Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪,

অবৈধ দখলমুক্ত হলো সাভারের বংশী নদী

সাভার প্রতিনিধি

সাভার প্রতিনিধি

জুলাই ১৩, ২০২৩, ০৭:০৭ পিএম


অবৈধ দখলমুক্ত হলো সাভারের বংশী নদী

দখলে দূষণে অস্থিত্ব হারাতে বসা সাভারের প্রাণ বংশী নদীর এখন নিজেই প্রাণ ফিরে পেতে চলেছে  প্রশাসনিক উদ্যোগে।
দখলকারীদের তালিকা ধরে ধরে মাঠে নেমেছে উপজেলা প্রশাসন। চোখে কালো ফিতা বেঁধেই শুরু হয়েছে উচ্ছেদ অভিযান। নদী উদ্ধারে গিয়ে শাসকগোষ্ঠীর অনেকের চক্ষুশূল হয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তাদের ওপর নানাভাবে চাপ-ও এসেছে। কিন্তু জিরো টলারেন্স দেখিয়ে নদী উদ্ধারে ছিলেন অটল অবস্থানে।

নানা হুমকি উপেক্ষা করেই নদী উদ্ধারে অব্যাহত রেখেছেন উচ্ছেদ কার্যক্রম, সাড়াঁশি অভিযান গুড়িয়ে দিয়েছেন বছরের পর বছর ধরে নদীর বুকে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা।

যুগের পর যুগ ধরে নদীভরাট করে গড়ে তোলা বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দিয়ে পরিবেশ ও নদী রক্ষা আন্দোলনকারীসহ সর্বস্তরের মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম।

স্থানীয়রা জানান, সাভারে নদী দখলের মাত্রা এমন একটা পর্যায়ে ছিলে যেখানে নদী রক্ষায় খোদ হস্তক্ষেপ করতে হয় উচ্চ আদালতকে।

উপজেলা প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ১৩৩৪০/ ২০১৯ নং রিট মামলার প্রেক্ষাপটে বংশী নদীকে দখল ও দূষণমুক্ত রাখার জন্য ষাট দিনের মধ্যে উচ্ছেদ কার্যক্রম সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেওয়া হয় জেলা প্রশাসনকে।

এর প্রেক্ষাপটে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে মাত্র দু’দিনে নদী তীরবর্তী প্রায় ২ একর নদীর জায়গা ও ১ একর খাস জায়গা উদ্ধার করা হয়।  অভিযানে সম্পৃক্ত করা হয় বিআইডব্লিউটিএ কেও। পরবর্তীতে আরো দু’দিন অভিযান চালিয়ে প্রায় ২ একর নদীর জায়গা এবং ৩ একর খাস জায়গা উদ্ধার করা হয়। চারদিনের এই অভিযানে পাল্টে যায় সাভারে নদী তীরবর্তী এলাকার চিত্র। উচ্ছেদ করা হয় বংশী নদীর তীরে দখলে ২’শ ৮৬ জন অবৈধ দখলদারকে। সাভারে নদী রক্ষায় প্রশাসনের এই উ্দ্যোগ সাড়া ফেলেছে প্রশাসনে-ও। কোন বাধা বিপত্তির তোয়াক্কা না করে নদী উদ্ধারে একনিষ্ট ভূমিকা পালন করায় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন  প্রশংসায় ভাসছেন সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম।

এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীর জানান,নদী উদ্ধারে সাভার উপজেলা প্রশাসনের এমন আন্তরিকতা আমাদের কাছে এখন দৃষ্টান্ত।

নদী রক্ষায় নানা উদ্যোগ নিয়েও অতিতে কাজের কাজ কিছু হয়নি। দেখা গেছে উচ্ছেদের কিছুদিনের ব্যবধানেই নদীর জায়গা ভরাট বা দখল করে পুনরায় দখল হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি বার্তা দেয়া হয়েছে দখলকারদের। তা হলো যত ক্ষমতাধরই হোন না কেন নদীর জায়গা দখল করা যাবে না।

