এন.কে.বি নয়ন, ফরিদপুর
মে ১৭, ২০২৫, ০৩:৫৭ পিএম
এন.কে.বি নয়ন, ফরিদপুর
মে ১৭, ২০২৫, ০৩:৫৭ পিএম
ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে দরিদ্র মৎস্যজীবীদের মাঝে গবাদি পশু বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অর্থ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি গরুর জন্য উপকারভোগীদের কাছ থেকে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়া হয়েছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার উপজেলার ৭৫ জন স্বীকৃত মৎস্যজীবীর মাঝে একটি করে বকনা বাছুর বিতরণ করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী গরু বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ মৎস্য অধিদপ্তরের আওতাধীন “দেশীয় প্রজাতির মাছ ও শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্প”-এর আওতায় এই গরু বিতরণ করা হয়। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য ছিল দরিদ্র মৎস্যজীবীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা।
তবে বিতরণ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় একাধিক রাজনৈতিক নেতা অভিযোগ করেন, প্রকৃত মৎস্যজীবীদের বাদ দিয়ে মৎস্য কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ ও রাজনৈতিকভাবে সুবিধাভোগীদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ময়না ইউনিয়নের অশোক মালো নামের এক প্রকৃত উপকারভোগীর বরাদ্দের গরু দেওয়া হয়েছে সজল মালো নামে অন্য এক ব্যক্তিকে, যা নিয়ে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে।
ময়না ইউনিয়নের মৎস্যজীবী গুরুদাস মালো অভিযোগ করে বলেন, “আমার কার্ড থাকা সত্ত্বেও আমি গরু পাইনি, কারণ আমি ঘুষ দিতে পারিনি। যারা টাকা দিয়েছে তারাই গরু পেয়েছে। মৎস্য অফিসে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না।”
বোয়ালমারী পৌর জামায়াতের আমির মাওলানা সৈয়দ নিয়ামুল হাসান বলেন, “এতো বড় কর্মসূচি আমাদের না জানিয়ে গোপনে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তালিকা তৈরি হয়েছে একতরফাভাবে, যেখানে অধিকাংশ সুবিধাভোগী স্বৈরাচারপন্থী লোকজন।”
পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আব্দুস সামাদ খান বলেন, “আমার এলাকায় বহু মৎস্যজীবী থাকা সত্ত্বেও তারা কেউ গরু পায়নি। ঘুষের বিনিময়ে গরু বিতরণ করা হয়েছে।”
বোয়ালমারী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সঞ্জয় কুমার সাহা ও মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক বিশ্বনাথ সরকার বলেন, “আমাদের সংগঠনে বৈধ কার্ডধারী মৎস্যজীবী অনেক রয়েছে, কিন্তু তাদের না জানিয়েই তালিকা তৈরি ও গরু বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিবাদ করেও বিতরণ বন্ধ করা সম্ভব হয়নি।”
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “গবাদি পশু বিতরণে কোনো অনিয়ম হয়নি। পুরোনো তালিকার ভিত্তিতে গরু দেওয়া হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, “তালিকা মৎস্য অফিস করেছে। আমি শুধু বিতরণে উপস্থিত ছিলাম। বিতরণের সময় ১০টি অনিয়ম ধরা পড়ায় তাদের বরাদ্দ বাতিল করে প্রকৃত উপকারভোগীদের হাতে গরু তুলে দেওয়া হয়।”
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার সরকারের বক্তব্য জানতে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ইএইচ