Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪,

দারাশাহী তুলপাই নুরুজ্জামান চৌধুরী বাড়ি

কচুয়ায় কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে ২৫০ বছরের পুরনো জমিদার বাড়ি

সাইফুল ইসলাম সুমন, কচুয়া (চাঁদপুর)

সাইফুল ইসলাম সুমন, কচুয়া (চাঁদপুর)

মে ২৫, ২০২৩, ০৬:০৪ পিএম


কচুয়ায় কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে ২৫০ বছরের পুরনো জমিদার বাড়ি

ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন। এই ঐতিহাসিক নিদর্শনের মধ্যে একটি হচ্ছে জমিদার বাড়ি। যা বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে রয়েছে। 

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার দারাশাহী তুলপাই-মালচোয়া সড়কের পাশে জরাজীর্ণ অবস্থায় দাড়িয়ে থাকা বাড়িটির নাম নুরুজ্জামান চৌধুরী বাড়ি। কালের সাক্ষী হয়ে আজও মাথা উঁচুু করে দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটি। বিভিন্ন এলাকা থেকে বাড়িটি দেখার জন্য অনেকইে ছুটে আসেন। এককালে যাদের ছিল জাঁক জমকপূর্ণ বিলাস বহুল জীবনযাত্রা জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের পর তারা এ এলাকা ছেড়ে চলে যান। জমিদারদের এককালের দালান কোঠার ধ্বংসাশেষ এখনো কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এর ইট সুরকি খসে খসে পড়ছে। খসে যাওয়া দালানটির ইটের ফাঁকে ফাঁকে এখন গজিয়েছে ডুমুর ও বট বৃক্ষ আর জমেছে শেওলার আস্তরণ। বাড়িটির পূর্ব পাশে দারাশাহী মসজিদের দক্ষিণের দেয়ালে ফার্সি ভাষায় লিখা সাইনবোর্ড দেখে ধারণা করা হয় এ বাড়ি ও মসজিদ প্রায় ২৫০ বছর পূর্বে ১২০২ হিজরিতে নির্মাণ করা হয়। 

জানা যায়, হযরত দারাশাহ (রহ.) এক হিন্দু জমিদারের কণ্যাকে মুসলমান বানিয়ে বিয়ে করেন। জমিদার কণ্যাকে তার বাবা তাদের জমিদারিত্বের কিছু অংশ দান করেন।  তাদের সন্তান বদরুদ্দিন চৌধুরী। তৎসময়ে দারাশাহ (রহ.) মারা যান এবং পাশেই তাকে দাফন করা হয়। তখন বদরুদ্দিন চৌধুরির ছেলে নুরুজ্জামান চৌধুরী জমিদারের দায়িত্ব পালন করছেন। নুরুজ্জামান চৌধুরী তার দাদীর নির্দেশে জমিদারি পরিচালনা করার জন্য ১২০২ হিজরিতে একটি দালান, একটি মসজিদ ও দীঘি খনন করেন। তিনি যে মসজিদটি নির্মাণ করেছেন, সেটি বর্তমানে হযরত দারাশাহ (রহ.) মসজিদ নামে পরিচিত।
জমিদারি পরিচালনা করার জন্য নুরুজ্জামান চৌধুরী প্রায় ২৫০ বছর আগে যে দালানটি নির্মাণ করেন সেটি এখনো ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে দাড়িয়ে আছে। দালানটি দুতলা বিশিষ্ট। দালানে জমিদারদের ধন ধৌলত রাখার জন্য একটি কক্ষ ছিল সেটিকে আন্ধার মানিক বলা হত। সে স্থানটি এখনো অন্ধকার রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। 

জমিদাররা তাদের জমিদারি প্রথা শেষ হলে তারা এখান থেকে চলে যান। পরে স্থানীয়রা তাদের কাছ থেকে জমিজমা ক্রয় করে বর্তমানে সেখানে বসবাস করছেন। কিন্তু দালানে কেউ বসবাস করছেন না। দালানের পূর্ব পাশে যে মসজিদটি রয়েছে, সেটিকে স্থানীয়রা সংস্কার ও বর্ধিত করে সেখানে নিয়মিত নামাজ আদায় করছেন।
স্থানীয় অধিবাসী মো. আলমগীর হোসেন বলেন, আমি ছোট বেলা থেকে এ দালানটি দেখে আসছি। এখানে আমি কাউকে বসবাস করতে দেখিনি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোবারক হোসেন পাটওয়ারী জানান, আমার বয়স ৮৫ বছর। এ বাড়িতে জমিদাররা তাদের জমিদারি পরিচালনা করত। তবে আমি জমিদারদের বংশধর কাউকে এ বাড়িতে বাস করতে দেখিনি।

এনায়েতপুর দরবার শরীফের পীর গোলাম গাউছ আল কাদেরী জানান, দারাশাহী মসজিদের দক্ষিণের দেয়ালে ফার্সি ভাষায় লিখা সাইনবোর্ড দেখে ধারণা করা হয় এ বাড়ি ও মসজিদটি প্রায় ১২০২ হিজরিতে নুরুজ্জামান চৌধুরী নির্মাণ করেন। 

জমিদারি প্রথা শেষ হলে তারা এ এলাকা ছেড়ে চলে যান। বর্তমানে  তাদের বংশধরের কেউ এ বাড়িতে বসবাস করছেন না। বাড়িটি এখন পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে।

আরএস
 

Link copied!