আব্দুল করিম নামে স্থানীয় খেয়াঘাটের মাঝি জানান, স্বাধীনতার পর থেকেই বংশ পরম্পরায় দখল করা হয় হয়েছে সাভারের বংশী নদী।

প্রথমে আবর্জনা ফেলে,পরে সেখানে ধীরে ধীরে সেখানে আধাপাকা স্থাপনা গড়ে তুলে দখল করা হয়েছে নদীকে।
এভাবে বছরের পর বছর ধরে নানা পরিক্রমায় চলছে বংশাই নদী দখলের মহোৎসব। তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে উদ্যোগ নিয়েও উচ্ছেদ কার্যক্রম শেষ পর্যন্ত চালানো যায়। এবার ব্যতিক্রম। দূষণ রোধ করে নদী তীরের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে নদীর প্রাণ ফিরিয়ে আনায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন নদীপাড়ের বাসিন্দরাও।

তারা বলছেন,নদী দখলমুক্ত করার মাধ্যমে  উপজেলা প্রশাসন যে কঠোর বার্তা দিয়েছে দখলকারীদের,এখন সহসাই কেউ আর নদী দখলে পা বাড়াবে না।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা.এনামুর রহমান এমপি নিজের সংসদীয় আসনে নদী উদ্ধারে প্রশাসনের উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেছেন, প্রভাবশালীরা দিনের পর দিন নদী দখল করে গেছেন। অতিতে লোক দেখানো অভিযান পরিচালিত হলেও এবার সাভারবাসী দেখেছে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।

এভাবে প্রভাবশালীদের উচ্ছেদ করা যাবে- এটা তারাও ভাবেন নি। এর মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

সাভার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব বলেন, দখলকারীদের বিষয়ে নানা পক্ষ থেকে তদবির করা হয়েছে। কিন্তু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দৃঢ় মনোভাব আর আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মুখে নদী আজ দখলমুক্ত। এটাই আমাদের সাফল্য।

সরেজমিনে বংশী নদীর সাভার অংশের নামাবাজার ও নয়ারহাটসহ বিভিন্ন স্থানে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের মাধ্যমে নদী ফিরে পেয়েছে  আগের চেহারা।সেখানে এখন অবসরে ভিড় করেন দর্শনার্থীরা।

সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমরা কেবল আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। তিনি বলেন,উচ্চ আদালত নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন। আদালত বলেছেন, ‘মানুষের জীবন-জীবিকা নদীর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মানবজাতি টিকে থাকার অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নদী। নাব্য সংকট ও বেদখলের হাত থেকে নদী রক্ষা করা না গেলে বাংলাদেশ তথা মানবজাতিই সংকটে পড়বে। প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মকর্তা হিসেবে আমাদের নিজেদের দায়িত্ব অনেক। উচ্ছেদ কার্যক্রম প্রকৃতপক্ষে একটি জটিল প্রক্রিয়া। সেই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে গেলে অনেকের বিরাগভাজন হতে হয় এটা যেমন সত্য তারচাইতে বেশি আনন্দের নদীকে রক্ষা করে অসংখ্য মানুষের সমর্থন, ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করা।

তিনি বলেন,নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা ও উচ্ছেদের মাধ্যমে আমাকে জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে গণমাধ্যম ও সুশীল সমাজের সবাই সহযোগিতা করেছেন। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ইতোমধ্যে অবৈধ স্থাপনাগুলো অপসারণ করা হয়েছে। ভূমি জরিপের কাজ চলছে। উপজেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ যাতে টেকশই হয় সেটা নিয়েই এখন বিষদ পরিকল্পনা চলছে। কেবলমাত্র দখলমুক্তই নয়,নদী বাঁচাতে বিভিন্ন স্থানে দীর পাড়ে ওয়াক ওয়ে (হাঁটার ব্যবস্থা), নদী পূর্ণখননসহ আরও বেশ কিছু উদ্যোগ নিলে তবেই আমাদের প্রচেষ্টা পূর্ণাঙ্গ মাত্র পাবে- যোগ করেন সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম।

Link copied!