ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Amar Sangbad

ইনস্টাগ্রাম

Amar Sangbad

এক্স

Amar Sangbad


লিংকডইন

Amar Sangbad

পিন্টারেস্ট

Amar Sangbad

গুগল নিউজ

Amar Sangbad


হোয়াটস অ্যাপ

Amar Sangbad

টেলিগ্রাম

Amar Sangbad

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Amar Sangbad


ফিড

Amar Sangbad

ঢাকা শুক্রবার, ০১ আগস্ট, ২০২৫
Amar Sangbad

একযুগ পর ভারত থেকে দেশে ফিরল নিখোঁজ জগুনা, পরিবারে খুশির বন্যা

গোসাইরহাট (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি

গোসাইরহাট (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি

মে ২, ২০২৪, ০৯:০৫ পিএম

একযুগ পর ভারত থেকে দেশে ফিরল নিখোঁজ জগুনা, পরিবারে খুশির বন্যা

মানসিক ভারসাম্যহীন জগুনা বিবি প্রায়ই বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যেতেন। সর্বশেষ ২০১১ সালে নিখোঁজ হলে অনেক খোঁজাখুজি করেও আর পাওয়া যায়নি তাকে। দীর্ঘ একযুগ পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে ভারত থেকে দেশে ফিরে এসেছেন তিনি। দীর্ঘদিন পর মাকে ফিরে পাওয়ায় জগুনার ছেলে মেয়েদের মধ্যে বইছে খুশির বন্যা।

বৃহস্পতিবার ( ২ মে) শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার জাজিরা ইউনিয়নের ডেঙ্গর ব্যাপারী কান্দি গ্রামের জয়নাল ব্যাপারী আমার সংবাদকে জানিয়েছেন, দীর্ঘ একযুগ পর তার মা জগুনা বিবি দেশে ফিরে এসেছেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) ভারতের কলকাতা থেকে যশোর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাড়িতে পৌঁছায় জগুনা বিবি।

জগুনা বিবির পরিবার সূত্রে জানা যায়, জাজিরা ইউনিয়নের ডেঙ্গর ব্যাপারী কান্দি গ্রামের লাল মিয়া ব্যাপারী ও জগুনা বেগম দম্পত্তির বিয়ে হয় ১৯৭৬ সালে। এরপর দীর্ঘদিন একসাথে কাটে তাদের সংসার জীবন। এই দম্পতির ঘর আলো করে জন্ম নেয় দুই ছেলে ও দুই মেয়ে । ছেলে মেয়ে বড় হওয়ার পর জগুনা বিবি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। প্রায়ই তিনি বাড়ি থেকে কাউকে কিছু না বলে অন্যত্র চলে যেতেন। কখনো তিনি একা ফিরে আসতেন আবার কখনো বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতেন ছেলে মেয়ে ও স্বজনরা। সর্বশেষ ২০১১ সালে নিখোঁজ হয়ে আর বাড়িতে ফিরে আসেননি জগুনা বিবি। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। খোঁজা খুঁজি করতে করতে এক পর্যায়ে হতাশ হয়ে পড়ে তার পরিবার। এভাবেই কেটে যায় দীর্ঘ এক যুগ। এরপর গত রমজান মাসে জাজিরা উপজেলার মাসুদ রানা নামের এক যুবকের ফেসবুক আইডিতে কমেন্ট করেন কলকাতার মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী আজিজুল শেখ। সেখানে তিনি জানান, জাজিরার একজন বৃদ্ধ মহিলা তার আশ্রয়ে রয়েছেন। পরে মাসুদ রানা ‍‍`প্রাণের জাজিরা‍‍` নামক একটি ফেসবুক গ্রুপে জগুনা বিবিকে নিয়ে পোস্ট দেন। ওই পোস্ট থেকেই খোঁজ মিলে জগুনা বিবির পরিবারের। মাসুদ রানার পোস্ট দেখে জগুনা বিবির স্বজনরা কলকাতার আজিজুল শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে গত ৩০ এপ্রিল জগুনা বিবিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন তার স্বজনরা।

জগুনা বিবিকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া যুবক মাসুদ রানা আমার সংবাদকে জানান, আমার ফেসবুকের একটি পোস্টে আজিজুল শেখ নামের একজন কমেন্ট করেন। এরপর তার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়। আজিজুল শেখ কলকাতার বাসিন্দা। জানতে পারি তার কাছে জগুনা বিবি নামের একজন বৃদ্ধা আছে। এরপর আজিজুল শেখের নিকট থেকে ওই বৃদ্ধের সকল তথ্য নিয়ে ‘প্রাণের জাজিরা’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করি। ওই পোস্ট দেখে জগুনা বিবির পরিবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর আজিজুল শেখের সঙ্গে তাদেরকে কথা বলিয়ে দেই। পরে তারা জগুনা বিবিকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে।

