Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪,

স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন টাঙ্গাইলের ৭৬ চরমপন্থি

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

মে ২০, ২০২৩, ০১:৪২ পিএম


স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন টাঙ্গাইলের ৭৬ চরমপন্থি

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া, কাতুলি, দ্যাইন্যা ও কাকুয়া ইউনিয়ন নিয়ে টাঙ্গাইলের চরাঞ্চল। যমুনা ও ধলেশ্বরী নদী বেষ্টিত হওয়ায় এ অঞ্চলের চরমপন্থি আতঙ্কে দিন কাটাত সাধারন মানুষ। একটা সময় টাঙ্গাইলের চরাঞ্চল এলাকাকে বলা হতো ‘রক্তাক্ত জনপদ’।

যেখানে খুন, লুটতরাজ, জিম্মি, ও অপহরণ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। এ সকল এলাকায় কথিত পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল) ও সর্বহারাসহ নানা চরমপন্থি গোষ্ঠীর উত্থান হয় নব্বইয়ের দশক থেকে। 

চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফেরাতে ২০২০ সাল থেকে কাজ শুরু করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

এর অংশ হিসাবে র‌্যাবের পক্ষ থেকে চরমপন্থিদের পরিবারের সদস্যদের স্বাভাবিক পেশায় পুনর্বাসিত করার লক্ষ্যে তাদের আর্থিকভাবে স্বচ্ছল করতে নানা কর্মমুখী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। 

বর্তমানে টাঙ্গাইলে ৩০টি সর্বহারা পরিবারের নারী সদস্যদের হস্তশিল্প প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করতে ‘উদয়ের পথে’ নামক একটি পাইলট প্রগ্রাম চলমান রয়েছে। এ প্রগ্রামের আওতায় ভূমিহীনদের স্থায়ী বাসস্থানের জন্য ভূমি বরাদ্দের পরিকল্পনাও রয়েছে।

আগামী ২১ মে সিরাজগঞ্জ স্টেডিয়ামে র‌্যাব-১২ এর তত্ত্বাবধানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নিকট টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, পাবনা, বগুড়া, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুরসহ দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন চরমপন্থি গোষ্ঠীর মোট ৩২৩ জন সদস্য দুই শতাধিক অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করবেন। এদের মধ্যে শুধুমাত্র টাঙ্গাইলের চরমপন্থি রয়েছে ৭৬ জন।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নের বেগুনটাল এলাকার সাবেক সর্বহারা দলের সদস্য বারেক মিয়া জানান, সরকারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে পুর্নবাসিত করা হয়েছে দেখেই সর্বহারা দলের অন্য সদস্যরা সম্প্রতি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে। রোববার র‌্যাব-১২ এর নিকট ৭৬ সর্বহারা সদস্য আত্মসমর্পন করবে বলে জেনেছি।

এ বিষয়ে বেগুনটাল বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম ও শওকত আলী জানান, একটা সময় ছিল টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলের মানুষ দিনের বেলাতেও স্বাভাবিক ভাবে ব্যবসা বানিজ্য পরিচালনা করতে পারতো না। সর্বহারা সদস্যদের আত্মসমর্পনের খবর এলাকাবাসী জানতে পেরে আনন্দের জোয়ারে ভাসছে। এ খবরে স্বস্তি ফিরেছে চরাঞ্চলে।

সর্বহারা দলের টাঙ্গাইল জেলার কমান্ডার সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নের কাশিনগর গ্রামের জিয়াউর রহমান জানান, আমাদেরকে ভুল বুঝিয়ে নেতারা পথভ্রষ্ট পথে নিয়েছিল। মুখে নীতি কথা বললেও কাজে ছিল পুরো উল্টো। সাধারন মানুষ আমাদেরকে ঘৃণার চোখে দেখতো। আমার সন্তানরাও এ জন্য এলাকায় মুখ দেখাতে পারতো না। তাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতেই আমারা ৭৬ সদস্য ৩৬টি অস্ত্র   ও বিপুল পরিমান গুলিসহ আত্মসমর্পন করতে যাচ্ছি।

সর্বহারা দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড কালিহাতী উপজেলার পৌলি এলাকার লেবু মন্ডল জানান, গতকাল রাতেও আমি আতঙ্কে কাটিয়েছি। সর্বহারা দলের সদস্য হওয়ার পর থেকেই ঈদেও ছেলে-মেয়েদের থেকে দূরে থেকেছি। ডজন খানেক মামলা মাথায় নিয়ে ঘুরতেছি। এ জীবন যে কেমন কষ্টের তা বলে বুঝানো যাবে না।

সর্বহারা দলের অপর দুই সদস্য মজনু মিয়া ও সাইদুল হক জানান, সবাই আমাদেরকে শুধুমাত্র ব্যবহার করেছে। নীতিনৈতিকরা পথ ভুলে আমরা এক ভিন্ন গ্রহনের বাসিন্দার মত জীবন কাটিয়েছি। এ ফেরারী যাযাবর জীবন থেকে রক্ষা পেতেই আমরা আত্ম সমর্পন করতে যাচ্ছি।

র‌্যাব ১২ এর অধিনায়ক (সিও) ও অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মারুফ হোসেন জানান, বিভিন্ন চরমপন্থি দলের নেতা ও সদস্যদের বিভিন্ন ভাবে আর্থিক প্রণোদনার মাধ্যমে পুর্নবাসনের লক্ষ্যে র‌্যাব কাজ করে যাচ্ছে। এর অংশ হিসাবে গরুর খামার, পোল্ট্রি ফার্ম, মাছ চাষের ব্যবস্থা, চায়ের দোকান, ভ্যান-রিকশা, সেলাই মেশিন দেওয়ার মাধ্যমে চরমপন্থি সদস্য ও তাদের পরিবারগুলোকে স্বাভাবিক পেশায় স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

এইচআর

Link copied!