Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ০৭ মে, ২০২৪,

ঢাবিতে প্রোগ্রামের ‘অনুমতি’তে প্রশাসনের দ্বৈতনীতি

ঢাবি প্রতিনিধি:

ঢাবি প্রতিনিধি:

এপ্রিল ২৬, ২০২৪, ১২:১৬ পিএম


ঢাবিতে প্রোগ্রামের ‘অনুমতি’তে  প্রশাসনের দ্বৈতনীতি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ‍‍`দ্বৈতনীতি‍‍` অবলম্বন করার অভিযোগ উঠেছে।

গত ৬ বছরের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অন্যান্য প্রোগ্রামের অনুমতি বিশ্লেষণ করলেই তার বাস্তব প্রমাণ মিলে। সর্বশেষ সারাদেশে তীব্র তাপদাহে ‍‍`ইসতিসকার‍‍` নামাজের আয়োজন করা হলেও অনুমতি মেলেনি। কিন্তু আজ ২৫ এপ্রিল ছাত্র ইউনিয়ন ঠিকই অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করেছে!

 

১) হলরুম বুকিং দিয়েও ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ কে ঢুকতে দেয় নি প্রশাসন:

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে একটি ইশতেহার ঘোষণার জন্য বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তন নির্দিষ্ট ভাড়া পরিশোধ করে বুকিং দিয়েছিলেন। নির্ধারিত সময়ে

‘তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা-২০১৮’ অনুষ্ঠানের ব্যানার টাঙ্গানোর জন্য গেলে ঢাবি প্রশাসন ক্ষমতাসীন দলের ‍‍`অদৃশ্য‍‍` ইশারায় তাদের কে ঢুকতে দেয় নি। ফলে মিলনায়তনের বাইরে দাঁড়িয়ে ঐ ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। হলরুমে অনুষ্ঠান করতে না পারায় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের তৎকালীন ডীন অধ্যাপক সাদেকা হালিম হল ভাড়ার টাকা ফেরত দিয়েছিলেন।

 

২) প্রোগ্রাম তো দূরের কথা, ঢুকতেই পারে না ছাত্রদল:

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের  রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ২০২২ সালের  ২২ মে দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে  ২৪ মে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ছাত্রদল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে ঐদিন টিএসসি যাওয়ার পথে শহীদ মিনার এলাকায় ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টাও ব্যর্থ হন।২৬ মে আবার ক্যাম্পাসে ঢুকতে গেলে ছাত্রলীগের সাথে আবারো সংঘর্ষে আহত অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে গুলি ছোড়ার অভিযোগ তুলেন।

সেই বছর ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার নবগঠিত কমিটির নেতাকর্মীরা পূর্বানুমতি নিয়ে প্রশাসনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে ছাত্রলীগের নির্মম, ন্যক্কারজনক ও বর্বরোচিত হামলার শিকার হন তারা।‌প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণে হতবাক হন দেশবাসী। এর পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন তো দূরের কথা,ঢুকতে ই পারে নি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তবে গত বছর এবং এ বছর তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আশেপাশে মিছিল ও সমাবেশ করেছে ছাত্রদল।

 

৩) অনুমতি দিয়েও বামপন্থী শিক্ষকদের ‍‍‘শিক্ষা বিষয়ক‍’ আলোচনা সভার ভেন্যু অনুমতি বাতিল:
গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ‍‍‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক‍‍’ নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে উন্মুক্ত একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল। আয়োজকেরা এ জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচার থিয়েটার ভবনের আর সি মজুমদার মিলনায়তন ব্যবহারের অনুমতিও (বরাদ্দ) নিয়েছিলেন। তবে অনুষ্ঠান শুরুর ১০ মিনিট আগে সেমিনারের জন্য বরাদ্দ বাতিল করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। 

মিলনায়তনে অনুষ্ঠান করতে না পেরে  ঐদিন বেলা তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছিলেন আয়োজকরা।

 

৪) কোরআন পাঠের আসরে জড়িত শিক্ষার্থীদের তালিকা চেয়ে ডীনের চিঠিতে সমালোচনার ঝড়:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় গত ১০ মার্চ রমজানকে স্বাগত জানিয়ে কোরআন তেলাওয়াত অনুষ্ঠান আয়োজনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের কেন শাস্তি প্রদান করা হবে না তার জবাব চেয়ে আরবি বিভাগের চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছিল কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির ।

১৩ মার্চ আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জুবায়ের মোহাম্মদ এহসানুল হকের কার্যালয়ে দেওয়া এই চিঠিতে কোরআন তেলাওয়াত মাহফিল আয়োজন করে প্রক্টর অফিসের ‍‍`নিয়মের ব্যত্যয়‍‍` ঘটিয়েছে বলে দাবি করা হয়। দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এহেন দ্বৈত আচরণে। 

২৪ মার্চ ওই চিঠি প্রত্যাহার করতে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন কে উকিল নোটিশ প্রদান করেন। তাতে প্রশাসন কিছুটা নরম হয়।

 

৫) বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজের অনুমতি মেলেনি:

তীব্র দাবদাহের কষ্ট থেকে মুক্তি, কৃত গুনাহের জন্য ক্ষমা ও বৃষ্টি প্রার্থনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সর্বসাধারণকে নিয়ে  ২৪ এপ্রিল বুধবার বেলা ১১টায় হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের মাঠে ইসতিসকার নামাজের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। নামাজের ইমামতি ও মোনাজাতের জন্য নির্ধারণ করা হয় শাইখ অধ্যাপক মুখতার আহমাদকে। তবে ঘোষণা দিয়েও অনুমতি মেলেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।

ইসতিসকার নামাজের উদ্যোগ গ্রহণকারীদের একজন হলেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ছাত্র এবি জোবায়ের।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, "সবার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে আমরা নামাজের জন্য সময় ঘোষণা করি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের ডেকে নিষেধ করা হয়। তাই স্থগিত করা হয়েছে।"

 

৬) বাদ্য যন্ত্র ব্যবহার করে তীব্র গরমেও ছাত্র ইউনিয়নের সমাবেশ:

আজ ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দুপুরে তীব্র তাপদাহের মধ্যেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমাবেশ করেছে বামপন্ত্রী সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের একটি অংশ। তবে অনুষ্ঠানের জন্য অনেক আগেই অনুমতি নিয়েছিল বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কর্মসূচির অনুমতি নিয়ে প্রশাসনের দ্বৈতনীতি অবলম্বনের তীব্র সমালোচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোঃ মারুফ হাসান ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন,"হিট ওয়েবের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সশরীরে ক্লাস বন্ধ। তাহলে ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর প্রোগ্রাম কেন?সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে প্রশ্ন রেখে গেলাম।

 

৭) ‍‍‘অনুমতি ছাড়াই‍‍’ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে ছাত্রলীগ:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যখন-তখন অনুমতি ছাড়াই রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় নেতারা অতিথি হিসেবে না আসলে তারা প্রশাসন থেকে অনুমতি পর্যন্ত নেয় না।

২৩ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিখদের তরবারি যাত্রা অনুষ্ঠান নিয়েও আলোচনা এবং সমালোচনা চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, তীব্র দাবদাহের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ক্লাস ঘোষণা করেছে।

সে জায়গায় আমরা খোলা মাঠে নামাজের অনুমতি দিতে পারি না। নামাজের জন্য আমাদের কেন্দ্রীয় মসজিদ রয়েছে, হলে হলে মসজিদ রয়েছে, ইমাম-খতিবও রয়েছে। দ্বৈতনীতি অবলম্বনের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।


বিআরইউ

Link copied!