Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪,

হরিরামপুরে পদ্মার বালু লুট, রাতের আঁধারে জেগে উঠে বালুখেকোরা

হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি

হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি

জানুয়ারি ৮, ২০২৩, ০৫:৫৯ পিএম


হরিরামপুরে পদ্মার বালু লুট, রাতের আঁধারে জেগে উঠে বালুখেকোরা

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় পদ্মা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে রাতের আঁধারে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। রাতেই বাল্কহেডে করে এসব বালু চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে পদ্মাপাড়ের ফসলি জমি, বাড়িঘরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভাঙন হুমকিতে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হরিরামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৯টি ইউনিয়নই ভাঙনকবলিত এলাকা। প্রতিবছরই নদী ভাঙনের ফলে এসব এলাকার ফসলি জমি, বসতবাড়িসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে ভাঙন ঠেকাতে প্রতিবছরই বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়। অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে এভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙন আর ত্বরান্বিত হবে।

সরজমিনে জানা যায়, হরিরামপুর উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ফরিদ মোল্লা এবং গালা ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুলাল সূত্রধর পদ্মা নদীর রামকৃষ্ণপুর এলাকায় ‘মেসার্স আরাফাত এন্টারপ্রাইজ-৪’ নামক ড্রেজার বসিয়ে রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন। এসব বালু বাল্কহেডে করে রাতেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় চলে যাচ্ছে। দিনের বেলায় বলগেট রামকৃষ্ণপুর এলাকায় নদীর পাড়ে রাখা হয়। সন্ধ্যার পর থেকেই চলে বালু উত্তোলন।

জানতে চাইলে ড্রেজারের চালক আবুল কালাম বলেন, ‘দিন দশেক আগে ড্রেজার নিয়ে এখানে এসেছি। তিনদিন যাবত বালু কাটছি। নদীর মাঝে চরের পাশ থেকে বালু কাটি। মোল্লা ফরিদ আর দুলাল সূত্রধর আমাদের এনেছে। গতকাল রাতেও সাত হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলন করেছি। মোল্লা ফরিদ ও দুলাল সূত্রধরের সঙ্গে প্রতি ঘনফুট বালু ৬০ পয়সা দরে কাটার চুক্তি হয়েছে।’

সরজমিনে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, আট-দশ দিন যাবত ড্রেজার এখানে আনা হয়েছে। দিনের বেলায় পাড়ে ভিড়ানো থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকেই ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়। অবৈধভাবে এই ড্রেজিং এর ফলে পদ্মার ভাঙন আরও বাড়বে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রামকৃষ্ণপুর গ্রামের এক গৃহবধু বলেন, ‘কয়েকদিন যাবত সন্ধ্যার পর থেকেই ড্রেজার দিয়ে বালু কাটা হচ্ছে। আর দিনের বেলায় ড্রেজার এনে পাড়ে রাখা হয়।’

রামকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মজিদ বলেন, ‘এমনিতেই প্রতিবছর নদীতে ভাঙে। অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙন আরও বৃদ্ধি পাবে। আমাদের নদী পাড়ের মানুষের যে কি কষ্ট তা তো ড্রেজারওয়ালারা বুঝবে না।’

বকচর গ্রামের কৃষক সফি বলেন, ‘কয়েকদিন যাবত দিনের বেলায় ড্রেজার নদীর পাড়ে ভিড়ানো দেখি। শুনেছি সন্ধ্যার পরে ড্রেজার দিয়ে বালু কাটা হয়।’

সরজমিনে দুলাল সূত্রধরকে ড্রেজারে পাওয়া গেলেও তিনি বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা মোল্লা ফরিদের সঙ্গে কথা বলেন।’

মুঠোফোনে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে মো. ফরিদ মোল্লা বলেন, ‘আমি মানিকগঞ্জ একটা কাজে আসছি। সন্ধ্যায় দেখা করে কথা বলবো।’ পাশাপাশি সংবাদ প্রকাশ না করতেও অনুরোধ করেন তিনি।

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি জানতাম না। দ্রুতই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ মুঠোফোনে বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছি। এরকম বিষয় থাকলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো। যারা এর সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এআরএস

Link copied!