Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪,

সাপাহারে সরকারি হাসপাতালে বেড়েছে নরমাল ডেলিভারি, খুশি প্রসূতিরা

জাহাঙ্গীর আলম মানিক, সাপাহার (নওগাঁ)

জাহাঙ্গীর আলম মানিক, সাপাহার (নওগাঁ)

জানুয়ারি ২, ২০২৪, ১২:০৩ পিএম


সাপাহারে সরকারি হাসপাতালে বেড়েছে নরমাল ডেলিভারি, খুশি প্রসূতিরা
ছবি: আমার সংবাদ

নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাড়ছে নরমাল ডেলিভারি সংখ্যা। এ হাসপাতালে ২০২৩ সালে ৬১৪টি নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন হয়েছে। সংখ্যা বিবেচনায় জেলার মধ্যে এটি সর্বোচ্চ বলা হচ্ছে। আধুনিক যন্ত্রাংশ যুক্ত হবার ফলে চালু হয়েছে কিছু নতুন সেবা। এছাড়াও বর্হিবিভাগ, আন্তঃবিভাগ ও জরুরি বিভাগে বেড়েছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা।

২০২০ সালে এ হাসপাতালে বর্হিবিভাগে চিকিৎসা পেয়েছেন ৫৩ হাজার ৬১৪ জন, ২০২১ সালে ৮৪ হাজার ৭০ জন, ২০২২ সালে ১ লাখ ১৭ হাজার ১৬৪ জন, ২০২৩ সালে ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৬০ জন। আন্তঃবিভাগে ২০২০ সালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪ হাজার ৬০০ জন, ২০২১ সালে ৬ হাজার ১০৫ জন, ২০২২ সালে ৭ হাজার ৪১১ জন, ২০২৩ সালে ৮ হাজার ৩৩৪ জন। জরুরি বিভাগে ২০২০ সালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১১ হাজার ৫৬১ জন, ২০২১ সালে ১৪ হাজার ৬৮২ জন, ২০২২ সালে ১৮ হাজার ২২৪ জন, ২০২৩ সালে সংখ্যা দাঁড়িছে ১৯ হাজার ৭৪৭ জনে।

সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহা. রুহুল আমিন বিগত ৪ বছর আগে এ হাসপাতালে যোগদানের পর চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধি করণ এবং বিশেষ করে নরমাল ডেলিভারি বাড়াতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং সিজারিয়ান না করে নরমাল ডেলিভারিতে জনসচেতনতা বাড়াতে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেন।

নরমাল ডেলিভারিতে উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মাঠ পর্যায়ে শিক্ষক, চেয়ারম্যান, মেম্বার, স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন এনজিও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছানোর নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। নানাভাবে প্রসূতি মহিলাদের বিনামূল্যে প্রসূতি দাওয়াত কার্ডও প্রদান করা হয় এবং স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স থেকে ডেলিভারির আগ মুহূর্ত পর্যন্ত চলতে থাকে কাউন্সিলিং আর চেকআপ।

জনসচেতনতামূলক এসব কার্মসূচির ফলস্বরূপ বর্তমানে এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পূর্বের তুলনায় অনেকাংশে বেড়েছে নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিরাপদে এ ডেলিভারি করানো হলে মা ও শিশু মৃত্যুর ঝুঁকিও কম।

নরমাল ডেলিভারিতে তুলনামূলকভাবে খরচ একেবারে কম এমনি চিন্তা ধারায় উৎসাহিত হয়ে সিজারিয়ান চিন্তা বিমুখ হয়ে উপজেলার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে শুধুমাত্র চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ৬১৪ টি নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন হয়েছে। যা গত বছর এর সংখ্যা ছিল মাত্র ৫১৭টি।

সংখ্যার দিক থেকে এটি জেলায় শীর্ষস্থান দখল করেছে। যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। পূর্বে যেখানে প্রতি মাসে গড়ে ১০ থেকে ১২টি নরমাল ডেলিভারি হতো কয়েক বছরের ব্যবধানে এখন সেখানে প্রতি মাসে নরমাল ডেলিভারি ৮০ তে উন্নীত হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত নরমাল ডেলিভারির সংখ্যা ৬১৪টি, যা ২০২০ সালে ছিল ২৬৩টি, ২০২১ সালে ছিল ৪৫৫টি এবং ২০২২ সালে ৫১৭টি নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন হয়েছিল।

এ বিষয় নিয়ে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সভা কক্ষে স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহা. রুহুল আমিন।

এসময় ডা. মুহা. রুহুল আমিন জানান, নওগাঁ জেলার প্রথম উপজেলা পর্যায়ে এখানে আলাদা ডেলিভারি ইউনিট চালু করা হয়েছে এবং ছয়জন মিডওয়াইফের সমন্বয়ে গঠিত টিম সার্বক্ষণিক ডেলিভারি ও গর্ভকালীন এবং প্রসব পরবর্তী চেকআপ কাজে নিয়োজিত থাকেন। এখানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নরমাল ডেলিভারির ব্যবস্থা রয়েছে।

ডেলিভারি পরবর্তী এক মাসের ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়ে থাকে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এবং সব ধরনের যন্ত্রপাতির সমন্বয়ে সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকে ডেলিভারি রুম। এখনও মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রচার প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে।

এছাডাও স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিকসহ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রচারণা ও সহযোগিতায় আমরা তথা সাপাহার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এতদূর আসতে সক্ষম হয়েছে।

প্রসঙ্গত, এই উপজেলার জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত করতে উপজেলা সদরের জয়পুর এলাকায় সরকারি অর্থায়নে ১৯৮২ সালে স্থাপিত হয় সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবন।

প্রাথমিক পর্যায়ে ১৯৮৮ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট ভবন নির্মিত হলেও পরবর্তীতে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়ে শিশুবান্ধব হাসপাতাল হিসেবে রুপলাভ করে। পরবর্তীতে দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উন্নয়নের স্বীকৃতি স্বরূপ রাজশাহী বিভাগে শ্রেষ্ঠত্বের সম্মাননা লাভ করে।

এআরএস

Link copied!