Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪,

ফেনীতে ১০৩টি ইটভাটার মধ্যে ৫৬টিই অবৈধ

এস এম ইউসুফ আলী, ফেনী

এস এম ইউসুফ আলী, ফেনী

ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৪, ০৩:৩৭ পিএম


ফেনীতে ১০৩টি ইটভাটার মধ্যে ৫৬টিই অবৈধ

ফেনীতে ইউএনও কার্যালয়ের মাত্র ১শ-২শ গজের মধ্যেই ফসলি জমির মাটি পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। এছাড়া জেলার ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ১০৩টি ইটভাটার মধ্যে ৫৬টিই অবৈধ। এসব ইটভাটায় যাচ্ছে ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি, অন্যদিকে বন উজাড় করে জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে করে দূষিত কালো ধোঁয়ায় নষ্ট করছে আশপাশের পরিবেশ।

এদিকে ইটভাটাগুলোতে মানা হচ্ছে না সরকারের কোনো নিয়ম নীতি, প্রতিনিয়তই নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মাটি, বায়ু, কাঠ এবং ওজন স্তর।          অভিযোগ রয়েছে কিছু রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তির ছত্রছায়ায় ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে প্রতিনিয়ত এসব ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন ও পরিবেশবাদীদের আপত্তির পরও ইটভাটাগুলোতে ফসলি জমির মাটি ও বনের কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি হচ্ছে।

কৃষি জমির মাটি কাটার ফলে জমি হারাচ্ছে উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা। ইটভাটায় মাটি নেওয়ার ফলে ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। দুর্ভোগে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। প্রশাসনের তৎপরতায় থেমে নেই ফসলি জমির উর্বর মাটি কাটা। গত এক সপ্তাহে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ফেনীর বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে ৯ ইটভাটাকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর ফেনীর তথ্য মতে, জেলার ১০৩টি ইট ভাটার মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রপ্রাপ্ত বৈধ ইটভাটা ১৭টি অবৈধ ১৬টি, ছাগলনাইয়া উপজেলায় বৈধ ৮টি অবৈধ ১০টি, পরশুরাম উপজেলায় বৈধ ২টি অবৈধ ৩টি, সোনাগাজী উপজেলায় বৈধ ৪টি অবৈধ ১টি, দাগনভূঞা উপজেলায় বৈধ ৮টি ও অবৈধ ১৬টি, ফুলগাজি উপজেলায় ৮টি বৈধ ও ১০টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে।

