩ টি। আর হত্যা মামলা ৩০ টি।

পাঁচ বছর পার হলেও রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে যাবার লক্ষণ দেখছেন না স্থানীয় জনগন।রোহিঙ্গারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় আতংকিত হয়ে পড়ছেন তারা।

কেএস 

Link copied!