Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫,

চামড়ার দরপতন: বিপাকে লিল্লাহ বোর্ডিং ও কওমি মাদ্রাসা

আব্দুল্লাহ আল আমীন, ময়মনসিংহ

আব্দুল্লাহ আল আমীন, ময়মনসিংহ

মে ১৭, ২০২৫, ১১:৫৩ এএম


চামড়ার দরপতন: বিপাকে লিল্লাহ বোর্ডিং ও কওমি মাদ্রাসা

কোরবানির পশুর চামড়ার দামে টানা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা দরপতন, শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণই নয়—এই ধস ইসলামি শিক্ষার একটি প্রধান স্তম্ভকেও টালমাটাল করে দিয়েছে। ক্ষতির মুখে পড়েছে কওমি মাদ্রাসাগুলো, যারা এই চামড়া বিক্রির অর্থেই বছরের একটি বড় সময়ের খরচ চালায়।

বিশেষ করে দেশের প্রান্তিক ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য থাকা-খাওয়ার পাশাপাশি লেখাপড়ার সুযোগ করে দেওয়া ‘লিল্লাহ বোর্ডিং’ ব্যবস্থা এখন অস্তিত্ব সংকটে। এসব মাদ্রাসায় পড়ুয়া কয়েক লাখ এতিম ও গরিব শিক্ষার্থীর জীবন-জীবিকা হয়ে উঠেছে অনিশ্চিত।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, গরু-ছাগলের দাম ও আনুষঙ্গিক খরচ বাড়লেও চামড়ার বাজার মূল্য তেমন বাড়েনি। ঈদের দিন ও পরবর্তী কয়েক দিনে চামড়া বিক্রি করতে গিয়ে বহু মানুষ পান মাটির দাম। কোথাও কোথাও খাসির চামড়া ৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আবার অনেকে বাধ্য হয়ে খাল-বিলে ফেলে দেন, ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কাও তৈরি হয়।

বিবিএস-এর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজার ব্যবস্থাপনার ঘাটতি এবং একটি চিহ্নিত সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণেই চামড়া বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। প্রতিবছর কিছু প্রভাবশালী ট্যানারি মালিক ও ব্যবসায়ী কৃত্রিমভাবে দাম কমিয়ে দেন, যাতে সাধারণ মানুষ এবং মাদ্রাসাগুলোর আর্থিক ক্ষতি হয়।

ময়মনসিংহের জামিয়া আরাবিয়া মিফতাহুল উলুম মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন বলেন, ‘বাজার সিন্ডিকেট করে গরিবদের হক কেটে নেওয়া হচ্ছে। এতে কওমি মাদ্রাসার লিল্লাহ বোর্ডিং মারাত্মক সংকটে পড়েছে।’

খানকায়ে হোসাইনিয়া মাদানিয়ার মোতোয়াল্লি মুফতি মাহবুবুল্লাহ বলেন, ‘গত বছর আমরা খাসির চামড়া মাত্র ৫ টাকায় বিক্রি করেছি। ছাত্ররা নিজেদের ঈদের আনন্দ বিসর্জন দিয়ে সারাদিন চামড়া সংগ্রহ করেছে, এটা চরম লজ্জার।’

জামিয়া ইসলামিয়ার মুহতামিম মাওলানা আনোয়ারুল হক জানান, ‘চামড়ার টাকার অভাবে এখন ছাত্রদের খাবার আর আবাসনের ব্যবস্থাও করা যাচ্ছে না।’

জামিয়া ফয়জুর রহমান (রহ.)-এর মুহতামিম ও বড় মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুল হক বলেন, ‘সরকারকে দ্রুত সিন্ডিকেট ভেঙে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে, নইলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ডুবে যাবে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, কোরবানির চামড়া কেবল অর্থনৈতিক পণ্য নয়, বরং এটি একটি সামাজিক নিরাপত্তার উপকরণ। এর সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকলে সমাজের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার ক্ষুণ্ন হবে, এবং কওমি মাদ্রাসা ও তাতে শিক্ষাপ্রাপ্ত হাজারো এতিম শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ পড়বে হুমকিতে ।

বিআরইউ

Link copied!