Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৪,

বঙ্গোপসাগরের হিংস্র ছোবল গিলে খাচ্ছে ফাতরার বন

বেলাল হোসেন মিলন, বরগুনা

বেলাল হোসেন মিলন, বরগুনা

জুলাই ১১, ২০২৩, ০৬:২৪ পিএম


বঙ্গোপসাগরের হিংস্র ছোবল গিলে খাচ্ছে ফাতরার বন

বঙ্গোপসাগরের উত্তাল হিংস্র ঢেউয়ের ছোবল আর ভাঙ্গনের ফলে উপকূলীয় টেংরাগিরি (ফাতরার বন) বনটি এখন বিলিনের পথে। ইতোমধ্যে ৬২ বছরে প্রায় আড়াইশো কোটি টাকা মূল্যের ২ হাজার একর জমিসহ কয়েক লক্ষাধিক গাছ সাগর গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। 

সাগরের ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্হা না নিলে বনটি সাগর বক্ষে বিলীন হয়ে যাবে। বন রক্ষায় সম্প্রতি জাইকার ২ সদস্য বিশিষ্ট একটি টিম ফাতরার বন পরিদর্শন করেছে। পটুয়াখালী বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান সরকার ১৯৬০ সালে টেংরাগিরি বনটিকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করে। 

কাগজে কলমে টেংরাগিরি বন হলেও স্থানীয় ভাবে বনটি ফাতরার বন হিসেবে অধিক পরিচিত। ১৩ হাজার ৬শ’ ৪৭ দশমিক ০৩ একর আয়তনের বনটির পূর্বদিকে রয়েছে কুয়াকাটা, মহিপুর ও আন্দার মানিক খাল। পশ্চিমে লালদিয়া, কুমির মারা, পায়রা ও বিষখালীর মোহনা। উত্তরে বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটা, নিশান বাড়িয়া ও সখিনা খাল। 

দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর। বনটির চতুর দিকে সাগর নদী বেষ্টিত এবং  গাছ গুলো স্বাশ মূলীয় হওয়ায় পর্যকটদের কাছে এর আকর্ষন খুব বেশী। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নির্বিচারে মানুষের গাছ নিধন ও সাগরের ঢেউয়ের ছোবলে বনের বির্যয়ের কারনে জৌলুশ হারিয়ে ফেলায় এখন আর আগের মত পর্যটকরা ফাতরার বনে আসে না। 

১১ কিলোমিটার প্রস্ত আর ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বনের পুরোটাই রয়েছে সাগরের তীর ঘেষে।১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত বনটি ২০২৩ সালে এসে মাত্র ৬১ বছরের ব্যবধানে  বনের আকার কমে গেছে অনেক। ইতোমধ্যে প্রায় আড়াইশো কোটি টাকা মূল্যের ২ হাজার একর বন সাগর গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের বনের গেওয়া, কেওরা ধুন্দল, হেতাল রেন্ট্রিসহ বহু প্রজাতির গাছ। 

প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম আসলে সাগরের হিংস্রতা বেড়ে যায়। এসময় পাহার সমান ঢেউ এসে বনের উপর আছরে পড়ে। এভাবে অনবরত ঢেউয়ের ছোবলে ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে গাছের গোড়ার মাটি সড়ে গাছগুলো মাটিতে পড়ে সাগরে ভেসে যায়।  অন্যদিকে সাগরের ঢেউয়ে বনের ভিতরে বালু জমে শ্বাস মূল নষ্ট হওয়ায় অনেক গাছ মরে যাচ্ছে। 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে,  সাগরের তীর ঘেষে অবস্থিত ১৭ কিলোমিটার এলাকা জুরে বনের হাজার হাজার  কেওড়া, গেওয়া, করমচা, হেতাল, রেন্ট্রি গাছ সাগরের ঢেউয়ের তোরে উপরে মাটিতে পড়ে আছে। ভাটার সময় গাছ গুলো দেখা গেলেও জোয়ারের  পরে গাছ গুলো আর দেখা যায় না।  

সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এভাবেই দিনের পর দিন বছরের পর বছর ধরে বন যাচ্ছে সাগরের পেটে। সাগরের  ঢেউয়ের তোরে বনের ভিতরের প্রায় ৫শ মিটার পর্যন্ত গাছের গোরার মাটি সরে গেছে। এ সকল গাছ এখন মৃত্যুর পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যে কোন সময় বিলিন হয়ে সাগরের পেটে চলে যাবে। 

স্থানীয় ষাটোর্ধ বাসিন্দা আছমত আলী জানান, সাগরের গভীরের ২মাইলের মধ্যে বাগান আছিল হেই বাগান সাগরে লইয়া গ্যাছে। ভাঙতে ভাঙতে বাগান এহন প্রায় শ্যাষ অইয়া যাওন ধরছে।  প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর বনদস্যুদের উৎপাতেও বনটির কাহিল দশা। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বরের সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে বনটি প্রায় লন্ড ভন্ড হয়ে যায়। 

কয়েক লক্ষ গাছ দুমরে মুছরে যায়। এ রেশ কাটতে না কাটতেই ২০০৯ সালে আবার আঘত হানে আইলা। এতেও বনের অনেক ক্ষতি হয়। এর পর রয়েছে বনদস্যুদের উৎপাত। স্থানীয় বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে একদল বনদস্যু দিনে রাতে সমান ভাবে বনের গাছ কেটে নদী পথে পাচার করছে উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন ইট ভাটাসহ স্বমিলে। 

স্থানীয় একটি প্রভাবশারী সিন্ডিকেট এই গাছ চুরির সাথে জরিত। তারা দীর্ঘদিন ধরে ফাতরা, সুন্দরবন ও নলবুনিয়ার চর থেকে বিভিন্ন সময় গাছ চুরি করে থাকে। 

পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো.শফিকুর রহমান জানান, সাগরের ভাঙ্গনের হাত থেকে বনকে রক্ষার জন্য নতুন করে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এছাড়া সাগরের ভাঙ্গনের হাত থেকে বনকে রক্ষার জন্য কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয় যায় এ বিষয়ে জুনের প্রথম সপ্তাহে জাইকার ২সদস্য বিশিষ্ট একটি শক্তিশালী টিম বনএলাকা পরিদর্শন করেছে।

তাছাড়া এবছর আমরা ঝাউ এবং অন্যান প্রজাতির গাছ ঘন করে লাগাবো। যাতে সাগরের ঢেউ আছরে পরে মাটির ক্ষয় করতে না পারে।

এইচআর

Link copied!