অবৈধ এসব ইটভাটা গুলোর মধ্যে রয়েছে মেসার্স শুক্কুর ব্রিকস, মেসার্স শুক্কুর সিরামিক ব্রিক্স, মেসার্স তুষার ব্রিকস, মেসার্স সোনালী ব্রিকস, মেসার্স ধলিয়া ব্রিকস, মেসার্স মঠবাড়িয়া ব্রিকস, মেসার্স ইলিয়াস ব্রিকস, মেসার্স আল মদিনা ব্রিকস, মেসার্স খাইয়ারা ব্রিকস, মেসার্স খাইয়ারা ব্রিকস ২, মেসার্স ওপেন ব্রিকস, মেসার্স তেমুহনী ব্রিকস, মেসার্স শাপলা ব্রিকস, মেসার্স রুপায়ণ ব্রিকস, মেসার্স সোনাপুর ব্রিকস, মেসার্স বিরিঞ্জি ব্রিকস, মেসার্স পূর্ব পাঠান নগর ব্রিকস, মেসার্স কহুয়া ব্রিকস, মেসার্স সততা ব্রিকস, মেসার্স শান্তি বাজার ব্রিকস, মেসার্স রহমান ব্রিকস ১, মেসার্স রহমান ব্রিকস ২, মেসার্স বাদার্স ব্রিকস, মেসার্স জামাল ব্রিকস, মেসার্স মক্কা ব্রিকস, মেসার্স পাঠাননগর ব্রিকস, মেসার্স চিতলিয়া ব্রিকস, মেসার্স প্রীতি ব্রিকস, মেসার্স সততা ব্রিকস, মেসার্স প্রগতি ব্রিকস, মেসার্স ন্যাশনাল ব্রিকস (১), মেসার্স ন্যাশনাল ব্রিকস (২), মেসার্স ন্যাশনাল ব্রিকস (৩), মেসার্স ন্যাশনাল ব্রিকস (৪), মেসার্স ন্যাশনাল ব্রিকস (৬), মেসার্স আর এল বি টু ব্রিকস, মেসার্স ব্রাদারস ব্রিকস (১) (২), মেসার্স জাকের ব্রিকস, মেসার্স সিরাজ ব্রিকস, মেসার্স মডার্ন ব্রিকস, মেসার্স সালামত ব্রিকস, মেসার্স মদিনা ব্রিকস, মেসার্স সিলোনিয়া ব্রিকস, মেসার্স দাগনভূঞা ব্রিকস, মেসার্স হাসানপুর ব্রিকস, মেসার্স আপন ব্রিকস, মেসার্স পরফুল ব্রিকস, মেসার্স জিএম হাট ব্রিকস (১)(২), মেসার্স চেয়ারম্যান ব্রিকস, মেসার্স আনন্দরত্ন অটো ব্রিকস, মেসার্স সরকার ব্রিকস, মেসার্স আমজাদ হাট ব্রিকস, মেসার্স দেশ ব্রিকস।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বৈধ-অবৈধ এসব ইটভাটাগুলো শুধু উর্বর মাটি ধ্বংস করছে না, বায়ু, মাটি ও প্রকৃতির স্থায়ী ক্ষতি করছে। স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালীদের মালিকানা ও ছত্রছায়া এসব ইটভাটা চলছে। তাদের দাবি, প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রেখে অলিখিত চুক্তিতে ম্যানেজ করে এসব ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন মালিকরা। এসব ইটভাটার কারণে মরে যাচ্ছে আশ-পাশের গাছপালা। উর্বরতা হারাচ্ছে ফসলি জমি, ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে পরিবেশ।

ফেনী সদর উপজেলার বিরলী গ্রামের বাসিন্দা আবদুল কুদ্দুছ ক্ষোভের সাথে জানান, ইটভাটায় ফসলি জমির উর্বর মাটি কেটে নেওয়ার ফলে কৃষি উৎপাদন দিন দিন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রাতের আঁধারে প্রভাবশালী মহল এসব মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাচ্ছে। কৃষি জমির অনেক মালিক নিজ ইচ্ছায় মাটি বিক্রি করতে না চাইলেও মাটি খেকোরা বিভিন্ন প্রলোভন ও চাপ সৃষ্টি করে এবং পাশের জমির মাটি কেটে বড় গর্ত করে অনিচ্ছুক জমির মালিকদের মাটি বিক্রি করতে বাধ্য করছে।

ফেনী পরিবেশ ক্লাব অব ইয়ুথ নেটওয়ার্ক সভাপতি নজরুল বিন মাহমুদুল বলেন, ‘ইটভাটা দেশের বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। একই সঙ্গে তা কৃষি, জীববৈচিত্র ও প্রকৃতির ক্ষতি করছে। অধিকাংশ ইটভাটার কারণে কৃষিজমির ফসলের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি আশপাশের বাসিন্দাদের নানা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

ফেনী ব্রিকফিল্ড মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রতিবছর আমরা পরিবেশের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করি। কিন্তু নানা জটিলতায় তা হয় না। প্রতিটি ইটভাটা সরকারকে নিয়মিত ভ্যাট প্রদান করে এবং শত শত লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে। বিভিন্ন কারণে বর্তমানে অনেক ইটভাটার মালিক এ ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে।

জানতে চাইলে দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিবেদিকা চাকমা জানান, কয়েকদিন আগে পরিবেশ মন্ত্রী এসে যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন। সেভাবেই মাটি কাটা রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অবৈধ ভাটাগুলো বন্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর ফেনীর উপ-পরিচালক শওকত আরা কলি বলেন, ‘পরিবেশের দিক বিবেচনা করেই সরকার পরিবেশবান্ধব ব্লক নির্মাণের জন্য উৎসাহ প্রদান করছে। যেসব ইটভাটা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া পরিচালিত হচ্ছে, তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিগগির তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।’

ইএইচ

Link copied!