জগুনা বিবির ছেলে জয়নাল ব্যাপারী আমার সংবাদকে বলেন, আমার মা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। ২০১১ সালে নিখোঁজ হওয়ার পরে বিভিন্ন জায়গায় তন্ন তন্ন করে মাকে খুঁজেছি, কিন্তু কোথাও তাকে পাইনি। প্রায় একযুগ পর মাসুদ রানা ভাইয়ের ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে কলকাতার আজিজুল ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এরপর আজিজুল ভাইয়ের কাছে মায়ের চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট, ভোটার আইডি কার্ড, জন্ম নিবন্ধন ও নিখোঁজ হওয়ার সাধারণ ডায়েরীর কপি দিলে আজিজুল ভাই মাকে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। আলহামদুলিল্লাহ দীর্ঘ এক যুগ পর মাকে আমরা খুঁজে পেয়েছি। মা বর্তমানে কিছুটা অসুস্থ, ভালোভাবে কথা বলতে পারছেন না। মা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন, সেজন্য সকলের কাছে দোয়া চাই। আজিজুল ভাই, মাসুদ ভাইয়ের জন্য আপনারা দোয়া করবেন।

কলকাতার দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার ফেদেরগঞ্জ থানার বিজয়ভাটি গ্রামের সোলাইমান শেখের ছেলে আজিজুল শেখের আশ্রয়ে ছিলেন জগুনা বিবি। হোয়াটসঅ্যাপে আজিজুল শেখের সঙ্গে কথা হয় আমার সংবাদের এই প্রতিবেদকের। 

তিনি বলেন, আমি গত ৮ বছর আগে আমার দোকানের সামনে অসুস্থ জগুনা বিবিকে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় পেয়ে বাড়িতে নিয়ে যাই। জগুনা বিবি দেখতে আমার দাদির মতো। আমার দাদি পৃথিবীতে আর নেই। তাই বাড়ির সবাই জগুনা বিবিকে পেয়ে অনেক খুশি হয়। আমার মা জগুনা বিবিকে অনেক যত্ন করেন। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল সময়। এরপর গত ৪ মাস আগে বুড়ি মা জগুনা বিবি বড় ধরনের স্ট্রোক করেন। ভাবিনি তিনি বেঁচে ফিরবেন। তবে আল্লাহর রহমতে তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেন। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পরে তিনি আমাদের কাউকেই আর চিনতে পারেননি। তিনি বারবার তার ছেলে মেয়ে ও আগের বাসস্থানের কথা বলতে থাকেন। ছেলে মেয়ের কাছে যাওয়ার জন্য উতলা হয়ে ওঠেন। এমন পরিস্থিতিতে তার বলা ঠিকানা অনুযায়ী আমি ফেসবুকে বাংলাদেশের শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার মাসুদ রানা নামের এক তরুণের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে বিস্তারিত জানাই। মাসুদ রানা পরে আমাকে বুড়ি মা জগুনার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। জগুনা বিবির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের পর সকল তথ্য নিয়ে বাংলাদেশ হাই কমিশনে আবেদন করলে তারা জগুনাকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার অনুমতি প্রদান করেন। এরপর বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে বুড়ি মা জগুনাকে তার পরিবারের কাছে পাঠাতে সক্ষম হই। বুড়ি মা জগুনাকে ছাড়া আমার খুব খারাপ লাগছে। কিন্তু আমার পরিবার ও আমার মানসিক ভাবে একটাই শান্তি যে, বুড়ি মাকে আমরা তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরেছি। খুব শিগগিরই আমরা বাংলাদেশে বুড়ি মাকে দেখতে যাব।

জগুনা বিবি পাসপোর্ট বিহীন ভারত থেকে কীভাবে বাংলাদেশে আসার সুযোগ পেলেন জানতে চাইলে বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, যাদের পাসপোর্ট হারিয়ে যায় কিংবা কোনো কারণে কেউ পাসপোর্ট বিহীন অন্য দেশে প্রবেশ করে কিন্তু কোন অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত নয় এমন ব্যক্তিদের দুই দেশের সরকারের সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে আউটপাস বা ট্রাভেল পাসের মাধ্যমে নিজ দেশে ফিরিয়ে আনা যায়।

বিষয়টি নিয়ে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, দীর্ঘ একযুগ নিখোঁজ থাকার পরে জগুনা বিবিকে তার পরিবার ফিরে পেয়েছে, এটা সত্যি আনন্দের সংবাদ। জগুনা বিবি ও তার পরিবারকে আমি শুভেচ্ছা জানাই। এখন যদি জগুনা বিবি অসুস্থ থাকেন, তাহলে প্রয়োজনে আমরা তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।

আরএস

Link copied!