Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০২৫,

বঞ্চিত খামারিরা, দুর্ভোগে ক্রেতারা

দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে নাজেহাল মাগুরার পশুর হাট

মিরাজ আহমেদ, মাগুরা

মিরাজ আহমেদ, মাগুরা

মে ২১, ২০২৫, ০৭:৫০ পিএম


দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে নাজেহাল মাগুরার পশুর হাট

পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে মাগুরার বিভিন্ন পশুর হাটে বেচাকেনা জমে উঠলেও সাধারণ খামারি ও ক্রেতারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দালাল চক্রের দৌরাত্ম্যে। জেলার অন্যতম বৃহৎ হাট কাটাখালীতে গরু বেচাকেনার চেয়ে এখন আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে দালালদের দমনহীন তৎপরতা। ফলে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন খামারিরা, প্রতারণার শিকার হচ্ছেন ক্রেতারা।

বিক্রেতার ক্ষোভ, ক্রেতার হতাশা

স্থানীয় খামারি রবিউল ইসলাম জানান, “তিনটি গরু নিয়ে হাটে এলেও নিজের ইচ্ছেমতো দাম বলতে পারিনি। দালালরা জোর করে গরু কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছে। বেশি দাম বললেই হুমকি দেয়, কেউ কিনবে না।”

আলোমখালী হাট থেকে আসা ক্রেতা শোয়েব বলেন, “গরুর দাম জানতে চাওয়ায় কয়েকজন দালাল ঘিরে ধরে বলে, এটাই বাজারদর, কমে পাওয়া যাবে না। অথচ একই গরু অন্য হাটে অনেক কম দামে বিক্রি হচ্ছে।”

প্রশাসনের নজরদারি নেই, হাট কমিটির অসহায়ত্ব

হাটে কার্যকর নজরদারির অভাবে দালালদের নিয়ন্ত্রণহীনতা বাড়ছে। প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে অতিরিক্ত নজরদারির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য আলম বলেন, “সমস্যা সম্পর্কে আমরা অবগত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তবে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বাস্তবে এসব প্রতিশ্রুতি ফলপ্রসূ হয়নি। হাটজুড়ে চলছে দালালদের অবাধ বিচরণ।

মাগুরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হাসিবুল হাসান জানান, গত বছর কাটাখালী হাট ৫৫ লাখ টাকায় বিক্রি হলেও এ বছর সেটি ২ কোটি ৫০ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছে। হাট ব্যবস্থাপনায় শতকরা ৩% হারে খাজনা নির্ধারণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, যা এখনও অনুমোদনাধীন।

হাট ইজারাদার মোহন মোল্লা বলেন, “গত বছর স্বৈরাচার সরকারের আমলে জোর করে ৪১ লাখ টাকায় হাট বিক্রি করা হয়। এ বছর আমি ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় কিনেছি। গরুপ্রতি ৮০০ থেকে ৩২০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।”

সরকারি রেট চার্টের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, “এখনও পাইনি।”

দালালদের বিষয়ে বলেন, “সবই পরিচিত লোক, কিছু করার নেই।”

সমাধানে প্রয়োজন জরুরি পদক্ষেপ

সচেতন মহলের মতে, হাটে দালাল নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক তদারকি জোরদার, নির্ধারিত রেট চার্ট প্রণয়ন ও প্রকাশ এবং দালালমুক্ত বেচাকেনার পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।

জেলার অন্যান্য হাটেও একই চিত্র

শত্রুজিৎপুর, রামনগর, আলোমখালী, বেথুলিয়া, আলোকদিয়া, সীমাখালি, শালিখা ও শ্রীপুর সারঙ্গদিয়া—জেলার প্রায় সব পশুর হাটেই একই ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের আগমুহূর্তে এই বিশৃঙ্খলা বন্ধ না হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন খামারি ও ক্রেতা—দুই পক্ষই। তাই অবিলম্বে কার্যকর প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ জরুরি, অন্যথায় পশুর হাটগুলোতে লেনদেন হয়ে উঠবে সাধারণ মানুষের জন্য এক দুঃস্বপ্ন।

ইএইচ

Link copied!