Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪,

৫ বছরেও শেষ হয়নি জুড়ী টেকনিক্যাল কলেজের নির্মাণ কাজ

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

মার্চ ১৭, ২০২৪, ০৫:২৬ পিএম


৫ বছরেও শেষ হয়নি জুড়ী টেকনিক্যাল কলেজের নির্মাণ কাজ

মৌলভীবাজারের জুড়ীতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে একটি কলেজের নির্মাণ কাজ। প্রায় ৫ বছর যাবৎ ঝুলে আছে তৈমুছ আলী সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবন নির্মাণ কাজ।

২০২০ সালের জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ শেষ হওয়ার চার বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণের কাজ। ফলে পিছিয়ে পড়ছে কারিগরি শিক্ষার প্রসার। জনমনে সৃষ্টি হয়েছে অসন্তোষ আর ক্ষোভ।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের উদাসীনতা ও সরকারি কর্মকর্তাদের অবহেলাকেই দায়ী করছেন স্থানীয়রা।

দীর্ঘ ৫ বছর নির্মাণ কাজ ঝুলে থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার পাওয়া এ প্রকল্পের কাজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আর কবে শেষ হবে এ টেকনিক্যাল কলেজের কাজ। দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দিন দিন নির্মাণ কাজে চরম অবহেলা করে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষার প্রসার ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দেশের ১০০টি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ তৈরির উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে  ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৫ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণের কাজ পায় ‘এম এন এন্টারপ্রাইজ’ ও ‘ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের ঢাকার দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৮ সালের ১৫ অক্টোবর উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর গ্রামে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অর্থায়নে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ তৈমুছ আলী এমপি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মৌলভীবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, এমপি।

২০২০ সালের জুন মাসে কাজটি সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কাজের উদ্বোধনের পর কাজের ধীরগতি, কাজ বন্ধ থাকা, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লাপাত্তা, বিভিন্ন সময়ে কাজে অনিয়ম, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকের মৃত্যু, একাধিকবার সময় বাড়ানো, এভাবেই কেটে গেছে প্রায় পাঁচটি বছর। তবুও শেষ হয়নি এ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবন নির্মাণের কাজ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কার্যাদেশ পাওয়া এম এন এন্টারপ্রাইজ’ ও ‘ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের ঢাকার দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল ২০২০ সালের জুনের মধ্যে। এর মধ্যে পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৫২ শতাংশ।  সম্পূর্ণ কাজ বুঝিয়ে দেওয়াতো দূরের কথা বিভিন্ন সময়ে  কাজ বন্ধ থাকলেও ইতোমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৬ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকার বিল তুলে  নিয়েছেন। মন্ত্রণালয় ২০২৩ এর জানুয়ারিতে ক্লাস করার জন্য সময় বেধে দিলেও কাজ শেষ না হওয়ায় এ শিক্ষাবর্ষে কলেজের কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। তবে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে মাত্র ২-৩টি কক্ষ প্রস্তুত করে কোনোমতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।

কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে এখানে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর কথা থাকলেও কোন কক্ষ প্রস্তুত না থাকায় শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। পরে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোনোমতে তিনটি কক্ষ ও শিক্ষকদের বসার জন্য একটি কক্ষ প্রস্তুত করে দিলে এ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হয়েছে। চলতি বছর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬৫ জন, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে ৪০ জন করে মোট ১৪৫ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। অর্ধেকের বেশি কাজ এখনো সম্পন্ন না হওয়ায় এখানে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পড়েছেন বলে জানা যায়।

ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক শরীফ উদ্দিন বলেন, অনেক আশা ভরসা নিয়ে ছেলেকে তৈমুছ আলী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি করেছি। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানের কাজ এখনো সম্পন্ন না হওয়ায় লেখাপড়ার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। অবিলম্বে সরকারের কাছে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার জোর দাবি জানাই।

উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখরুল ইসলাম ও মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি রতীশ চন্দ্র দাশ বলেন, পাঁচ বছর আগে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এখনো কাজ শেষ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা চরম দুর্ভোগে আছে।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ মোঈদ ফারুক বলেন, তৈমুছ আলী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের কাজ শেষ না হওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অতিদ্রুত কাজটি শেষ করার দাবি করছি।

তৈমুছ আলী সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী মুহাম্মদ আজহারুল ইসলাম বলেন, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির মোট ১৪৫ জন শিক্ষার্থী বর্তমানে পড়াশোনা করছে। এ প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত সকল উন্নয়ন সম্পন্ন করা হলে আগামীতে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা যাবে।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) আফজাল হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে এ কলেজের কাজ শেষ হয়েছে ৫২ শতাংশ। ২০২০-২১ সালে করোনাভাইরাসের কারণে এবং ঠিকাদার মারা যাওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সমস্যার কারণে কাজ বিলম্ব হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নতুন করে আবারো সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছে। তবে কাজ দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।

ইএইচ

Link copied!